somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বদরুল না প্রেমিক না ছাত্রলীগ। আমাদের নষ্ট সমাজের সৃষ্ট কীট।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“তোমার উপর আমি কোনো ‘জিঘাংসা’ পোষণ করিনা –এ আমি সকল অন্তর দিয়ে বলছি। আমার অন্তর্যামী জানেন তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কি গভীর ক্ষত, কি অসীম বেদনা! কিন্তু সে বেদনার আগুনে আমিই পুড়েছি, তা দিয়ে তোমায় কোনোদিন দগ্ধ করতে চাইনি।”

হে, প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি; আমরা না প্রেমিক না বিদ্রোহী। আমরা জিঘাংসায় উম্মত্ত হই। আমাদের মনে প্রেম নেই, ঘৃণা আছে। নজরুলেরা নার্গিসকে বেদনার আগুনে না পোড়ালেও, বদরুলেরা চাপাতি দিয়ে কচুকাটা করে। আমরা নপুংসক। আমরা কাপুরুষ। আমরা চাপাতি কে ভয় পাই। দাঁড়িয়ে তামাশা দেখি। খোদা ও ভগবানকে স্মরণ করি। বদরুলদের চাপাতির বিরতিহীন কোপে নার্গিসেরা পায়ের তলায় গুটিয়ে রয়। আমরা মরার পরে কাঁদার জন্য বাঁচাবার চেষ্টা করি না। নার্গিসেরা কেউ মরে গিয়ে বেঁচে যায়, কেউ-বা বেঁচে থেকে আমাদের হারিয়ে যাওয়া বিবেকে নাড়া দিয়ে যায়। আমরা কি বিবেকের দংশনে দংশিত হই? কে তুমি নার্গিস আমাদের নাড়িয়ে দিলে?

হ্যাঁ, সে নজরুলের নার্গিস নয়। সে বদরুলের নার্গিসও নয়। সে খাদিজা বেগম নার্গিস। বয়স ১৯। বয়ঃসন্ধি উত্তীর্ণ, কৈশোর পেরুনো নার্গিস। এখন তার স্বপ্ন ডানায় ভর করে প্রজাপতির মত আপন খেয়ালে উড়ার সময়। আপন ভূবনে রং পেনসিলে আঁকিবুঁকি করার সময়। অথচ সে এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আছে হাসপতালের নিবিড় পরিচর্চাকেন্দ্রে। কিন্তু কেন? এ দায় কার? সমাজের, রাষ্ট্রের না কি আমাদের সবার?

কাঁদামাটিকে ইচ্ছেমত আকার দেয়া যায়। কোমার তা দিয়ে হাঁড়িপাতিল বানায়, আবার পূজারী দেবতার মূর্তিও বানায়। প্রতিটি শিশু না কি কাঁদামাটি। বদরুল ও নার্গিস তাই ছিল। তাহলে, বদরুলের এ মূর্তি কোন কোমার বানিয়েছে? পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র না ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ দায় নেবেনা। কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায় সংগঠন নেয় না। ছাত্রলীগ হয় অস্বীকার করবে, নয় বহিষ্কার করে দায় মুক্তি নিবে। কিন্তু পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কিভাবে দায় এড়াবে? তাদের যে, দায় এড়াবার বা কারো উপর দায় চাপাবার সুযোগ নেই। পরিবার দায় নিয়েছে। তারা লজ্জিত ও মর্মাহত। সমাজ সরাসরি দায় না নিলেও ধিক্কার দিচ্ছে। লজ্জিত হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্র দায় নিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, “অপরাধীর দল নেই। তাকে শাস্তি পেতে হবে।”

দায় নিয়ে দায়িত্ব এড়াবার সুযোগ নেই। বদরুলদের নজরুল বানাবার দায়িত্ব কার? প্রথম পাঠ দিতে হবে পরিবারকে। কিন্তু গোড়ায় গলদ। পারিবারিক শিক্ষায় কন্যা ও পুত্র সন্তানের মাঝে তফাৎ করা হয়। তাদের মাঝে ফ্যান্টাসি তৈরী করা হয়। ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে তারা বেড়ে উঠে। পারিবারিক আবাহে বেড়ে উঠার সময় সন্তান-সন্ততিতে প্রভেদ করা হয়। এমনকি মেয়েদের পোশাক নিয়ে ছেলেদের মাঝে ফ্যান্টাসি কাজ করে। এটা নিয়ে ফ্যান্টাসি হবার কিছু নেই। মানুষের রুচিবোধ ও স্টাইল ও কালচার আনুযায়ী পোশাক পরবে। এতে স্টেরিও টাইপ হবার বা ফ্যান্টাসী হবার কারণ দেখি না। এরূপ ক্ষেত্রে পরিবার সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারে।
আসুন সামজের কথা বলি। সমাজ কত তলা? আমাদের দোতলা সামজে অর্থবিত্তে ও চিন্তায় তফাৎ থাকলেও কাজে তলাবিহীন। পূর্নিমা, ইয়াসমিন, রিশা, তনু ও আকতার জাহানের উপর সহিংসতার ধরন ভিন্ন হলেও মানসিকতায় সমাজের উঁচু ও নিচু তলার মাঝে কোন ভেদাভেদ নেই। যে তলায় থাকি না কেন আমাদের বিচরণ একই সমাজে। যে সমাজ নিবরাস বা বদরুলদের তৈরী করে সে এক নষ্ট সমাজ। সে সমাজের শিক্ষায় ত্রুটি আছে। সে সমাজকে বদলাতে হবে। নজরুলদের পুরুষ্কৃত করতে হবে। তাহলে নিবরাস ও বদরুলেরা নজরুল হয়ে বেড়ে উঠবে।

বদরুলের শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি দায় এড়াতে পারে? না, কোনভাবে নয়। দুখের বিষয় বদরুলও কিনা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খন্ডকালীন শিক্ষক ছিল। বলিহারি! কোন গন্তব্যে যাচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। “আগডুম বাঘডুম ঘোড়াডুম সাজে, ঢাকঢোল ঝাঁঝর বাজে।” অথবা “আমাদের দেশে হবে সে ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।” এ শিক্ষার সাথে সাথে জীবনের শিক্ষা দিতে হবে। বাস্তবতা শিখাতে হবে। নচেৎ, ভুরিভুরি জিপিএ ফাইভ হবে। খুনি নিবরাস হবে। নিষ্ঠুর ও পিশাচ বদরুল হবে। এ বদরুলেরা শিক্ষক হবে। এ ধারা চলতে থাকবে। তাতে, আমরা এক দীর্ঘস্থায়ী চক্রের মাঝে চক্কর দিতে থাকবো মুক্তির ব্যকুলতায়।

রাষ্ট্রকে গন্তব্য নিয়ে ভাবতে হবে। ভাবতে হবে কি ভিতের উপর দাঁডাতে চায়। চোরাবালির উপর, না শক্ত খুঁটির উপর। নার্গিস ও বদরুলেরা এক একটি শক্ত খুঁটি হতে পারতো। কিন্তু তারা চোরাবালি হয়ে নিজেরা ডুবছে। ডুবাচ্ছে রাষ্ট্রকে। অথচ এরাই ছিল রাষ্ট্রের উন্নয়নের স্টেকহোল্ডার। তাদের বাদ দিয়ে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে বদরুলদের ফিল্টার করে ব্লক করতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের সে ফিল্টার আছে কি? না থাকলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও শিক্ষকদের ডাকুন। তাঁরা বের করুক কোন ফাঁকফোকর গলে বদরুলের ও নিবরাসেরা এতদূর আসছে। সেসব ছিদ্র অন্বেষণ করে অতিসত্বর বন্ধ করতে হবে। এরা সমাজে ক্যান্সারের মত ছড়িয়ে গেল চিকিৎসা দিয়েও কাজ হবে না। প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধক উত্তম।

পরিবারকে সজাগ থাকতে হবে যাতে তাদের অগোচরে কোন নিবরাস ও বদরুল বেড়ে না উঠে। এ কাজটি করার জন্য উঁচু তলার সময় নেই, নিচু তলার শিক্ষা নেই। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের এগিয়ে আসার বিকল্প নেই। সমাজকে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতে হবে। পারিবারিক শিক্ষার শূন্যস্থান পূর্ণ করতে হবে। নিজকে নিয়ে নিজের মত করে বেঁচে থাকার মাঝে সার্থকতা নেই। নেই তৃপ্তি। তাছাড়া পতনশীল সমাজ ব্যক্তির পতন তরান্বিত করে। ছাত্রলগীকে বুঝতে হবে দায় স্বীকার দায়িত্ব নিয়ে আত্মশুদ্ধির মাঝে লজ্জা নেই, মহত্ব আছে। বদরুলেরা যাতে সংগঠনে প্রবেশ করতে না পারে বা কেউ যেন সংগঠনে প্রবেশ করে বদরুল হতে না পারে। বদরুলের দায় শুধু ছাত্রলীগের নয়। বদরুলেরা আমাদের পথহারা সমাজের সৃষ্ট কীট। ছাত্রলীগের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আদর্শের সঙ্গে বদরুলেরা যায় না। সে না প্রেমিক না ছাত্রলীগ।

নজরুল তার নার্গিসকে বলেছে, “তুমি সুখি হও, শান্তি পাও, এই প্রার্থনা। আমায় যত মন্দ বলে বিশ্বাস করো, আমি তত মন্দ নই, এই আমার শেষ কৈফিয়ৎ।” বদরুল নার্গিসকে তদ্রুপ বলেনি, বলবেও না। সে শিক্ষা বদরুল পায় নি বা সমাজ সে শিক্ষা দেয় নি।

সামজের হয়ে আমরা বলছি, নার্গিস, তুমি বেঁচে থাকো, সুস্থ হও। বিশ্বাস রাখো। সমাজকে যত মন্দ ভাবো, সমাজ তত মন্দ নয়। এ সমাজে নজরুলদের প্রতিনিধি ইমরান’রা আছে। ইমরানরা এখন হাসপতালে নেয়। আগামীতে বদরুলদের চাপাতি কেড়ে নিবে। নিবরাসদের পিস্তল কেড়ে নিবে।

চোখ খুলে দেখতে পাবে স্বপ্নের বাংলাদেশ। সাম্যের বাংলাদেশ।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×