ঢাকার রাস্তায় লাইসেন্স বিহীন ড্রাইভার, ট্রাফিক পুলিশের টু-পাইস ইনকাম এবং বিআরটিএ-র নীতি!!!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
মাসুদ রানার অসুস্থ আগুনে পোড়া দুই আঙ্গুল বিশিষ্ট বাঁকা হাত।
গতকাল খুব জরুরী কাজে গুলশানের অফিস থেকে ধানমন্ডি যাওয়ার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভাড়া দাবী করার পরেও একটি ক্যাবে উঠি। কিছু দুর যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম ড্রাইভার খুব একটা সুবিধার না। বেশ কয়েকবার নিয়ম লঙ্ঘন করে সে ওভার টেক করলো কয়েকটি গাড়িকে, তারপর মহাখালী আমতলী মোড়ে গিয়ে দেখালাম গাড়ী পুরোপুরি টার্ন নিতে পারছে না। খুব ভয় পেয়েছিল। পরে আমি ওকে প্রশ্ন করাতে আসল খবর বের হয়ে আসলো।
ছবি:- মাসুদ রানার বাম হাত যে হাতটি আমাদের ঢাকার ব্যস্ত সড়কে প্রায় সময় গাড়ির গিয়ারে রাখতে হয়।
মাসুদ রানা ২০/২২ বৎসরের একটি ছেলে। ৭/৮ বৎসর আগে গাইবান্ধা থেকে জীবিকার জন্য ঢাকায় এসে লালকুঠি,মিরপুর মাজার রোডে অবস্থিত "সুইস ক্যাবে" গাড়ী সার্ভিসিং এর হেলপার হিসাবে কাজ শুরু করেন এবং অবশেষে কাজ শিখে নিজেকে মিস্ত্রি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ছোট বেলায় এক অগ্নিকান্ডে সে তার ডান হাতের তিনটি আঙ্গুল হারান এবং হাতটি বৃদ্ধা আঙ্গুল ও তর্জনী নিয়ে কব্জির পরে চামড়ার সাথে ৯০ ডিগ্রী কোণ করে লেগে আছে। এতে বুঝা যায় সে স্বাভাবিক ভাবে কব্জি ঘোরাতে পারে না। অর্থাৎ তার ডান হাতের আঙ্গুল দুটো বাঁকা হয়ে কব্জির সাথে ফিক্সড হয়ে আছে, তাই তার কব্জি ঘুরাতে অসুবিধা। আমি মাসুদ রানাকে প্রশ্ন করলাম তোমার এই হাত নিয়ে তো তুমি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার কথা নয়...তাহলে তুমি কিভাবে ঢাকার এই ব্যস্ত সড়কে গাড়ী চালাও। তখন সে বলল ট্রাফিক পুলিশকে টাকা দিয়ে এবং নিয়মিত স্ব-ইচ্ছেয় কেইস খেয়ে খেয়ে। স্ব-ইচ্ছেয় কেইস খাওয়ার ব্যাপারটি আমার কাছে বেশ অবাক করা বিষয় মনে হলো। কেউ কি স্ব-ইচ্ছেয় গাড়ী নিয়ে কেইস খায়? মাসুদরানাকে এর কারন জিজ্ঞাসা করাতে সে বলল, স্যার রাস্তায় গাড়ী বের করলে ট্রাফিক পুলিশ লাইসেন্সের অজুহাত দেখিয়ে ২০০/৩০০ টাকা আদায় করে তারপর ছেড়ে দেয়। ধরেন আমি দিনে যদি দুই বার ট্রাফিক পুলিশের কাছে ধরা খেয়ে ৪০০/৫০০ টাকা দিয়ে দিই তাহলে মাসে আমার ট্রাফিক পুলিশকে ঘুষ বাবাদ দিতে হবে প্রায় ১৫,০০০ টাকা। কিন্তু আমি যদি মাসে দুটো কেইস খায় তাহলে আমার খরচ হবে ১০০০ টাকা। জিজ্ঞাসা করলাম এটা কি ভাবে? ও বললো একবার কেইস খাইলে ৫০০ টাকা দিতে হয় গাড়ীর কাগজপত্র ছাড়িয়ে আনতে এবং সেই কেইসের মেমো দেখিয়ে ১৫ দিন বিনা ঘুষে রাস্তায় গাড়ী চালানো যায়। অর্থাৎ কেইস খাওয়ার পর কেইস মেমোটি দেখালে আর কাউকে ঘুষ দিতে হয় না এটা একটি বিশেষ সুবিধা। আর এই সুবিধাটি করে দিয়েছেন বিআরটিএ-র পরিবহণ নীতি এবং আর এর সুযোগ নিচ্ছেন এ রকম হাজারো লাইসেন্স বিহীন ড্রাইভার। যা আমাদের মতো যাত্রীদের জন্য জীবন মৃত্যুর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ। মাসুদরানা একজন শাররীক প্রতিবন্ধি হওয়া স্বত্ত্বেও ঢাকার ব্যস্ততম সড়কে যাত্রীদের প্রাণহাতে নিয়ে গাড়ী চালাচ্ছেন। যদিও সে তার শাররীক যোগ্যতা অনুসারে গ্যারেজে মেক্যানিকসের কাজ করতে পারে..কিন্তু অসাধু গাড়ী ব্যবসায়ীদের লোভের কারণে আজ তার হাতে ব্যস্ত নগরীর গাড়ী উঠে এসেছে। তার বাম হাত গিয়ারের কাজ নিয়ে যখন ব্যস্ত থাকে তখন অসুস্থ ডান হাতটি কিভাবে একটি মোড়ে স্টিয়ারিং ঘুরাবে একবার ভেবে দেখেছেন কি? মাসুদরানার ডান হাত পুরো একটি মোড় ঘুরানোর পক্ষে কোন মতেই উপযুক্ত না, কারণ তার হাতটি আগুনে পুড়ে কব্জির সাথে লেগে আছে...যেটির স্বাভাবিক মোভমেন্ট করা সম্ভব নয়।
