সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লে. জেনারেল (অব.) হারুন অর রশীদের সংবাদ সম্মেলনে আসা সাংবাদিকদের গোপনে টাকা দেয়া নিয়ে তোলপাড় চলছে। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ এবং এ নিয়ে আইএসপিআরের বক্তব্য সমর্থন করে আওয়ামী সমর্থক প্রায় একশ’ সাবেক সেনা কর্মকর্তার সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তা ছিলেন জেনারেল হারুন। বুধবার ট্রাস্ট মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। আমার দেশসহ বেশকিছু জাতীয় দৈনিককে ওই সংবাদ সম্মেলনে ডাকা না হলেও যেসব পত্রিকার সাংবাদিককে ডাকা হয়েছিল তাদের ‘খরচাপাতি’ দিতে গিয়ে বিপর্যয় ঘটেছে। সংবাদ সম্মেলনে জে. হারুন সবার পক্ষ থেকে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনের শেষপর্যায়ে তার বক্তব্যের কপি খামের ভেতর সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেয়া হয়। কয়েকজন সাংবাদিক এটা খুলে ভেতরে এক হাজার টাকা প্রেস রিলিজের ভেতরে দেখতে পান। এ নিয়ে তারা প্রতিবাদ করে আয়োজকদের কাছে টাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে উপস্থিত কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা এটাকে সমর্থন করে বলেন, পকেটমানি ও যাতায়াত খরচ হিসেবে এ টাকা দেয়া হয়েছে। অনৈতিক এই কর্মকাণ্ডে প্রতিবাদ করে সাংবাদিকরা টাকা ফেরত দেন এবং ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তারা দুপুরের লাঞ্চ বয়কট করে লাঞ্চ প্যাকেট ফেরত দেন। সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে উপস্থিত সাবেক সেনা কর্মকর্তারা একপর্যায়ে তাদের অপরাধ বুঝতে পেরে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। মেজর জেনারেল (অব.) আমিন আহমেদ চৌধুরীসহ কেউ কেউ এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করলেও মেজর (অব.) খন্দকার আবদুল হাফিজসহ দু’একজন বলার চেষ্টা করেন, আমাদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট ঢুকেছে। তারাই এ কাজ করেছে। এরই মধ্যে জেনারেল হারুন ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে যদিও সংবাদ সম্মেলনে তিনি সেনাবাহিনীকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান জানান এবং কিছুদিন আগে আরেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে আয়োজিত অপর এক সংবাদ সম্মেলনের সমালোচনা করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে বিরোধীদলীয় নেতাকে ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে উচ্ছেদ এবং এ নিয়ে আইএসপিআরের বক্তব্যের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার অভিযোগ করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, লে. জেনারেল (অব.) হারুন অর রশীদ সেনাবাহিনী প্রধান থাকা অবস্থায় সেনা পোশাকের পরিবর্তে গেঞ্জি পড়ে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় তার সেই ভূমিকা তখন দেশে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল।
সর্বশেষ সাংবাদিকদের প্রেস কনফারেন্সে ডেকে নিয়ে টাকা দেয়ার ঘটনা সেনাবাহিনীর সদস্যদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা জন্ম দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের টাকা দেয়ার সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে গতকাল বলেছেন, একটি মহল সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, পিলখানার ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছিলেন। যাদের নির্দেশে সেনাবাহিনী এসব সেনা কর্মকর্তাদের রক্ষা করতে অপারগতা জানিয়েছিল ঠিক তাদের নির্দেশেই সেনানিবাসে খালেদা জিয়ার বাসা থেকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং আইএসপিআরকে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।