somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ উপলদ্ধি

০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকেও একটুর জন্য ভার্সিটির বাসটা মিস হলো না! ভাগ্যিস হেল্পার মামা দেখতে পেয়েছিলো আর রাস্তায় অনেক লোকের ভিড়েও আমাকে তার একজন ভাগ্নি বলে চিনে নিতে পেরেছিল! বাসে উঠে দেখি সামনের সিট পুরোই খালি। যাক বাবা! কোন কোনদিন তো দাঁড়ানোর জায়গাও পাওয়া যায় না। সিটে বসেই ইয়ারফোন বের করলাম ব্যাগ থেকে। উফ! ইয়ারফোনের প্যাঁচ খুলতেই এতো কষ্ট! মনে হচ্ছিলো টেনে ছিঁড়ে ফেলি, এমনভাবে প্যাঁচ লেগে থাকে! আয়েশ করে বসতে বসতেই পরের স্টপেজের সামনে চলে এলো বাস।
হুড়মুড় করে কতগুলো মেয়ে উঠে পড়লো সামনের দরজা দিয়ে। আমার এক এক্স ক্রাশকে দেখলাম পেছনের দরজা দিয়ে বাসে উঠতে। ছেলেরা সাধারণত সামনের দরজা দিয়ে ওঠে না। বাস মোটামুটি ফাঁকা দেখে সবাই বেশ উৎফুল্ল। সকালে সাধারণত বাস এমন ফাঁকা পাওয়া যায় না। সবার শেষে উঠলেন এক খালা। এক ঝাঁক রঙিন মেয়ের মাঝে প্রায় বৃদ্ধ খালাকে কেমন যেন সাদাকালো বলে মনে হল। খালাকে প্রশাসনিক বিল্ডিঙে দেখেছি কয়েকবার, সম্ভবত ওখানেই আয়ার কাজ করেন।
আমার পাশেই বসলেন। ধপ করে নাকে কেমন একটা গন্ধ লাগলো, বাজে গন্ধ, খালার গা থেকে আসছে। এই গন্ধ সাথে নিয়েই আমাকে ক্যাম্পাস পর্যন্ত যেতে হবে ভাবতেই প্রচণ্ড বিরক্ত হলাম। কোন দুঃখে যে একদম সামনের সিটে বসতে গেছিলাম! খালাও আর বসার জায়গা পেল না। বিরক্ত নিয়েই খালার দিকে তাকালাম আর একবার। বিনিময়ে খালা হাসলেন, আমার বিরক্তিটা ধরতে পারেননি। বললেন, 'আর একটু হইলে বাসটা মিস হইত আজকে। আমার ছোট মাইয়াডার জ্বর দুই দিন ধইরা। সকালে বেলা এতো কাজ একলা কইরা কুলাইতে পারিনা।' আমি হাসির মতো একটা ভঙ্গি করে মুখ ফিরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। ওনার এইসব সংসারের গল্প শোনার কোন ইচ্ছা নেই এখন আমার। তারচেয়ে আশিকি ২ এর গান শুনলে বরং ভালো লাগবে।
হঠাৎ মনে হলো এইসব খালাদের কতো কষ্ট! আমি তো সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডি হতে গিয়ে খাওয়ার টাইমই পাইনা। আম্মু মুখে তুলে খাইয়ে না দিলে হয়তো রোজই না খেয়েই ক্যাম্পাসে যেতে হতো! আর সেখানে হয়তো উনি সেই ভোরবেলা উঠেই কাজে লেগে গেছেন। আমার মতো পাঁচ মিনিট ধরে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে, যত্ন করে সান্সক্রিন লোশান, আই লাইনার, মাশকারা লাগিয়ে, সদ্য ভাঁজ খোলা ইস্ত্রি করা জামা পরে বয়ফ্রেন্ডের গিফট করা দামি পারফিউম গায়ে মেখে বের হওয়ার মতো সময় বা সুযোগ কোনটাই নেই তার।
নিম্ন মধ্যবিত্তের টানাটানির সংসার নিশ্চয়ই। সারাদিনের রান্না শেষ করে, ছেলে মেয়ে স্বামী সবার সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে আসতে হয়েছে। আবার পাঁচটার বাসে বাড়ি ফিরবেন ঠিকই আমার মতোই, তবে সহকর্মীদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তপনদার দোকানে আড্ডা দেয়ার সময় হবে না তার। দুপুরে হই হুল্লোড় করতে করতে বন্ধুরা সবাই মিলে জিরো পয়েন্টে খেতে যেতেও পারবেন না। কর্মকর্তাদের চেয়ার টেবিল পরিস্কার করে আর চা দিতে দেরী হওয়ার কারনে ঝারি শুনেই দিন পার হয়ে যাবে তার। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে নিজেকে উৎসর্গ করতে করতেই এখন এই বৃদ্ধতার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। আর আমি শুধু খেয়ে, ঘুমিয়ে, মাস্তি করে আর নামমাত্র পড়াশোনা করে জীবনের প্রায় দুই যুগ পাড় করে দিলাম।
হঠাৎ করেই নিজেকে কেঁচোর মতো মেরুদণ্ডহীন বলে মনে হতে থাকে, আর খালাকে খুব মহান মানুষ গোছের কিছু বলে মনে হয়। খালার গায়ের উৎকট গন্ধটাও আর খারাপ লাগে না। কান থেকে ইয়ারফোন নামিয়ে রাখি। চোখ বন্ধ করে ডুব দেই সেই গন্ধে...
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৩
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×