somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌধ নির্মাণের প্রয়োজন আছে, তবে তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হত্যাকান্ডের বিচার হওয়া

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের বিচারের নজির আমাদের দেশে তেমন একটা নেই। তবে হত্যার শিকার হওয়া হতভাগ্যদের নামে সৌধ, প্রতিষ্ঠান, সড়ক, সেতু নির্মাণের নজির অসংখ্য আছে। এরশাদ আমলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ময়েজ উদ্দিন সাহেবকে হত্যা করা হয়েছিল। তাঁর নামে গাজীপুরে একটি সেতু আছে। সেই সেতু দিয়ে তাঁর হত্যাকারী হয়তো প্রতি সপ্তাহে বা প্রতিদিনই গাড়ি হাকিয়ে যান। প্রচলিত আদালতের বিচারে এই হত্যাকারীর সাজা হয়েছিল। তাঁর প্রভু অর্থাৎ সৈরাচারী এরশাদ সংবিধানে প্রদত্ত ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতা বলে তাকে মাফ করেন। ময়েজ উদ্দিন সাহেব এর মেয়ে এখন মহান জাতীয় সংসদের সদস্য। সেই সংসদে তার দলেরই মিত্র তাঁর বাবার হত্যাকারীর দল এবং সেই হত্যাকারীকে যে মুক্তি দিয়েছিল সেই এরশাদ।

এরশাদ আমলে আরো হত্যা করা হয়েছিল নুর হোসেন, ডাঃ শামসুল আলম খান মিলনকে। তাঁদের নামেও সৌধ, প্রতিষ্ঠান, সড়ক এর নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের হত্যাকারীদের কোন বিচার হয়নি। তাঁদের মুত্যু দিবসে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল সহকারে যারা ফুল দিতে যান আমি জানিনা সেই সমস্তের মধ্যে তাদের হত্যাকারীরাও আছেন কিনা। তবে থাকাটা অসম্ভব নয়। যেহেতু রাষ্ট্র এসব হত্যাকান্ডের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে সেহেতু এ হত্যাকান্ডের দায় রাষ্ট্রের আওতাধীন সবকিছুর (ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান) উপর কিছুটা হলেও বর্তায়।

ব্লগার রাজীব নিশংসভাবে খুন হয়েছেন তা প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল। সারাদেশ এই হত্যাকান্ডে উত্তাল হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং রাজীবের বাসায় গেলেন। হত্যাকারীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রায় এক সপ্তাহ পরেও কে বা কারা রাজীবকে হত্যা করল তার কোন সুরাহা হলোনা, হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার বিষয়ে কোন অগ্রগতি হলোনা। সংশ্লিষ্টদের তাঁর হত্যার বিচারের চেয়ে তাঁর নামে সৌধ নির্মাণের দিকেই বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের তথাকথিত সিংহপুরুষ ইতিমধ্যেই চাষাড়ার মোড়ের নাম রাজীব চত্বর রেখেছেন। আবেগের বশে তিনি হয়তো এটা ভুলেই গেছেন যে, সিটি কর্পোরেশন এর আওতাধীন কোন সড়ক বা স্থানের নামকরণের অধিকার শুধু কর্পোরেশনের। তিনি হয়তো এটাও ভুলে গেছেন যে সেই নির্বাচনে তিনি শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন। শুনছি শাহবাগ চত্বরেও রাজীব এর নামে সৌধ স্থাপন করা হবে।

সৌধ স্থাপনের প্রয়োজন আছে। তবে তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হত্যাকারীদের বিচার হওয়া।হত্যাকারী যেই হোক তাঁর বিচার করতে হবে। যদি সে জামাতের হয় তবে তাঁর বিচার করতে হবে, যদি সে কোন তৃতীয় পক্ষ হয় তবে তাঁরও বিচার করতে হবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা আন্দোলনকারীদের এটা ভেবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন প্রয়োজন দেখছিনা যে হত্যাকান্ডে যদি তৃতীয় পক্ষ জড়িত থেকে থাকে তবে আন্দোলনের কোন ক্ষতি হবে। কারণ এ আন্দোলন গণমানুষের আকাঙ্খারই বহিঃপ্রকাশ। আর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগ বাড়িয়ে কিছু বাড়তি কথা বলেন সেটা জনগণ জানে, হয়তো ভালবেসে মেনেও নেয়।

সৌধ নির্মাণের প্রয়োজন আছে। গ্যাস বেলুনে চিঠি দিয়ে শহীদদের নিজেদের আকুতির কথা জানানোরও প্রয়োজন আছে। তবে এরচেয়েও বেশি প্রয়োজন রাজীবের হত্যাকারীদের বিচার হওয়া। সে কারণেই আন্দোলনকারী বা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে রাজীবের হত্যাকারীদের গ্রেফতার বা বিচারের বিষয়ে একটি আল্টিমেটাম আশা করি। যদি এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার বা বিচারের আওতায় না এনে শুধু সৌধ নির্মাণই চলতে থাকে তবে পুরো বিষয়টাই সরকারের বিপক্ষে কাজ করবে। যদি এ হত্যার বিচার না হয় তবে বরাবরের মতোই সেই সৌধে রাজীবের হত্যাকারীরাই রাষ্ট্রীয় আচারে পরিবেষ্টিত হয়ে ফুল অর্পণ করছেন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×