বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য় বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়াটা ক্রাইম নয় যে, এটা বন্ধই করতে হবে। নিরুৎসাহিত করাই কী যথেষ্ট নয়। আর সাধারণত কেউ দুই বারের চেয়ে বেশী দিতে চায় না, তবে বেশী সংখক বার দেয়ার সুযোগ থাকলেও অসুবিধা দেখি না। তবে কেউ প্রথমবার বাংলাদেশের কোন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে তাকে ২য় বার ভর্তি পরীক্ষা দেবার সুযোগ না দিলেই হয়। আর সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি করা সম্ভব। এমনিকি প্রচলিত পদ্ধতিতেও এটি করা সম্ভব।
ঢাবির যুক্তিঃ
১। শিক্ষার্থীরা ২য় বার ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ নেবার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন শূণ্য থাকে।
.........আংশিক সত্য। যথাযথ কর্মসংস্থানের অভাব, চাকুরীর ক্ষেত্রে বৈষম্য, অব্যবস্থাপণা, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর নূন্যতম মান নিশ্চিত না করা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মাঝে বৈষম্য, সামাজিক অস্থিরতা, সর্বোপরি হতাশাই মূল কারণ।
২। ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
.........১ম বার পরীক্ষা দিলেও জালিয়তি করে, আমি জগন্নাথে সহকারী প্রক্টর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। আমরা ২০১২-২০১৩ সালে যে কয়টি শিক্ষার্থীকে জালিয়তির অভিযোগে ধরেছি তার প্রায় সবাই প্রথম বার পরীক্ষা দেয়া শিক্ষার্থী। যারা জালিয়তির আশ্রয় নেয় তাদের কাছে ১ম বার বা ২য় বার বলে কথা নেই।
৩। বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়ায় প্রথমবার পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়।
......আংশিক সত্য। এক্ষেত্রে ২য় বারের পরীক্ষার্থীকে পেনাল্টির আওতায় আনা যেতে পারে (অর্থাৎ নিরুৎসাহিত করা যেতে পারে)। কেউ যদি একবছর পড়াশুনা করে নিজকে যোগ্য করে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুবিধা কি? বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ্যতাটাই বিবেচনায় আনা উচিত নয় কি?
৩। পুরাতন শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারগুলোর সহযোগিতা নিয়ে ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে জালিয়াতি করার চেষ্টা করে।
......জালিয়তি হয় বলে ২য় বার পরীক্ষা দিতে পারবে না, এটা কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নয়। পরিসংখ্যান বলে এটা নতুন শিক্ষার্থীরা বেশী করে। নতুন নিয়মে তারা আরো বেশী করবে। তারা যে কোনভাবে প্রথমবার ভর্তি হবার চেষ্টা করবে।আগে পড়াশুনা করে ২য় বার চান্স নেবার চেষ্টা করতো। এখন অনিশ্চয়তার কারণে অনেক ভাল শিক্ষার্থী ও তার অবিভাবকেরা জালিয়ত চক্রের পিছনে দৌড়াবে।
৪। দ্বিতীয় দফায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বন্ধ হলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই সব পরীক্ষা নেওয়া যাবে বলেও মনে করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
......এটাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য কারণ হতে পারে। তবে পরীক্ষার্থী কমাতে চাইলে আরো বিকল্প আছে।
ঢাবি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। সুতরাং এর সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্যদের প্রশ্ন উত্তাপনের সুযোগ খুবই কম। সে জন্য ঢাবির দায়িত্ব অনেক বেশী। গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন যদি ঢাবির অলিখিত দায়িত্ব হয়, তবে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কার্যকরী ও গতিশীল পরিবর্তন আনাও কি তার অলিখিত দায়িত্বের মধ্যে পড়েনা? বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় এখনও ঢাবির ছায়া থেকে বের হতে পারেনি। আগামী ১০ বছরের মধ্যে পারবে বলেও মনে হয় না। এখনও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ঢাবিকে কপি পেস্ট করে। যে কোন সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে ঢাবিকে সবদিক বিবেচনা করা উচিত।