শিশুশ্রমকে না বলুন ! সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলুন ! রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক এই বুলি অার কতদিন? বললাম, না । তো লাভটা কি? শিশুশ্রম কি কোনো অপরাধ, যে অামাদেরকে না বলতে হবে? শিশুশ্রম হলো সমাজের করুণ পরিণতির অারেকটা প্রতিচ্ছবি । অার এই প্রতিচ্ছবিই বলে দিচ্ছে, অামরা এমন এক ব্যবস্থায় (সিস্টেমে) বসবাস করছি, যেখানে পুঁজিবাদী অার কর্পোরেট জীবনব্যবস্থা নিঃস্বদের অারো নিঃস্ব করছে অার ধনিক শ্রেণিটিকে করছে অারো পুঁজিপতি । ভারসাম্যহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একদিকে সমাজ-রাষ্ট্রকে অার্থিক বৈষম্যে বিভাজিত করেছে, অপরদিকে দরিদ্র শ্রেণিটিকে বাধ্য করাচ্ছে জোরপূর্বক শ্রম অর্থ্যাৎ দাসত্ব মেনে নিতে, উপায়হীন বলে মেনেও নিচ্ছে । ফলে রক্ষা পাচ্ছেনা শিশু - নারী - বৃদ্ধ কেউই । সচেতনতা প্রচারে এ পর্যন্ত শিশুশ্রম কমেনি অার কমার কথাও না । কারণ, যার পেটে দুবেলা অন্ন থাকেনা, যার মা অসুস্থ শরীর নিয়ে পরের বাড়িতে কাজ করতে করতে বিছানায় পড়ে থাকে, সেই সন্তানরা তো অার সাধে শিশুশ্রম করতে যায় না ।
ভাবছেন তাদেরকে অার্থিক সাহায্যের জন্য দুহাত বাড়ানোর অনুরোধ করবো? মোটেও না । তাদেরকে কত টাকার সাহায্য করতে পারবেন? কতটি শিশু ও শিশুর পরিবারের দায়ভার নিতে পারবেন? অামরা অাসলে মোটেও তা পারবো না । অর্থ ও মনোবল - এদুটো সম্পূর্ণ রূপে অামাদের সবার কাছে নেই । তাছাড়া কাউকে কয়েকটাকা দিয়ে সাহায্যের চেয়ে এটা কি উত্তম নয় যে, সমস্যা সমাধানের অপচেষ্টার চেয়ে সমস্যা প্রতিরোধের সামান্য চেষ্টা? অামরা যদি পুঁজিবাদের প্রতিযোগিতায় না মেতে উঠি, অর্থ ও সম্পদের সুষম বন্টন করি, পারিবারিক-সামাজিক-রাষ্ট্রীয় দায়-দায়িত্ব পূরণ করি তাহলেই ওদেরকে প্রকৃত অর্থে সাহায্য করা হবে, তাদের দুঃখে অামাদের মর্মাহত, দয়ার্দ্র দৃষ্টিপাত সার্থক হবে ।
পারবেন অাজ থেকে এমন স্বপ্ন দেখতে যে, অাপনার কোটি কোটি টাকা চাই না, বহুতল ফ্ল্যাট চাই না? পারবেন অাপনার অার্থিক স্বপ্নগুলো সীমাবদ্ধ করে ফেলতে? পারবেন কর্পোরেট দুনিয়াটাকে হৃদয় থেকে ঘৃণা করতে? পারবেন ভোগ-বিলাসিতা থেকে নিজেকে সংযত রাখতে?
অামরা যদি এতোটুকুন না পারি, নিদেনপক্ষে শিশুশ্রম, নারীশ্রম, বৃদ্ধ-শ্রমের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ না করি । কারণ, এতে একরকম ওদের প্রতি উপহাস হয়, দারিদ্রকে অভিশাপ ঘোষণা দেয়া হয় ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৫