ছেলেঃ
বড় বিস্ময় লাগছে! বড় বিস্ময়!
সৃষ্টির এ এক অপূর্ব লীলা!
এই যে তুমি আমার পাশে –হাসছো,
কাঁকনে রিণি রিণি ঝংকার তুলছো,
গুণগুণ করে গানের কলি ফুটিয়ে চলেছো-
আমার পৃথিবী মূহুর্তে রঙ্গিন হয়ে উঠছে।
তোমার ছোঁয়ায় জীবন ফিরে পায়
মুমুর্ষ পৃথিবীর ক্লান্তিকর মূহুর্তগুলো,
আর আমি- ফিরে পাই হারানো সুর ও ছন্দ,
হাজার বছর বেঁচে থাকবার উদ্দীপনা।
আসলে মেয়েরা খুব ভালো।
মেয়েঃ
ভালো না ছাঁই। অন্যকে বড় করে দেখবার
সহজাত প্রবণতা তোমার। আর তাতেই
আমাকে এমন বড় করে দেখছো। আর সুর?
আমার বীণার তারে তোমার করস্পর্শ ছাড়া
সুর ওঠে কই? সে সুরের শ্রষ্টা তুমি নিজেই।
আসলে তোমার কাছে এলেই-
আমি খুজেঁ পাই জীবনের অর্থ। স্পন্দনহীন এই আমি
হয়ে উঠি সুর ও ছন্দের আঁকর।
ছেলেরা যে এত বিশাল- তোমার কাছে আসবার আগে
আমি কখনো এমন করে বুঝিনি।
ছেলেঃ
এই যে বাগানে ফুল দেখছো- নানান রঙের
ওই যে আকাশের ঐ কোনটা রঙিন হয়ে উঠেছে
ঐ যে প্রজাপতিটা-
ফুরফুরে হাওয়ায় মেলে দিয়েছে রঙিন পাখা
লাল টকটকে ফুল ফুটেছে শিমুল ডালে।
চারিদিকে এত রঙের ছড়াছড়ি। এর উৎস কোথায় জানো?
তোমার হৃদয় ছূঁয়ে
নিজেকে অমন করে রাঙিয়ে নিয়েছে ওরা সবাই।
মেয়েঃ
ওই যে আকাশ দেখছো- পরম নির্ভরতায়
নিবিড় করে ঘিরে রেখেছে বসুন্ধরাকে।
অনাবিল হাসি ছড়িয়ে দেয় চাঁদ-
আকাশের বুকে।
পাতাগুলো কী নিবিড় সবুজ! ঠাঁই দিয়েছে ফুলগুলোকে।
ওরা এমন নিবিড় মমতায়
বুকে ঠাঁই দিতে পারে। কেমন করে জানো?
তোমার খোলা হৃদয় ওরা সবাই দেখতে পায়;
তাই তো নকল করে ঠিক তোমারই মতো।
ছেলেঃ
চাঁদকে বুকে ঠাঁই দিয়ে আকাশ ধন্য হয়।
মূলতঃ চাঁদটাই মূখ্য।
চাঁদহীন অমাবশ্যার আকাশের দিকে
কেউ কখনো ফিরেও তাকায় না।
মেয়েঃ
আকাশকে বাদ দিয়ে চাদেঁর কল্পনা?
বৃক্ষহীন এখানে একটা ফুলের মতো-
যনভাস বিহীন একটা সুন্দর ছবির মতা-
বাস্তবে যার ফুটে ওঠাই অসম্ভব।
ছেলেঃ
আসলে আমি যে আমারে মত করে
ফুটে উঠবার চেষ্ট করি-
তার একমাত্র প্রেরণা তুমি।
যে সৌন্দর্যের মোহ আমাকে প্রতিনিয়ত
টেনে আনে পূর্ণতার পথে-
একমাত্র তোমার সান্নিধ্যেই আমি
তাকে অনুভব করি।
আর তাই, তুমি ছাড়া আমার
সৌন্দর্যও নেই, পূর্ণতাও নেই।
সুতরাং তোমাকে ঘিরেই পৃথিবীর সব আয়োজন
-এ কথা নির্দিধায় বলা যায়।
মেয়েঃ
আমার চিত্রপটে যে সৌন্দর্য
প্রতিনিযত ধরা দেয় তুলির টানে
-তার একমাত্র ভাষ্কর তুমি।
আমার বীণার তারে সুর কে তোলে?
কে কাঁটে আঁচড় আমার চিত্রপটে?
আমি তখনই শুধূ আমি হয়ে উঠি
যখন তুমি এসে দাঁড়াও পাশে।
চারিদিকে সুরের ঝংকার ওঠে-
আকাশ আর পৃথিবী জুড়ে সৌন্দর্যেরা ধরা দেয।
সুতরাং তোমারই জন্য পৃথিবীর সব আয়োজন
এ কথা অস্বীকার করি কী করে?
ছেলেঃ
থাক আর বিতর্ক নয়।
দেখো- এতক্ষণে আমাদের বিতর্কে
পৃথিবীর মুখ কেমন মলিন হয়ে উঠেছে।
চারিদিকে আঁধার নামছে।
সব রং কেমন ফিকে হয়ে আসছে।
তার চেয়ে চলো আমরা আগের মতো হয়ে যাই-
আমি ছেলে- তুমি মেয়ে।
মেয়েঃ
পৃথিবীর সব আনন্দই যেখানে মাটি হতে চলেছে
সখানে আর প্রয়োজন নেই-
ভারী ভারী কথার ভাঁজে নতুন পরিচয় খুঁজবার
তার চেয়ে অনাদীকালের পরিচয়ই হোক
আমাদের শেষ পরিচয়-
আমি মেয়ে- তুমি ছেলে।
ছেলে ও মেয়ে (এক সাথে)ঃ
ভালবাসি মাটি, ফুল, পাখি, জোৎস্নার আলো
ভালবাসি পাখির কাকলী ফুলের সুবাস
ভালবাসি রূপ-লাবণ্যে ভরা
প্রাকৃতিক এ পৃথিবীর আলো-ছায়ার বৈভবে
জনম জনম ধরে এমনি বেঁচে থাকা।
এসা তবে বন্ধ করি আমাদের এ মরণ খেলা
পৃথিবীকে ফেরাই
অনিবার্য ধ্বংসের দূয়ার হতে।
সম্মিলিত কণ্ঠে ধারণ করি
সৃষ্টির আদীমতম উপলব্ধি-
ছেলেরা ছেলে -মেয়েরা মেয়ে।।
-------০০-------
কবিঃ মোঃ ইফতেখার হোসেন
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



