ভাষা শহীদ রফিক (১৯২৬-১৯৫২)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ছবি: ভাষা শহীদ রফিক (১৯২৬-১৯৫২)
ভাষা শহীদ রফিক ১৯২৬ সালের ৩০শে অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার পারিল গ্রাম বতর্মানে রফিকনগর, ইউনিয়ন-বলধারা, থানা-সিঙ্গাইরে জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ রফিকের পুরো নাম রফিক উদ্দিন আহমেদ। পিতার নাম আবদুল লতিফ মিয়া এবং মাতার নাম রাফিজা খাতুন।
পারিল গ্রামটি খুব সুন্দর সবুজ ফসলী একটি গ্রাম, যে গ্রামে সারা বৎসর ধান, পাট ও সবজির আবাদ হয়। ভাষা শহীদ রফিক পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন। অন্য ভাইদের নাম রশিদ, মুক্তিযোদ্ধা খালেক, সালাম ও খোরশেদ আলম। শহীদ রফিক তার বাড়ী থেকে ৭ মাইল দুরে অবস্থিত বায়রা উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশ পাশ করেন। পরে মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। বাবার প্রিন্টিং ব্যবসা দেখা শুনার জন্য পরবর্তীতে তিনি ঢাকায় চলে আসেন।
চিত্রঃ-শহীদ রফিকের গ্রামের বাড়ী।
শহীদ রফিক একই গ্রামের মেয়ে রাহেলা খাতুন পানুকে ভালবাসতো। পারিবারিক ভাবে তাদের এই ভালবাসাকে মেনে নিয়ে পরিবার থেকে বিয়ের দিনক্ষন ঠিক করা হয়। সেই উপলক্ষ্যেই বিয়ের বাজার করার জন্য তিনি ঢাকায় যান। ২১শে ফেব্রুয়ারী বিয়ের শাড়ী-গহনা ও কসমেটিকস নিয়ে সন্ধ্যায় তাঁর বাড়ী ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই মহান ব্যক্তি যখন শুনতে পেলেন বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার দাবীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে থেকে মিছিল বের হবে তখন তিনি ছুটে যান এই মিছিলে। তৎকালিন সরকার কর্তৃক আরোপিত ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারী ছাত্র জনতার সাথে তিনিও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ গ্রহন করেন। তখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হোষ্টেল প্রাঙ্গন ও মিছিলের পদভারে প্রকম্পিত পুরো রাজপথ। এ অবস্থা দেখে পাকিস্তান সরকার দিশেহারা হয়ে উঠে। ফলে র্নিবিচারে ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষন শুরু হয়। একটি গুলি রফিক উদ্দিনের মাথায় বিদ্ধ হয়ে মাথা ঝাঝরা হয়ে যায় ঘটনাস্থলেই রফিক শহীদ হন।
ছবি: -১ গুলিবিদ্ধ শহীদ রফিক।
ছবি: -২ গুলিবিদ্ধ শহীদ রফিক।
শহীদ রফিকই সম্ভবত পৃথিবীতে ভাষার জন্য প্রথম শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। তবে পাকিস্তানী হায়েনেরা তাকে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি ঢাকা মেডিক্যাল থেকে তার লাশ লুকিয়ে ফেলে এবং জনরোষের ভয়ে পরদিন সেনাদের সহযোগীতায় আজিমপুর কবরস্থানে শহীদ রফিককে দাফন করা হয়। কিন্তু তাঁর কবরের কোন চিহ্ন রাখা হয়নি। ফলে আজিমপুর কবরস্থানে হাজারো কবরের মাঝে ভাষা শহীদ রফিকের কবরটি অচিহ্নিত থেকে গেল। এই মহান লোকটি নিজের ভালবাসার মানুষকে ফেলে, নতুন জীবনের সমস্ত আশাকে বিলিয়ে দিয়ে তিনি আমাদের মায়ের মুখের ভাষাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন। শহীদ রফিক আর কোন দিন তার ভালবাসার "পারিল" গ্রামে ফিরে যেতে পারেনি। তিনি ঢাকার বুকেই চিরনিদ্রায় শায়িত হয়ে রইলেন হাজারো কবরের ভীড়ে। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বাংলাদেশ সরকার শহীদ রফিককে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করেন। এবং সরকারী ভাবে ২০০৬ সালে তারঁ "পারিল" গ্রামে ভাষা শহীদ পাঠাগার ও স্মৃতি যাদুঘর স্থাপন করা হয় শহীদ রফিকের নামে।
চিত্রঃ- রফিক স্মৃতি যাদুঘর।
যেখানে তার ব্যবহৃত জিনিষপত্র ও প্রচুর বই আছে। তারও আগে প্রশিকার উদ্দ্যোগে তারঁ বাড়ী সংলগ্ন একটি ছোট লাইব্রেরী গঠন করা হয়। যেখানে মূলত উনার স্মৃতি গুলো প্রথম থেকে সংরক্ষন করার ব্যবস্থা করা হয়।
ঢাকার আজিমপুর এই পুরানো কবরস্থানের হাজারো কবরে ভীড়ে মহান ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদ চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন যার কবরের চিহ্ন পাকিস্তানী সরকার রাখেনি
সংক্ষিপ্ত জীবনী
নাম : রফিক উদ্দিন আহমেদ।
জন্ম : ৩০শে অক্টোবর ১৯২৬ সাল ৷
জন্মস্থান : মানিকগঞ্জ জেলার পারিল গ্রাম বতর্মানে রফিকনগর, ইউনিয়ন-বলধারা, থানা-সিঙ্গাইরে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা : আব্দুল লতিফ মিয়া ৷
মাতা : রাফিজা খাতুন।
মৃত্যু : ২১ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সাল ৷
সমাধি স্থল : ঢাকার আজিমপুর পুরানো কবরস্থানে ৷
ছবি ও তথ্য সূত্র:- উইকিপিডিয়া-ভাষা শহীদ রফিক আহমেদ , ইন্টারনেট, ভাষা সৈনিক আমানুল হক, বিশ্ব তোরনে বাংলা ও বিভিন্ন পত্রিকা থেকে নেওয়া।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কাঁচা আম পাড়ার অভিযান
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমরা কেন এমন হলাম না!
জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অভিমানের দেয়াল
অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি
২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১
তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন