somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাতিশীতোষ্ণ ভালোবাসা

০২ রা এপ্রিল, ২০১১ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঠাস! শব্দ করে মোবাইলটা ৩ ভাগ হয়ে ৩ দিকে ছড়িয়ে পরলো। হে ধরনী, দ্বিধা হও, ওহ নো! আবার সেই রাগ!। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই! এমন শান্তশিষ্ট মেয়েটার এত রাগ, না জানি কোথা থেকে আসে! মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কান্না করবে নাকি ! আশেপাশে অনেকে অবাক হয়ে তামাশা দেখছে। কি করবো কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা। হঠাৎ ঠনক নড়লো, মোবাইলের অংশগুলো খুঁজে বের করা দরকার। একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। অন্ধকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, পাশে আবার নালা। নালায় পড়লো কিনা কে জানে! ও আল্লাহ্‌, এই মেয়েটার কবে কমনসেন্স হবে! আশেপাশের কৌতূহলী দৃষ্টির তোয়াক্কা না করে মোবাইলের অংশগুলো খুঁজতে লাগলাম। সাথে সে ও যোগ দিলো। যাক, রাগটা একটু কমেছে বোধহয়। মোবাইল টার দুর্ভাগ্য, আমার রাগটা তার উপর গেলো। আমি পেলাম মোবাইলের কভার, আর সে পেলো সামনের অংশ। কিন্তু ব্যাটারী কই! নালায় গিয়ে পড়েনিতো! পাশ দিয়ে একটু পর পর গাড়ী যাচ্ছে, তার উপর পথচারী মানুষ। পারে ও মেয়েটা!
ঘটনার সুত্রপাত আজ বিকালে। গ্রেজুয়েশন শেষ করে বসে আছি চাকরীর জন্নে। জীবনের বাস্তবতাটাকে হাড়ে হাড়ে ঠের পাচ্ছি, চাকরী খুঁজতে গিয়ে। বিকালে বের হবো, চাকরীর কিছু দরখাস্ত কুরিয়ার করা দরকার। ভাবছি কাজ শেষ করে, একটু দেখা করে আসবো। মহারাণীর আবার ২ দিন পরে পরীক্ষা।একটু সময়ের জন্নে দেখা করবে কিনা কে জানে! মেসেজ পাঠালাম। রিপ্লাই আসলো, বের হলে তাড়াতাড়ি বের হও। এ এক জ্বালা, সবই তার ইচ্ছা! ওহো, বলা হইনায়, আরেক কাহিনী। আমার আবার নতুন একটা ওয়ারিদ সিম কিনতে হবে। এটি ও মহারানীর রাগের বলি। আমার উপর রাগ করে, সিম টা নষ্ট করে ফেলেছে। এই দূরমু্ল্যের বাজারে! প্রেম করা উইদাউট ইনকাম, সে কী মুখের কথা! তার উপর প্রেমের বয়স কম, কথাবার্তা শেষ হয়না, সে জন্য ওয়ারিদ সিম নেওয়া। তুলনামুলক কম খরচে কথা বলা। সেই ওয়ারিদ সিমকে প্রাণ দিতে হলো আমার জন্য। পরেরদিন আবার চিরাচরিত ভুল ভাঙা, “সিমটা নষ্ট করা উচিৎ হইনায়”। এখন আবার ওয়ারিদের সিম কেনো। ভেবেছিলাম চাকরীর দরখাস্তগুলো কুরিয়ার করে, ওয়ারিদের সিম কিনে একবারে দেখা করতে যাবো। চিরকাল ই দেখলাম, খুব ভেবে চিনতে যে সিদ্ধান্ত নেই, তা আমার বিপক্ষে যাই। এবারো তার ব্যাতিক্রম হলও না। সব কাজ শেষ করতে গিয়ে দেরী হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি ফোন দিলাম।
-হ্যালো, আমার কাজ শেষ, আমি এখন আসতেসি।
-আমি অনেক্ষন নিচে দাড়ায় ছিলাম। এখন দেরী হয়ে গেছে। আমি পড়তে বসবো। আসার দরকার নাই।
-আমি জাস্ট সিমটা দিয়ে চলে যাবো, একটু বের হও।
-আমি এখন বের হতে পারবোনা, তুমি এসোনা ।।
-আমি আস্তেসি হলের কাছে, বের হলে হবা না হলে নাই।
ফোনটা রেখে দিয়ে রিকশা নিলাম। কাছাকাছি এসে কল দিলাম। ঠান্ডা গলায় বলল, আসতেসি।
জানতাম কাছে এসে আসতে বললে, কখনোই না করবেনা। ১০ মিনিট পর দূর থেকে আস্তে দেখলাম। যাক আসলো শেষ পর্যন্ত। কাছে এসে দাড়ানোর সাথে সাথে একটা অপরাধীর মতো হাসি দিলাম। কেমন করে জানি তাকিয়ে আছে, কথা বলছেনা কোনো।খুব ঠান্ডা গলায় বললো, “তোমাকে না আস্তে মানা করলাম, ২ দিন পরে আমার পরীক্ষা !” এই বলে হাতের মোবাইলটা মারলো ছুঁড়ে রাস্তায়।
ব্যাটারী খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ করে সেই খুঁজে পেলো রাস্তায়। কতো গাড়ি যাচ্ছিলো এই পথ দিয়ে। ভাগ্য ভালো কিছু হইনায় মোবাইলটার। খুবই মন খারাপ হল। বললাম-”আমি চলে যাই তাহলে”। কিছু বললনা সে। উল্টা দিকে ঘুরে হাটা দিলাম। কি ভাবছিলাম, আর কি হল! এভাবে যেতে ইচ্ছা করতেছিলনা। একটু দূর হেটে গিয়ে আবার মেইন রোডে দাঁড়ালাম, যেদিক দিয়ে সে হল এ যাবে। আমার সামনে দিয়ে চলে গেল, খেয়াল নাই তার কোন দিকে। আর ডাকলাম না। ভাল লাগছিলনা কিছু। সামনে হাটা শুরু করলাম। হোটেল একটা পেয়ে চা খেতে ঢুকলাম। চা আসার পর এ প্রতীক্ষিত ফোন টা আসলো।
-হ্যালো, তুমি কই?
- এইতো আছি আশেপাশে।
-আমি খুব অমানুষ হয়ে গেছি না?
-কই নাতো, আমার ই এভাবে আসা উচিৎ হইনাই।
-কেম্নে যে কাজ টা করলাম, আমার খুব খারাপ লাগতেছে।
-না না, ঠিক আসে, তুমি পড়তে বসো, ২ দিন পরে তোমার পরীক্ষা।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
ফোন টা রেখে দিলাম। এখন একটু ভাল লাগছে। জানি, আগামী কয়েকটা দিন আমার খুব ভালো যাবে। মেয়েটার এই একটা জিনিস খুব ভালো লাগে আমার। আমি যেমন সামান্য ভুল করলেই সরি সরি বলতে থাকি, তার আবার সেটা নাই। সরি বলবেনা সহজে কিন্তু কাজে দেখাই দিবে। না, ভালোই আছি আমি, এই রাগ আবার এই কেয়ার! একেই বুঝি বলে “নাতিশীতোষ্ণ ভালোবাসা”।



সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৪৪
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×