somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“যুদ্ধপুরাণ” বাঁধ ভাঙার প্রয়াস

২৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মার্চ মহান স্বাধীনতার মাস। এই স্বাধীনতা খুব সহজে আসেনি। স্বাধীনতা এসেছে অনেক আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে এযাবৎ রচিত হয়েছে অনেক গান, কবিতা, নাটক, উপন্যাস, সিনেমা এবং গল্প। প্রতিটি প্রয়াসই ছিল অনেক চেষ্টা এবং গবেষণার ফসল। কিন্তু এদের মধ্যে ছিল সীমারেখা। “যুদ্ধপুরাণ” সেই সীমারেখা বা বাঁধ ভেঙ্গে দেয়ার এক ভিন্নধর্মী প্রয়াস।

নাটকটি নির্মিত হয়েছে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পুর্ববর্তী সময়ে মিরপুর এলাকায় পাকিস্তানি আর্মি এবং পাকিস্তান পন্থী অবাঙ্গালী দের দ্বারা সংঘটিত নারকীয় হত্যা যজ্ঞের প্রতিচ্ছবির পটভূমিতে।


নাটকটির মুল আকর্ষন হচ্ছে এর উপস্থাপন। তথাকথিত নাটকের মত আপনি শুধু বসে বসে দেখলেন আর শুনলেন ব্যাপারটা এমন নয়। নাটকটি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করার মত। একটু ধারনা দিলে হয়ত বুঝতে পারবেন, ধরুন আপনি রাতের আধারে কোন এক বধ্যভূমির পাশ দিয়ে খালি পায়ে হাঁটছেন, হঠাৎ আপনার নাকে ভেসে এল কর্পুর আর ধূপের মিশ্র গন্ধ। পায়ের নিচে মাটি হয়ে উঠল শীতল ও স্যাঁতস্যাঁতে। লক্ষ করলেন, আপনার আশেপাশে হাঁটছে লম্বা আলখেল্লা পরিহিত আরও কিছু কায়া, চাঁদের আবছা আলোয় মুখগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে কোন একটা কায়া এগিয়ে এলো আপনার দিকে, বলে উঠল, আমাকে চিনতে পারছেন কি, চেনার কথাও নয়, আমি আবু তালেব। বলেই হাতটা এগিয়ে দিল, ঘটনার আকস্মিকতায় আপনি কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। অজান্তেই হাতটা বাড়িয়ে ধরলেন সেই হাতটিকে। মৃত মানুষের হাতের মত হিমশীতল হাতের স্পর্শ লাগল আপনার হাতে। চমকে কায়ার মুখের দিকে তাকালেন, চাঁদের অস্পষ্ট আলো আধারিতে ফুটে উঠল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া লাশের মুখ। আপনার অনুভূতি তখন কেমন হবে একটু ভাবুন তো। এই নাটকে আপনি এই ধরনেরই কিছু অনুভূতি পাবেন। এখানে দেখা হবে সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে শহীদ হওয়া কিছু নিরপরাধ বাংলাদেশির আত্মার সাথে। আত্মারা আপনার সাথে হাঁটবে। তাদের সাথে ঘটে যাওয়া সেই হত্যাযজ্ঞের বর্ননা দেবে। এখানে আপনি দেখা পাবেন সাংবাদিক আবুতালেব, লেখিকা মেহেরুন নেসা সহ বিভিন্ন পেশাজীবীর আত্মার সাথে। উনারা আপনাকে নিয়ে যাবে সেই জল্লাদখানায়, দেখাবে সেই গণকবর। যেখানে আজো ঘুমিয়ে আছে সেই সব শহীদেরা।

নাটকের সময়কাল মাত্র ২০ মিনিট। কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি। এই ২০ মিনিট আপনাকে স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখাবে। আপনার চেতনাকে নাড়া দেবে। গত ২৬ শে মার্চ শিল্পকলা একাডেমীর এক্সপেরিমেন্টাল হলে পরপর ছয়বার মঞ্চায়িত হয় নাটকটি। প্রতিটি শো ছিল হাউসফুল। আমি নিজে খুব বেশি মঞ্চ নাটক দেখেছি তা নয়, খুব কম দেখেছি ব্যাপারটা তা ও নয়। নতুন নতুন প্রচুর আইডিয়ার দেখা পেয়েছি। অনেক ধরনের প্রেজেন্টেশন দেখেছি। কিন্তু “যুদ্ধপুরাণ” ছিল আমার দেখা সুবিন্যস্ত ভাবে এক্সিকিউটেড একটা সেরা প্রেজেন্টেশন। যেটা বর্ননার চেয়ে বাস্তবে আরও অনেক বেশি অসাধারন। বাঁধ ভাঙার এই প্রয়াস সফল হোক এই কামনা করি। এবং "যুদ্ধপুরাণের" পুরো টিমের প্রতি রইল আমার শ্রদ্ধা এবং অভিনন্দন। স্পেশাল ধন্যবাদ বরুন দা কে, আমাকে এমন একটা উপস্থাপন এর সাক্ষী করার জন্য।

নাটকটির মুল পরিকল্পনা ও নির্দেশনাঃ আনিসুল হক বরুন।

এবং কলাকুশলীরা বিভিন্ন নাট্য গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত। যেমন নাট্য বিন্দু, নাট্য শৈলী, পদাতিক, দেশ নাটক। থিয়েটার রুপান্তর ইত্যাদি।
সার্বিক সহযোগিতায়ঃ শিল্পকলা একাডেমি এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×