মূল্য থাকলে মূল্যবোধের কথা আসে।
মূল্যবোধের কথা আসলে মূল্যমানের কথা আসে।
মূল্যমানের কথা আসলে মূল্য নির্ধারণের কথা আসে।
মূল্য নির্ধারণের কথা আসলে মূল্য কম বেশির কথা আসে।
মূল্য কম বেশিতে গ্রহণের পরেই আসে উপযোগীতা।
মূল্যমানের নির্ধারণের সাথে সাথে উপযোগীতাও নির্ধারিত হয় বা সময়ের সাথে সাথে চটজলদি নির্ধারণ করে ফেলা যায়। ইচ্ছের বিচ্ছুতি ঘটলেই মূল্যমানে নির্ধারিত জিনিষটা ছুড়ে ফেলে দেওয়া যায় নিমিষেই।
আমরা প্রায় সময়ই বলে থাকি "তোমার কাছে কি আমার কোনো মূল্য/দাম নেই?" নিজের অজান্তে আমরা নিজেরাই নিজেকে মূল্যমানে নির্ধারণের জন্যে অন্যের কাছে নিজেকে সোপার্দ করি। নিজেকে অন্যের দ্বারা ছোট হতে সুযোগ করে দেই। এবং তা দিয়ে এক খাট বালিশ ভিজিয়ে দেই ভরদুপুরে।
মানুষ মূলত একটা। তার একার জীবনের সে বিভিন্ন মানুষকে আসতে সুযোগ দেই। নিজেকে অলীক সুখে সুখী করতে। কিন্তু মানুষ জানেনা বা বুঝতে চেষ্টা করে না যে প্রকৃতি তাকে মানসিক ভাবে একা করে রেখেছে। হই-ওয়ের সুন্দর্য মন্ডিত যে জীবন আমরা দেখি তা আসলে জীবন না, তা বোঝা যায় দিন শেষে ওই জীবন যখন একলা বালিশ মাথা দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সারাদিনের যাপনকে বোঝা মনে করে ঘুমোতে যায়। মানুষ মূলত একার জীবনের যখন অন্য মানুষ আসে, প্রভাব ফেলে মনের গভীর থেকে গভীর তরঙ্গে। মানুষ তখন বিলকুল ভুলে যায় তার একাকীত্ব। কিন্তু প্রকৃতি তার নিয়মের বাইরে যায় না কখনোই। ঠিকই সময় মতো একা করে দেই মানুষকে। আমরা তখন স্বরূপ ভুলে বিভ্রান্তের মত প্রলাপ শুরু করি। বলে ফেলি "কোনো মূল্য নেই আমার, তোমার কাছে?" অথচ আমরা এটা কখনোই বুঝি না বা বুঝতে চেষ্টা করি না যে; মূল্যমানে নির্ধারিত জিনিষ ছুড়ে ফেলা সহজ হয়। হোক সেটা মানুষ মুহূর্ত কিংবা কোন পণ্য।
এমন ভাবনা বহুবার এসেছে মনের আনাচে, আসা একা, যাওয়া একা, যাপনের সময়টুকুও কি একাই থাকতে হবে? অন্তত প্রকৃতির চতুরঙ্গ তো সেটারই ইঙ্গিত করে। ব্যাপারটা অনেকটা এমন হলেও সম্পূর্ণ এমন না। কারণ, প্রকৃতি তার নিষ্ঠুর চালাকিটা করে রেখে সেই অনেক আগেই। মানুষেরা মানুষদের কাছে আসবে। আবেগের সালোকসংশ্লেষণ হবে। দ্বিপত্রপল্লবের সৃষ্টি হবে অসংখ্য মানুষ। এটা সাধারণ কর্ম ধারায় সৃষ্টিমূলক সমাস।
এসবের পিঠপিছে যেসব ঘটনা ঘটে চলে সেটাই মূলত জীবন, বেঁচে থাকা, দীর্ঘশ্বাস, দুঃখ, একাকিত্ব, সুখ সব কিছু।
মানুষে মানুষে কাছে আসার প্রক্রিয়াটা জটিল না। জটিল হচ্ছে থাকা, থেকে যাওয়াটা। ওই স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন ধর্মীয় জটিলতার থেকেও শতগুণে জটিল। দক্ষিণ হওয়া খুব মধুর গরমে। আবার উত্তরের হওয়া যখন আসে শীতে?! কালবৈশাখীর তান্ডপ এলোমেলো ভাবে আসতে থাকা ঝড়ো হওয়াতে হাতে হাত ধরে বা ছুয়ে থাকা কিংবা তুচ্ছ অদৃশ্য তথাকথিত মনের জোর বা টানে কইজন পারে টিকে থাকতে?! খুব বিপদে ঝড়ের টাল সামলে হয়তো থাকা যায় কিন্তু ঝড়ের শেষে লন্ডভন্ড বিছানা বালিশ দু'হাতে গুছিয়ে সাজিয়ে রাখতে, চলতে বলতে আগের মতন করে, ক'জন পারে?
আমরা এখন কথাই কথাই বলি তোমার জন্যে আমার কোনো ফিলিংস নেই। অথচ বুকের মধ্যেকার উষ্ণবায়ু নিস্কাশনের জন্যে ফিলিংস না পাওয়া মানুষটাকেই ইনহেলার করে ব্যবহার করি। শুধু মনে করি ব্যবহারিক আইনে। ফোর সাবজেক্ট মত। প্লাস পয়েন্ট তুলে নিতে না পারলেও আদতে কোনো ক্ষতি নেই। কারণ আগেই তো ফোর সাবজেক্ট মানে ফিলিংস নেই নামক হ্যাস ট্যাগ তকমা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দুঃখী হওয়ার জড়োতায় সুখী থাকার যে ভান আমরা করি তাতে সুখী দেখা যায় বটে হওয়া যায় না। এই বেশ ভালো আছি বলে মানুষের পাশে কাটিয়ে চলে যাওয়া যায় বটে জীবনের না।
উপলদ্ধির যায়গা থেকে যতটুকু বুঝতে পারি তাহল মানুষ মানুষের কাছে আসবে, চলে যাবে। এটা দ্রুব সত্য। কিন্তু এই আসা যাওয়া মাঝে যে জীবন যাপিত হয় তা যেনো কুলষিত নাহয়, মিথ্যের যেনো নাহয়, পাপের যেনো নাহয়। জীবনে একা কাটানোর মুহূর্ত গুলোতেও যেনো এই মুহুর্ত গুলো কোনো আপসোস এর জন্ম নেয় দেই। ঠোঁটের কোণে বিষাদ না এঁকে যেনো এক গভীর সুখানুভূতি তৈরি করে।
পুনশ্চ: জীবনে যায় হোক, যায় ঘটুক না কেনো, কখনোই কাউকে বলার জন্যে কোনো কথা বলা উচিৎ না।
...
এনামুল খান
ফেব্রুয়ারী ২২, ২০১৯ ইং
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:২৯