সা¤প্রদায়িকতা আর স¤প্রদায় প্রীতি দুটো আলাদা জিনিস। বিভিন্ন রকম স¤প্রদায় আছে। স¤প্রদায়-স¤প্রদায় যদি সংঘাত লাগে সেটাই হয়
সা¤প্রদায়িকতা। আমাদের দেশে সা¤প্রদায়িকতা মূলত ধর্মকে কেন্দ্র করে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। এ সা¤প্রদায়িকতাকে কেন্দ্র করে
সাম্রাজ্যবাদ দীর্ঘকাল আমাদের উপর শাসন-শোষণ করেছে। এখনো করে যাচ্ছে। যে অর্থে আমরা সাম্রাজ্যবাদ বলি সে অর্থে নয় শুধু,
পূর্বকালে অশ্বময় ঘোড়া ছুটিয়ে সাম্রাজ্য বিস্তারের সময়ও সেটি ধর্মের নামে করা হত। আর ধর্ম মানে ‘রিলিজিয়ান’ যাকে বলি, সেই
রিলিজিয়ান সাধারণ লোকের হচ্ছে কালচার। এটা মোতাহের হোসেন চৌধুরীর কথা। খ্রিষ্টপূর্ব ২শ’ বছর আগে ইটালির দার্শনিক সেনেকা
বলেছিলেন, ‘রিলিজিয়ান ইজ রিগার্ডেড বাই দি কমন ম্যান ইজ ট্রু, বাই দি ওয়াইজ ম্যান ইজ ফলস্ এন্ড বাই দি রুলারস ইউজফুল। যারা
শাসন করতে করতে সাম্রাজ্যে পরিণত হয়ে যায় তখন তারা ধর্মকে এবং ধর্মীয় সা¤প্রদায়িকতাকে অত্যন্ত নিপুণভাবে ব্যবহার করে থাকেন।
সারা পৃথিবী জুড়েই তার দৃষ্টান্ত রয়েছে।
ধনতন্ত্র যখন সাম্রাজ্যবাদে পরিণত হয় তখন তার ব্যবহার এক রকম, ধনতন্ত্র যখন সাম্রাজ্যবাদে পরিণত হয়নি তখন এ ধর্ম সম্পর্কে ধনতন্ত্র
অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছে। ধনতন্ত্রের সমালোচনা করেছে কিন্তু যখনই ধনতন্ত্র সাম্রাজ্যবাদে পরিণত হয়ে গেল তখনই বাই দি
রুলারস ইউজফুল হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করলো। আর বর্তমান সময়ের পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদের দর্শন মূলত প্রাগমাটিজম দর্শন।
পূর্বকালে ধর্ম নিয়ে আলোচনা হতো। ধর্মের সত্যতা-অসত্যতা নিয়ে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে আলোচনা হত। কিন্তু প্রাগমাটিজম বলে দিয়েছে
ঈশ্বর আছে কি নেই, ধর্ম সত্য কি মিথ্যা সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। ধর্ম কাজে লাগে কিনা, ঈশ্বরে বিশ্বাস কাজে লাগানো যায়
কী নাÑ সেটি হচ্ছে বড় কথা। আর সাম্রাজ্যবাদ এই কাজটি বরাবরই খুব নিপুনভাবে করে এসেছে। ভারতবর্ষে ইংরেজ রাজত্ব প্রতিষ্ঠিতই
থেকেছে ধর্মীয় সা¤প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে। তারপর পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্রই তৈরি করেছে সাম্রাজ্যবাদ এবং তা ধর্মের ভিত্তিতে। সেই
ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত যে পাকিস্তান সেটি স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে সাম্রাজ্যবাদের ঘাঁটি। এখানে সর্বপ্রকার প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা দমন
করার জন্য সাম্রাজ্যবাদ ধর্মকেও ধর্মীয় সা¤প্রদায়িকতা ব্যবহার করেছে। কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখতে হবে সা¤প্রদায়িকতাকে তারা ব্যবহার
করেছে বটে কিন্তু আমাদের ভিতরে নিশ্চয়ই সা¤প্রদায়িক হওয়ার মতো বীজ আমরা ধারণ করেছিলাম। ব্রিটিশ আমলে কংগ্রেস বলতো
আমাদের ভেতরে সা¤প্রদায়িকতা বলে কিছু নেই। এটা ব্রিটিশরা ডিভাইডেশন রুল পলিসি তৈরি করে আমাদের ভেতর বিভেদ তৈরি
করেছে। রবীন্দ্রনাথ তার সমালোচনা করে বলেছিলেন, ইংরেজ আমাদের বিরুদ্ধে বিভেদ তৈরি করেছে বটে, মুসলমানকে যে হিন্দুর বিরুদ্ধে
লাগানো যায় সেই ব্যবস্থাটি যদি আমরা করে না রাখতাম তাহলে নিশ্চয়ই এটি আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারতো না। শনিতো ছিদ্র
পেলেই ঢুকবে। দোষটা কি শনির না ছিদ্রের? আমাদেরকে মনে রাখতে হবে আমরা ছিদ্রটি কিভাবে তৈরি করেছি একং কিভাবে এই ছিদ্রটি
বন্ধ করতে হবে।
পাকিস্তান আমলে সা¤প্রদায়িকতা কি চলেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মুশতাক প্রমুখকে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ যে খেলাটি খেলেছে তার মধ্যে যে
সা¤প্রদায়িকতা ছিল সেটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু যেভাবেই হোক আমরা সেটা থেকে উত্তীর্ণ হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছি।
কিন্তু স্বাধীন দেশে যে সা¤প্রদায়িকতা, সে সা¤প্রদায়িকতাকে সাম্রাজ্যবাদ নিশ্চিতভাবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু কি করে ব্যবহার করতে পারছে
সে বিষয়টি আমাদের গভীর মনোযোগের সাথে দেখা উচিত। আমরা একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন তথা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে
মুক্তিযুদ্ধে উপনীত হয়েছিলাম। কথাটা সত্য, তবে অর্ধসত্য। আমরা যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন করেছিলাম তা ছিল কেবলই প্রতিরোধমূলক,
প্রতিবাদমূলক। সা¤প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করা হয়েছে আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। রবীন্দ্রনাথকে আমাদের কাছে নিষিদ্ধ করা হয়েছে
আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। নজরুলকে খি ত করা হয়েছে আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করে
আমাদের সংস্কৃতির যে সৃজনশীলতা গড়ে তোলার কথা ছিল, যার মধ্য দিয়ে আমরা সত্যি সত্যি বিরোধী শক্তিকে রুখে দাঁড়াতে পারতাম
সেটি কিন্তু আমরা করিনি। ধর্মনিরপেক্ষতা আমরা গ্রহণ করেছিলাম রাষ্ট্্রীয় মূলনীতি হিসেবে। সেক্যুলারিজমের বাংলা করেছিলাম
ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু আমরা যারা ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে তৈরি করেছিলাম তারা কি এর তাৎপর্য সত্যি সত্যি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। যদি বুঝতে পারতাম তাহলে আমাদের নেতাদের মুখ থেকে একথা শুনতে হত না ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়’।
ঠাকুর ঘরে কে? আমি কলা খাই না। অর্থাৎ বার বার মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে ধর্মহীনতার একটা সম্পর্ক রয়েছে।
সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তকে রুখে আমরা যে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম সেই ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারেনি, ধর্মনিরপেক্ষতার
তাৎপর্য সত্যিকার অর্থে বুঝিনি বলে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার পরপরই ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে এক সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের
জ্ঞানীগুণি অধ্যাপকরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অপর অধ্যাপকরা ধর্মনিরপেক্ষতার এমন বিষোদগার
করলেন, দেখা গেল যারা ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে কথা বলেছিলেন তাদের মাপ চাইতে হলো। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত
ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়ক এক বইতে এটি লিপিবদ্ধ পাওয়া যায়। কেন হল? স্বাধীনতার পরে আমি দেখেছি আগে যে কথাগুলো উঠে নি সে
কথাগুলো উঠতে শুরু করে।
মুক্তিযুদ্ধের পর স্কুল-কলেজ রবিবারে বন্ধ দেয়া হলো। কিছুদিন পরেই দেখা গেল ছাত্রদের মধ্য থেকে একটা দল প্রিন্সিপালের রুমের সামনে
প্রচ হৈ হুল্লোড় শুরু করে দিল। মুসলমানের এই দেশে কোনোভাবেই শুক্রবারে স্কুল-কলেজ খোলা থাকতে পারবে না। কিছুদিন পরেই দেখা
গেল সমস্ত স্কুল-কলেজ আবার শুক্রবারে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। এর মধ্য দিয়ে সা¤প্রদায়িক শক্তি একটা সাংঘাতিক শক্তি অর্জন করলো।