ছবি:- "সুইস ক্যাব" কোম্পানীর এই গাড়ী চলে লাইসেন্স বিহীন ড্রাইভার দিয়ে।
এটাই আমাদের দেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স নীতি এবং গরু, ছাগল চেনা ড্রাইভারদের বিনা পরীক্ষায় ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার দেশ। বিআরটিএ-র এই নীতি এবং ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ প্রীতি আজ আমাদের দেশের সড়ক দূর্ঘটনাকে বৃদ্ধি করছে নিঃসন্দেহে। "সুইস ক্যাব" নামক প্রতিষ্ঠানটির ১০০/১৫০টি ক্যাব আছে এবং বেশীর ভাগ ড্রাইভাদের কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। মাসুদরানার মতে শুধু "সুইস ক্যাব" না ঢাকার বেশীর ভাগ ক্যাব ড্রাইভাররা এই ভাবে ঢাকার ব্যস্ত সড়কে গাড়ী চালাচ্ছে। একবার ভেবে দেখুন কি ভয়ন্কর অবস্থায় আমাদের পরিবহণ ব্যবস্থায়। তাহলে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা আর দেবে কে?
দুঃখিত মাসুদরানা তোমার পঙ্গুত্ব নয়, আমাদের বিআরটিএ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থার মানষিক পুঙ্গুত্বই আমাকে সব চেয়ে বেশী ভাবিয়ে তুলেছে। জানি তুমি চাকুরী হারালেও যেহেতু তোমার গাড়ী মেরামতের কাজ জানা আছে তুমি তা দিয়ে তোমার জীবিকা ভালভাবেই নির্বাহ করতে পারবে, কিন্তু মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথাও তোমাকে একবার ভাবতে হবে একজন মানুষ হিসাবে, বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে।গতকাল খুব জরুরী কাজে গুলশানের অফিস থেকে ধানমন্ডি যাওয়ার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভাড়া দাবী করার পরেও একটি ক্যাবে উঠি। কিছু দুর যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম ড্রাইভার খুব একটা সুবিধার না। বেশ কয়েকবার নিয়ম লঙ্গন করে সে ওভার টেক করলো কয়েকটি গাড়ীকে, তারপর মহাখালী আমতলী মোড়ে গিয়ে দেখালাম গাড়ী পুরোপুরি টার্ন নিতে পারছে না। খুব ভয় পেয়েছিল। পরে আমি ওকে প্রশ্ন করাতে আসল খবর বের হয়ে আসলো। মাসুদ রানা ২০/২২ বৎসরের একটি ছেলে। ৭/৮ বৎসর আগে গাইবান্ধা থেকে জীবিকার জন্য ঢাকায় এসে লালকুঠি,মিরপুর মাজার রোডে অবস্থিত "সুইস ক্যাবে" গাড়ী সার্ভিসিং এর হেলপার হিসাবে কাজ শুরু করেন এবং অবশেষে কাজ শিখে নিজেকে মিস্ত্রি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ছোট বেলায় এক অগ্নিকান্ডে সে তার ডান হাতের তিনটি আঙ্গুল হারান এবং হাতটি বৃদ্ধা আঙ্গুল ও তর্জনী নিয়ে কব্জির পরে চামড়ার সাথে ৯০ ডিগ্রী কোণ করে লেগে আছে। এতে বুঝা যায় সে স্বাভাবিক ভাবে কব্জি ঘোরাতে পারে না। অর্থাৎ তার ডান হাতের আঙ্গুল দুটো বাঁকা হয়ে কব্জির সাথে ফিক্সড হয়ে আছে, তাই তার কব্জি ঘুরাতে অসুবিধা। আমি মাসুদ রানাকে প্রশ্ন করলাম তোমার এই হাত নিয়ে তো তুমি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার কথা নয়...