somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প দা তি ক

২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিংক----------পদাতিক/৩১


৩২
ময়মনসিং-এ বাসটা পৌঁছোতে পৌঁছোতে প্রায় সন্ধে হয়ে গেল। আগের মতই রাস্তার বাতিগুলো যেন জ্বলেও জ্বলে না। বাস থেকে নেমে একটা রিক্‌সা নিয়ে সুবোধ পৌঁছে যায় রামবাবু রোডে। আশৈশবের চেনা শহর তার। চোখ বেঁধে ছেড়ে দিলেও যেন এই শহরে সে ঠিক জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে। মনে হলো সে যেন কোথাও যায় নি। এখানেই ছিল। এখন সে একটি বাড়িতে যাচ্ছে মাত্র।
দেখতে দেখতে সুবোধ নির্দ্দিষ্ট উকিল বাড়িটির সামনে এসে রিক্‌সা থামালো। এটাই তার গন্তব্য। এবং একমাত্র।
বাইরের ঘরের দরজায় আস্তে করে টোকা দিতেই শোনা গেল চেনা গলা—‘ও মালা, দ্যাখ্‌তো কেডা’।
তার মানে রব্বানি সাহেব আছেন। সুবোধের ‘সাহেবকা’। উকিল সাহেব।
খবরের কাগজ পড়ছিলেন। নির্দিষ্ট ইজি চেয়ারে বসা। সেই একই ভাবে মুখ ঢেকে কাগজ পড়ার ভঙ্গী। পা’এ হাতের স্পর্শ পেয়েই মুখ থেকে কাগজ সরিয়ে অবাক।
--তুমি?
--জী হ্যাঁ, আমি—ক্যামন আছেন আপনি?
--ভিতরের ঘরে চল।

ভেতরের ঘরে যেতে যেতেই রব্বানী সাহেব যেন ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। কথা বলার আগেই খাটের উপর ধপ্‌ করে বসে পড়লেন। তারপর বললেন—বসো।
মুখোমুখি সুবোধ একটা মোড়ায় বসে সামনের দেয়ালের দিকে তাকালো। সেই ছবিটা—যামিনী রায়ের—নারী ও মাতৃত্ব।

আসলে রব্বানী সাহেবের বাড়িতে যেমন ‘আদাব’ ‘প্রণাম’ দুটোই চলতো, তেমনি নারী ও মাতৃত্ব সম্পর্কিত ধারণাগুলোও ছিলো খুব এগিয়ে থাকা। ফলে ছোট বেলা থেকেই এ বাড়িতে সুবোধ ছিল সবচে স্বচ্ছন্দ।
এক সময় এই ছবি নিয়ে কুসুমের সঙ্গে সুবোধের কত হৈ চৈ হতো। ছবির নারীটির সঙ্গে কুসুমের তুলনা টেনে তার পেছনে লাগার দুষ্টুমিতে সুবোধ যেমন বলতো—আচ্ছা কুসুম, আজ থেকে ধর যদি এই ছবিটির মধ্যে তোমাকে দেখি---।
--দেখো না, বারণ করবে কে?
--আরে অতটা রূঢ় হচ্ছো কেন?
--আমার মাথা-তো তোমার মত খারাপ হয়নি—
--না, মানে তুমি-তো আর বছর দশেকের মধ্যেই এই রকম একটা আকার নিতে পারো আর কোলে যদি একটি শিশু—
কথা আর শেষ হয় না। কুসুম বুঝে যায় ঈঙ্গিতটা । যেহেতু সে ছোট বেলা থেকেই একটু ভারী স্বাস্থ্যের। আর এখান থেকেই কুসুম, হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, যেমন কলম, পেন্সিল, বই খাতা, হাত পাখা---ইত্যাদি ঘর জুড়ে ওড়াতে শুরু করবে সুবোধের দিকে তাক করে । সুবোধ হয়তো কোনোমতে একটু কাছাকাছি এসে কুসুমের হাত দুটো চেপে ধরে ফেলেছে—আর তখন শুরু হবে মুখে মুখে। আর একসময় সুবোধ হয়তো বলে ফেলবে মোক্ষম কথাটা।
--কেন এই মহান চিত্রকাব্যটি কি তোমার আবেগ হতে পারে না?
--ধ্যাৎ, ছাইপাঁশ—সেই এক কথা---
একসময় কুসুমের মা, সুবোধের চাচী আম্মা, হৈ চৈ শুনে দুজনের মাঝে এসে দাঁড়াবেন। যুদ্ধ শেষ হবে সে দিনের মত। চাপা পড়বে প্রসঙ্গ।

রাত প্রায় এগারটা নাগাদ চাচী আম্মা খেতে ডাকলেন। এতক্ষণ রব্বানী সাহেবের সঙ্গে যতটা কথা হয়েছে প্রায় ততটাই নীরবতাও পালন হয়েছে। সুবোধ প্রায় কিছু খেলো না। বহুদিনের চেনা ঘর,চেনা হাতের রান্না, চেনা উদ্বেগ ভরা চাচী আম্মার গলা—সুবোধ তবু নিঃশব্দ। খেতে বসার কিছু আগেই সে তার পিতৃ বিয়োগের কথা জেনেছে।
---বহুদূরের এক কণ্ঠস্বর যেন কানে এখনও আসছে—সুবো, সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে ওঠো। সময়ের সঙ্গে চলার চেষ্টা করো। পিছিয়ে পড়ো না।
দৃশ্যটা এমন—বাবার পেছন পেছন বালক সুবোধ হাঁটছে। সদ্য বীজ ছড়ানো জমি দু’পাশে। মাঝের একটা মেঠো পথ ধরে দুজনে হেঁটে চলেছে যে দিকে, সে দিকে শুরু হয়েছে সূর্যোদয়। মাঝে মাঝে শিক্ষক বাবার গলায় এমন সব কথা শুনতে শুনতে সুবোধ হেঁটে চলেছে। বাবার কথার সারার্থ বোঝার মত বয়স তার তখনও না হলেও বাবার আন্তরিক কণ্ঠস্বর তার ভেতরে এখনও যেন বেজে চলেছে।
হঠাৎ চাচী আম্মার কথায় কিছুটা চম্‌কে উঠলো সুবোধ।
--খাইতাছনা যে বাবা কিছুই—তোমার শরীলডা ঠিক আছে-তো?
--হ্যাঁ, হ্যাঁ আম্মা, ঠিক আছে। ও কিছু না।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস গোপন করতে করতে চাচী আম্মা যেন অনেকটা স্বগতোক্তির মত বলে চলেছেন—তোমরার মাথাত যে কখন কী হয়,কেডা জানে—হঠাৎ কইরা কই চইলা গেলা—বাপ মায়ের মনের কথাডা একটু ভাবন লাগে। আর চেহারাখান-ই বা কী বানাইয়া আনলা—রাস্তায় দেখলে তোমারে চিনব কেডা---।
কথার মধ্যেই সুবোধ নিঃশব্দে উঠে পড়লো। মাথা নিচু করা ছোট বেলার সেই অপরাধী ভঙ্গী। মুখ ধুয়ে সে কথামত আবার সাহেবকার ঘরে গিয়ে বসলো। (ক্রমশঃ)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×