তারা এ সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করলো। শ্লোগান উঠল মুসলিম বাংলা জিন্দাবাদ। স্বাধীনতার পরে পরে হঠাৎ করে ময়মনসিংহের অলিতে
গলিতে, দেয়ালে আমি দেখেছি মুসলিম বাংলা জিন্দাবাদ শ্লোগান। এবং এই মুসলিম বাংলা শ্লোগানের বিরুদ্ধে আমরা যারা সা¤প্রদায়িকতা
বিরোধী তারা কি সত্যি সত্যি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছি। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি সেটা বড় কথা নয়, প্রতিরোধ গড়ে তোলার
চেষ্টাও করিনি। এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। আমাদের সংবিধানে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আমাদের যারা গণনেতা, বাঙালির
স্বাধীকার আন্দোলনে যাদের ভূমিকা আমরা কোনোদিন ভুলতে পারবো না তাদের মুখেও আমরা শুনেছি, এই অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ
চাই। ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সংবিধানে যে সেকশনগুলো আছে সেগুলো বাতিল করতে হবে। মওলানা ভাষানীর মত লোকও সেই
আন্দোলন করেছেন।
আমরা সত্যিকার অর্থে সা¤প্রদায়িকতার বিরোধিতার জন্য প্রস্তুত ছিলাম কিনাÑ এই আত্মসমালোচনা করাটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড়
প্রয়োজন। যখন মুশতাক সাহেব রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করলেন, তিনি কারফিউ জারি করলেন। কিন্তু দেখা গেল শুক্রবার তিনি তিনি তিন ঘণ্টার
জন্য কারফিউ উঠিয়ে নিলেন। প্রমাণ করতে চাইলেন তিনি খুব ধার্মিক মানুষ। জয় বাদ দিয়ে জিন্দাবাদ বলেন। ভুট্টো সাহেব সেই দিনই
বাংলাদেশকে সমর্থন করলো। সৌদি আরবসহ ৪০টি দেশে বাণী পাঠালো বাংলাদেশ ইসলামিক রিপাবলিক হচ্ছে, কাজেই স্বীকৃতি দিতে
হবে। তারপরে জিয়াউর রহমান কলমের এক খোঁচায় ধর্মনিরপেক্ষতা তুলে দিলেন। আমরা কি তা প্রতিরোধ করতে পেরেছি বা প্রতিরোধ
করতে চেষ্টা করেছি।
এরশাদ সাহেব যখন রাষ্ট্র ধর্ম করল তখন, হ্যাঁ, প্রতিরোধ করার চেষ্টা যে করি নাই তা নয়, তবে কতটুকু। যদি বলা যায়, সেখানে সাংস্কৃতিক
আন্দোলন কিছুটা চেষ্টা করেছে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো যতটা করেছে, কিন্তু মূল ধারার
রাজনীতিকরা তার সঙ্গে কতটুকু যোগদান করেছে। একটুকুও যে তারা করে নাই তার ফল কিন্তু আজকে আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে। এই
রাজনীতিকরা যারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন, সংগ্রামের চ্যাম্পিয়নশিপ দাবি করেন তারা যখন
খেলাফত মজলিশের সাথে চুক্তি করে তখন সেটাকে খুব অন্যরকম কিছু মনে করার তো কোনো কারণ নেই। তাহলে এই অবস্থায় আমাদের
করণীয় কি? আমি করণীয়টি একটু সুদূর প্রসারী করে তুলতে চাই। তাড়াতাড়ি এর কোনো প্রতিবিধান হবে বলে আমি মনে করি না। আজকে
আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। ভারতের দিকে তাকিয়ে দেখুন ভারতে বাবরি মসজিদ নিয়ে কত কা কারখানা
চলে, মহাত্মা গান্ধীর জন্মস্থানে গুজরাটের মত জায়গায় মোদীর মূর্তি গড়ে সেখানে তার পূজা করা হচ্ছে, কীর্তন করা হচ্ছে। ভারতে বামেরা
শক্তিশালী কোথায়Ñ পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরায়। কেন? বাঙালিরা রাজা রামমোহন থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র হয়ে একাল পর্যন্ত যে
ধারাটি তৈরি করেছিলেন পশ্চিম বাংলার বামফ্রন্ট তারই বেনিফিশিয়ারি হিসেবে কাজ করতে পারছে।
কিন্তু আমাদের এখানে যেটাকে মুসলিম দেশ বলা হয় মুসলিম সমাজে এই রিফর্মিস্ট মুভমেন্ট কতটুকু হয়েছে। একেবারে যে হয় নাই তা
নয়, আমাদের বুদ্ধির মুক্তির আন্দোলন হয়েছে। তবে বুদ্ধির মুক্তির আন্দোলন আমরা কতটুকু এগিয়ে নিতে পেরেছি বা এগিয়ে নেয়ার কোনো
কি প্রয়োজনবোধ করেছি। আমরা তো রাজনীতির বড় বড় শ্লোগান দিয়েছি। কিন্তু সংস্কৃতির এদিকটার প্রতি একবিন্দুও নজর দেইনি। বাম
লোকেরা অনেকেই বলে এসব ধর্ম-টর্ম বেশি বলাবলি করার কোনো দরকার নেই। তবে অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ থাকে না। আমি মনে করি এ
ধর্মকে নিয়ে যে বিকৃতি সাধন করা যায় ধর্মকে দিয়ে যে সা¤প্রদায়িকতা লাগিয়ে শোষণের জাল বিস্তার করা যায় সেইটিকে প্রতিরোধ করার
জন্য, প্রগতিশীল বুর্জোয়ারা যে আন্দোলন করেছিল সেই আন্দোলনের ধারাটিকে আজকে বামদেরকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রগতিশীল
বুর্জোয়ারা যে আন্দোলন করেছিল তারা তা এগিয়ে নিয়ে যাবে না।
এখন বুশের মুখে শুনি ‘ক্রুসেড’ হচ্ছে। আজকে নতুন দর্শন তৈরি করেছে প্র্যাগমাটিজমের উপর ভিত্তি করে। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে,
ধর্মবিরোধী এবং সেখানে ধর্মীয় সা¤প্রদায়িকতাকে উসকে দেয়া হচ্ছে। আরো মজার কথা হচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদ যে সা¤প্রদায়িকতাকে দুধ-কলা
দিয়ে পুষেছে এই মৌলবাদের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের যখন ঠোকাঠুকি লেগেছে তখন আমাদের দেশেও কিছু লোক যারা নাকি নিজেদের বামপন্থী
বলে মনে করেন, নিজেদের বলেন আমরা মার্কসের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছি তারা মনে করে, মৌলবাদকে সমর্থন করা উচিত কারণ এই
মৌলবাদ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী। আমাদের মস্তিষ্ক যদি আমরা পরিষ্কার করতে না পারি তাহলে সাম্রাজ্যবাদকে আর আলবদর-রাজাকারদের গালাগালি করে কি হবে। খুব দুঃখ
করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলা হয় নিজামির গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়েÑ এইটুকু বলা কি যথেষ্ট। ওদের গাড়িতে যে দেশের জাতীয়
পতাকা উড়ে তার সমস্ত দায়টা তো আমার কাঁধে বহন করা উচিত। এই পরাজিত শক্তি যে আজকে ক্ষমতা দখল করেছে সবটাই আমাদের
পাপের ফল। সাম্রাজ্যবাদ আজকে যে নতুন অবস্থায় এসেছে তা আমাদের পাপের ফল। এই পাপের প্রায়শ্চিত করতে হলে বুর্জোয়ারা
যেখানে শেষ করে দিয়েছে, সেই কাজ শেষ করার দায়িত্বটি কমিউনিস্টদের পালন করতে হবে। সেই সাংস্কৃতিক আন্দোলন নতুন করে আরম্ভ
করার যে তাগিদ তা আমাদের অবশ্যই অনুভব করতে হবে।
এই দেশে মানুষ ধর্মকে কিভাবে দেখে, সা¤প্রদায়িকতাকে কিভাবে মূল্যায়ন করে এই সমস্ত ব্যাপারে সামাজিক ইতিহাসগতভাবে
মনস্তাত্ত্বিকভাবে কোনো পর্যালোচনা করেছে। মার্কসের জামাতা পল লাফার্জের লেখায় সেই সময়কার ইউরোপের ধর্ম ও ধর্মীয়
সা¤প্রদায়িকতার অবস্থানটি কি? বুর্জোয়ারা কিভাবে ধর্মকে দেখে, শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে ধর্মীয় প্রভাব কিভাবে আছে, কৃষকদের মধ্যে প্রভাব
কিভাবে আছে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন কমিউনিস্টদের কি কাজ করতে হবে। কিন্তু আমরা কি সেই কাজ করেছি।
করি নাই বলেই আমরা ধর্মকে এভয়েড করেছি। তারপর তো কোনো কোনো সময়তো বলেও বসেছি ধর্ম-কর্ম সমাজতন্ত্র গড়ি। এই সমস্ত
পাপের হাত থেকে আমাদের মুক্তি যদি নিজেরা অর্জন করতে না পারি সাম্রাজ্যবাদকে দোষারূপ করে কিছু হবে না। সাম্রাজ্যবাদ কিভাবে সেই
কাজ করে যাচ্ছে, জ্ঞানীগুণী সেটি পরিস্কারভাবে বুঝিয়ে দেবেন।
-------------------------------------
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় সংসদ।
[ গত ৯ জানুয়ারি বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকের সূচনা বক্তব্য]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