তাহলে তুমি কিভাবে ঢাকার এই ব্যস্ত সড়কে গাড়ী চালাও। তখন সে বলল ট্রাফিক পুলিশকে টাকা দিয়ে এবং নিয়মিত স্ব-ইচ্ছেয় কেইস খেয়ে খেয়ে। স্ব-ইচ্ছেয় কেইস খাওয়ার ব্যাপারটি আমার কাছে বেশ অবাক করা বিষয় মনে হলো। কেউ কি স্ব-ইচ্ছেয় গাড়ী নিয়ে কেইস খায়? মাসুদরানাকে এর কারন জিজ্ঞাসা করাতে সে বলল, স্যার রাস্তায় গাড়ী বের করলে ট্রাফিক পুলিশ লাইসেন্সের অজুহাত দেখিয়ে ২০০/৩০০ টাকা আদায় করে তারপর ছেড়ে দেয়। ধরেন আমি দিনে যদি দুই বার ট্রাফিক পুলিশের কাছে ধরা খেয়ে ৪০০/৫০০ টাকা দিয়ে দিই তাহলে মাসে আমার ট্রাফিক পুলিশকে ঘুষ বাবাদ দিতে হবে প্রায় ১৫,০০০ টাকা। কিন্তু আমি যদি মাসে দুটো কেইস খায় তাহলে আমার খরচ হবে ১০০০ টাকা। জিজ্ঞাসা করলাম এটা কি ভাবে? ও বললো একবার কেইস খাইলে ৫০০ টাকা দিতে হয় গাড়ীর কাগজপত্র ছাড়িয়ে আনতে এবং সেই কেইসের মেমো দেখিয়ে ১৫ দিন বিনা ঘুষে রাস্তায় গাড়ী চালানো যায়। অর্থাৎ কেইস খাওয়ার পর কেইস মেমোটি দেখালে আর কাউকে ঘুষ দিতে হয় না এটা একটি বিশেষ সুবিধা। আর এই সুবিধাটি করে দিয়েছেন বিআরটিএ-র পরিবহণ নীতি এবং আর এর সুযোগ নিচ্ছেন এ রকম হাজারো লাইসেন্স বিহীন ড্রাইভার। যা আমাদের মতো যাত্রীদের জন্য জীবন মৃত্যুর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ। মাসুদরানা একজন শাররীক প্রতিবন্ধি হওয়া স্বত্ত্বেও ঢাকার ব্যস্ততম সড়কে যাত্রীদের প্রাণহাতে নিয়ে গাড়ী চালাচ্ছেন। যদিও সে তার শাররীক যোগ্যতা অনুসারে গ্যারেজে মেক্যানিকসের কাজ করতে পারে..কিন্তু অসাধু গাড়ী ব্যবসায়ীদের লোভের কারণে আজ তার হাতে ব্যস্ত নগরীর গাড়ী উঠে এসেছে। তার বাম হাত গিয়ারের কাজ নিয়ে যখন ব্যস্ত থাকে তখন অসুস্থ ডান হাতটি কিভাবে একটি মোড়ে স্টিয়ারিং ঘুরাবে একবার ভেবে দেখেছেন কি? মাসুদরানার ডান হাত পুরো একটি মোড় ঘুরানোর পক্ষে কোন মতেই উপযুক্ত না, কারণ তার হাতটি আগুনে পুড়ে কব্জির সাথে লেগে আছে...যেটির স্বাভাবিক মোভমেন্ট করা সম্ভব নয়। এটাই আমাদের দেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স নীতি এবং গরু, ছাগল চেনা ড্রাইভারদের বিনা পরীক্ষায় ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার দেশ। বিআরটিএ-র এই নীতি এবং ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ প্রীতি আজ আমাদের দেশের সড়ক দূর্ঘটনাকে বৃদ্ধি করছে নিঃসন্দেহে। "সুইস ক্যাব" নামক প্রতিষ্ঠানটির ১০০/১৫০টি ক্যাব আছে এবং বেশীর ভাগ ড্রাইভাদের কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। মাসুদরানার মতে শুধু "সুইস ক্যাব" না ঢাকার বেশীর ভাগ ক্যাব ড্রাইভাররা এই ভাবে ঢাকার ব্যস্ত সড়কে গাড়ী চালাচ্ছে। একবার ভেবে দেখুন কি ভয়ন্কর অবস্থায় আমাদের পরিবহণ ব্যবস্থায়। তাহলে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা আর দেবে কে?
ছবি:- মাসুদরানার গাড়ীর নাম্বার প্লেট।
দুঃখিত মাসুদরানা তোমার পঙ্গুত্ব নয়, আমাদের বিআরটিএ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থার মানষিক পুঙ্গুত্বই আমাকে সব চেয়ে বেশী ভাবিয়ে তুলেছে। জানি তুমি চাকুরী হারালেও যেহেতু তোমার গাড়ী মেরামতের কাজ জানা আছে তুমি তা দিয়ে তোমার জীবিকা ভালভাবেই নির্বাহ করতে পারবে, কিন্তু মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথাও তোমাকে একবার ভাবতে হবে একজন মানুষ হিসাবে, বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্মৃতিপুড়া ঘরে
বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।
দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
গরমান্ত দুপুরের আলাপ
মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজীব নূর কোথায়?
আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।
হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।
ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন