গত ২০ জানুয়ারি ছিল পল্টন বোমা হত্যাকাণ্ডের ৭ম বার্ষিকী। সিপিবি’র উদ্যোগে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকায় রাজধানীর বাইরে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা যায় নি। তবে পল্টন হত্যাকাণ্ডে শহীদ হিমাংশু-মজিদ-মোক্তার-হাসেম-বিপ্রদাসের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও তাদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন স্থানীয় পার্টি নেতৃবৃন্দ।
উলেখ্য, ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত সিপিবি’র মহাসমাবেশে বোমা হামলায় কমরেড হিমাংশু, কমরেড হাসেম, কমরেড মজিদ, কমরেড মোক্তার ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। ছাত্রনেতা কমরেড বিপ্রদাস গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে একই বছর ২ ফেব্র“য়ারি মৃত্যুবরণ করেন। বোমা হামলায় শতাধিক কমরেড আহত হন। এদের মধ্যে অমর মণ্ডল, লক্ষণ মণ্ডল, মো. জাহাঙ্গীর, আব্দুস সাত্তার, মিজানুর রহমান, এম.এ করিমসহ অনেকেই মারাত্মক পঙ্গু অবস্থায় বেঁচে আছেন। এই বোমা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ও এর নেপথ্যের হোতাদের এখনো পর্যন্ত চিহ্নিত, গ্রেপ্তার ও বিচার করা হয় নি।
২০ জানুয়ারি উপলক্ষে সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় পল্টন শহীদদের স্মরণে অস্থায়ী বেদি নির্মাণ
করা হয়। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভা থেকে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে পল্টন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে
উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পল্টন বোমা-হত্যাকাণ্ডের ৭ম বার্ষিকীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত আলোচনা সভায় সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টনে সিপিবি’র মহাসমাবেশে বোমা হামলার সাথে জড়িত ঘাতকদের শাস্তি না দিয়ে দেশে সা¤প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানের পথ প্রশস্ত করা হয়েছে। সা¤প্রদায়িক অপশক্তি, লুটেরা পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ প্রথম টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছে মুক্তচিন্তা, দেশপ্রেম, গণমুক্তি, প্রগতিশীল রাজনীতির ধারক এবং সা¤প্রদায়িক ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন সিপিবিকেই। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের এখনও চিহ্নিত ও গ্রেফতার এবং বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বোমাবাজ, সন্ত্রাসী, জঙ্গিগোষ্ঠী ও তাদের দেশি-বিদেশি মদদদাতাদের গ্রেফতার ও শাস্তিবিধান করে বাংলাদেশ বিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ক্ষমতাসীন বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলো এসব অপশক্তিকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পরিবর্তে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। তিনি সা¤প্রদায়িক অপশক্তি, সাম্রাজ্যবাদ, লুটেরা পুঁজিবাদ রুখতে বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান। গত ২০ জানুয়ারি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক স্মরণসভায় সভাপতির ভাষণে কমরেড সেলিম এসব কথা বলেন। স্মরণসভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)র প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএম আকাশ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম, গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কুদ্দুস, বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, সাম্যবাদী দলের হারুন চৌধুরী, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির মো. আবু তাহের, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন সিপিবি নেতা অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন। সভার শুরুতে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




