somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাননীয় অর্থমন্ত্রী, নৈতিকতার সর্বশেষ টুকরোটুকুনও বঙ্গোপসাগরে বিসর্জন দিলেন

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেষ পর্যন্ত আমাদের জনগণের সরকার জনগণের অর্থ উদ্ধারের জন্য সমঝোতার হাত বাড়িয়েছেন দেশের ব্যাংক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়া হল-মার্ক এর দিকে। এ প্রক্রিয়ায় তাদের আরও ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। শুধু তাই নয় হল-মার্কের কারখানাগুলো চালু করার জন্য জেল থেকে বের করে আনা হবে কেলেঙ্কারির হোতাদের। সরকারের বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রীর মতে এভাবেই লুট করা অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হবে। অথচ গত ১৪ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হল-মার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে গঠিত উপকমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেছিলেন যে, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির অর্থ কোনোভাবেই আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নামমাত্র জামানত রয়েছে এই বিপুল জালিয়াতির বিপরীতে। ফলে সরকারের উচিত হবে সোনালী ব্যাংকের পরিস্থিতি বিবেচনা করে মূলধন জোগান দেওয়া। কিন্তু সেই সুপারিশ না মেনে পাল্টা ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।

হলমার্ক এর বর্তমান জামানত বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক যেখানে নিশ্চিত করে বলছে যে, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির অর্থ কোনোভাবেই আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই সেখানে অর্থমন্ত্রী কোন সূত্রের প্রেক্ষিতে এতোটা নিশ্চিত হলেন নতুন করে ঋণ দিলে হলমার্ক জনগণের অর্থ ফিরত দিতে সক্ষম হবে? অবশ্য লুট হওয়া টাকা বা নতুন করে প্রদান করা ঋণ হলমার্ক ফিরত না দিলেও আমাদের বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রীর চুলবিহীন মাথা তা নিয়ে বেশি ভাববেন তেমনটা মনে করছি না। কারণ জনগণের এই অর্থমন্ত্রীই একসময়ে বলেছিলেন হলমার্ক এর মাধ্যমে লুট হওয়া টাকার পরিমান খুবই অল্প। আমি এটাও মনে করছি না যে, এরই মধ্যে হলমার্ক কর্তৃক লুট হওয়া টাকাগুলো কোথায় গেছে এটা নিয়েও তিনি ভাবিত।

আমি ঠিক জানিনা হলমার্ক কিভাবে বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রীকে করায়ত্ত করল কিংবা কত টাকার বিনিময়ে অর্থমন্ত্রীর টেকো মাথাটা এ পরিকল্পনাতে সায় দিল। এটাও জানি না হলমার্ক এর লুট হওয়া টাকার কতো পরিমান জনগণের সরকারের আলাল-দুলালদের পকেটে গেছে এবং এর কতটুকুন আগামী নির্বাচনে ব্যয় হবে। এতোসব না জানলেও এতটুকুন নিশ্চিত হয়েছি যে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার নৈতিকতার সর্বশেষ টুকরোটুকুও বঙ্গোপসাগরে বিসর্জন দিয়েছে। সরকারের আর বড় গলায় দুর্নীতি বা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কিচ্ছু বলার অধিকার নেই। সরকার এটা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেয়ার যোগ্যতা তাদের নেই। সরকারের একমাত্র যোগ্যতা বা কর্মসূচি হচ্ছে শিষ্টের দমন এবং দুষ্টের পালন। ঠিক সে কারণেই কেলেংকারীর হোতাদের শাস্তির বদলে তাদের-কে জেল থেকে বের করা আনা হচ্ছে, নতুন করে ঋণের ব্যবস্থা করছে। সরকার মূলত এর মাধ্যমে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দুষ্টচক্রের কাছে এই বার্তাটি পাঠাল যে, তারা যতোই লুটপাট করুক না কেন এতে ভয়ের কিছু নেই। দেশের সম্পট লুট করে পুরো জাতির সামনে দিগম্বর হলেও ভাবনার কিছু নেই। একটা সময়ে সরকার নিজেই তাদেরকে রক্ষা করবে, নতুন করে লুটপাটের ব্যবস্থা করে দিবে।

প্রকৃতঅর্থে এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতে যদি এই সরকারী দল কখনো বিরোধী দলে যায় তবে এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার সে হারাল। ভবিষ্যতে তারেক-কোকোরা যদি সোনালী ব্যাংককে পুরো দেউলিয়া করে দেয় তখন এর বিরুদ্ধে বলার অধিকার আওয়ামী লীগের আর থাকল না। কারণ হলমার্ক-কে কেন্দ্র গত দেড় বছরে সরকার যা করেছে তা তারেক-কোকোদের আচরণের চেয়ে উন্নততর কোন কিছু নয়। আওয়ামী প্রমাণ করেছে তারেক-কোকোদের চেয়ে ভাল করার যোগ্যতা তাদের নেই এবং শাসকেরা সব আসলে একই গোয়ালের গরু।

তবুও চাপাবাজি থেমে থাকবে না। সরকার-কে প্রটেকশন দেবার মতো লোকের অভাব হবে না। আমার এই ক্ষুদ্র লেখাটিতেও সরকারের পক্ষে হাল ধরার মতো লোকের কমতি হবে না। আর আমাদের দেশে হাল ধরাটাতো খুবই সোজা। কারণ এখানে প্রটেকশন দেয়া হয় নিজের খারাপ কাজের বিপরীতে অন্যের অপকর্মের তুলনার মাধ্যমে। খারাপ কাজের বিপরীতে ভাল কাজের তুলনা করার মতো সরল বা অপদার্থ আমরা নই।
১০টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×