জরুরী আইন প্রত্যাহার, রাজনৈতিক তৎপরতার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, আমূল সংস্কার করে রোডম্যাপের সময়-সীমার আগেই নির্বাচন, দুর্নীতিবাজ রাঘব-বোয়ালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, লুটপাট-দুর্নীতি বন্ধ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রেশনিং চালুসহ কার্যকর ব্যবস্থা, কৃষককে সার পৌঁছে দেয়া, শ্রমিকদের দাবি পূরণের জন্য আহ্বান।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় কমিটি সভা থেকে আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপির সাথে ১৪ দলীয় জোট, মহাজোট অথবা অন্য কোনো ধরনের রাজনৈতিক জোট, ফ্রন্ট বা মেরুকরণে সামিল হওয়ার সম্ভাবনাকে সরাসরি নাকচ করে দিয়ে দেশের সঙ্কটের মৌলিক সমাধানের লক্ষ্যে দ্বিদলীয় ধারার মেরুকরণ ও সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর লুটপাটতন্ত্রের ধারার বাইরে ‘বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প’ গড়ে তোলার কাজকে দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী শক্তিকে রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত করার, সা¤প্রদায়িকতা রুখে দাঁড়ানো, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা প্রভৃতি ইস্যুতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরিচালিত ব্যাপকতম শক্তির প্রয়াসকে সমান্তরাল ও যুগপৎ ধারায় সমন্বিত করে এগিয়ে নেয়ার আহ্বানও সিপিবি’র এই সভা থেকে জানানো হয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে মুক্তিভবনস্থ সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পার্টির সভাপতি মনজুরুল আহসান খানের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় অবিলম্বে জরুরি আইন প্রত্যাহার, সভা-সমাবেশসহ সারা দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, ট্রেড ইউনিয়ন তৎপরতার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, গ্রাম-শহরের নিম্নআয়ের মানুষের জন্য রেশনিংসহ সারা দেশে ন্যায্যমূল্যের দোকান চালুর দাবি জানানো হয়েছে। সভায় নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার ও অবিলম্বে এর বাস্তবায়ন এবং দ্রুততম সময়ে নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে বলা হয়, রোডম্যাপ থেকে বিচ্যুতি মারাত্মক বিপর্যয়ের জন্ম দেবে। সভায় কৃষকের কাছে পর্যাপ্ত সার, বিদ্যুৎ, সেচ সুবিধা পৌঁছানো, ক্ষেতমজুরদের কাজ ও ন্যায্য মজুরির নিশ্চয়তার দাবি জানিয়ে বলা হয়, কৃষি উন্নয়ন বান্ধব নীতিই পারে দেশের খাদ্য সঙ্কট দূর করে দেশকেস্বনির্ভরতায় দাঁড় করাতে।
সভায় আরো বলা হয়, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, সত্যিকারভাবে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান দৃঢ়, দক্ষ ও ধারাবাহিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। এক্ষেত্রে মানবাধিকার, আইনানুগত্য যেমন নিশ্চিত করা প্রয়োজন, তেমনি দুর্নীতিবাজদের উপযুক্ত শাস্তির বিধানও নিশ্চিত করতে হবে।” সভায় বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সহিদুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক এম. এম. আকাশ, সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, শাহ আলম, মনিরুজ্জামান, শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, মাহাবুব আলম, আহসান হাবিব লাবলু, আজহারুল ইসলাম আরজু, সাজ্জাদ জহির চন্দন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জসীম উদ্দিন মণ্ডল, শামছুজ্জামান সেলিম, মৃণাল চৌধুরী, এনামুল হক, ওয়াজিউর রহমান র্যাফেল, মো. আলতাফ হোসাইন, অ্যাড. আবুল হোসেন, আখতার হোসেন রাজা, অ্যাড. আব্দুর রাজ্জাক, এ. এন. রাশেদা, লীনা চক্রবর্তী, বিপ্লব চাকী, ইসমাইল হোসেন, শহীদুল ইসলাম, অ্যাড. মণ্টু ঘোষ, অ্যাড. এমদাদুল হক মিল্লাত, রফিকুজ্জামান লায়েক, সৈয়দ আহমেদ প্রমুখ। সভায় জাতীয় স্বার্থে জ্বালানি নীতি প্রণয়ন, কয়লা সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশীয় প্রতিষ্ঠান কোল-বাংলা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, এই সম্পদ লুটপাট করতে বহুজাতিক কোম্পানি মরিয়া হয়ে উঠেছে। সভায় বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি)-এর বিষয়ে বিস্তারিত জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়ে বলা হয়, অতীতে পিএসসি চুক্তি দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে বহুজাতিক কোম্পানির পকেটই ভারী করেছে। এবারও অসম কোনো চুক্তি দেশবাসী মেনে নেবে না। সমুদ্রে এসব অনুসন্ধান কার্যক্রমে বাপেক্সকে যুক্ত করতে হবে। সভায় বন্ধ পাটকলসমূহ চালু, লে-অফ প্রত্যাহার, শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধসহ কারখানার আধুনিকায়ন, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি, গার্মেন্টসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়ার দাবি জানানো হয়।
সভায় বলা হয়, “পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বাজার অর্থনীতি বহাল রেখে দেশকে অগ্রসর করা যাবে না। দেশের সঙ্কট নিরসনের জন্য বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প অপরিহার্য। বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী শক্তি যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তাদের নেতৃত্বে এই সঙ্কট দূর হবে না, বরং নতুন নতুন রূপে তা অব্যাহত থাকবে। ” সভায় বলা হয়, সিপিবি’র নবম কংগ্রেস (জাতীয় সম্মেলন) অনুষ্ঠানে বাধা হয়ে আছে সরকারের নানা বিধিনিষেধ। সভায় এসব বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে কংগ্রেস অনুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। সভায় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা যেভাবে দেশের সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে তা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী। সভায় বুর্জোয়া দলগুলোর দেউলিয়াপনা তুলে ধরে বলা হয়, এরা বিদেশী দূতাবাসে ধরনা দেয়, কেউ আবার জামাতের সাথে বঙ্গভবনে একত্রে না বসলেও মার্কিন চার্জ দ্য এফেয়ার্স গিতা পার্সির আহ্বানে একত্রে বসতে দ্বিধা করেন না। সভায় ’৭১-এর ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানিয়ে বলা হয়, এসব অপশক্তিকে রুখে না দাঁড়ালে গণতন্ত্র অর্থবহ করা যাবে না। সভায় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-এডিবি গণট্রাইব্যুনাল জাতীয় প্রস্তুতি কমিটির কার্যক্রমের প্রতি সংহতি জানানো হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০০৮ দুপুর ১২:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




