somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোটিপতি নাপিত- রমেশ বাবু

০৩ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আপনি একবার ভাবুন যে একটি সেলুনে চুল কাটাতে গেলেন এবং মাত্র ৬৫ টাকা দিয়ে এমন একজনের হাত দিয়ে চুল কাটালেন যার নিত্য নানা তারকা এবং রাজনীতিবিদদের সাথে ওঠা-বসা এবং তিনি একটি ৩.৫ কোটি রুপী দামের একটি রোলস-রয়েস সিলভার গোস্ট গাড়ির মালিক।এছাড়াও তাঁর কাছে রয়েছে মার্সেডিজ সি, ই এবং এস ক্লাস, বিএমডব্লিউ ৫,৬ এবং ৭ সিরিজ,মার্সেডিজ ভ্যান (মোট ২০০ টি গাড়ি)!

হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়ছেন।একটুও কষ্টকল্পনা নয়, এ এমন একজনের গল্প যে তার আবেগ, সংকল্প,উৎসাহ, অধ্যবসায় এবং অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা ব্যবসায় লক্ষ্মীলাভ করেছেন কিন্তু নিজের অতীত শিকড়কে কখনো ভুলে যান নি।

১৯৮৯ সালে তাঁর পিতা মারা গেলে তার কষ্টের জীবন শুরু হয়। তার পিতামহের একটি সেলুন ছিল কিন্তু রমেশ ছোট থাকায় তার মা তাঁকে তার পড়াশোনার উপর মনোযোগ দেওয়াতে চেয়েছিলেন, তাই তার চাচাকে দিনপ্রতি 5 টাকায় দোকানটি ভাড়া দিয়েছিলেন। এত অল্প টাকাতে তাদের খাবারের সংকুলান হত না,তাই তাঁর মা রান্নার কাজ করতে শুরু করেন।

রমেশ এভাবে তাঁর স্কুল শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং পরবর্তীতে ইলেকট্রনিক্সে ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন। এরমধ্যে তার চাচা তার মায়ের সাথে ঝগড়া করে ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে রমেশ নিজেই সেলুন চালনা শুরু করেন যেটি এখন INNER SPACE নামে পরিচিত এবং তরুণদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

তাঁর একটা স্বপ্ন ছিল নিজের গাড়ী হওয়ার। যখন তার চাচা একটি গাড়ি কিনল তখন রমেশও তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ঋণ নিয়ে একটি মারুতি অমনি গাড়ী ক্রয় করেন। এটি ১৯৯৪ সালে তাঁর জন্য বড় ব্যাপার ছিল। এরজন্য তার পিতামহকে সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হয়েছিল এবং মাসিক কিস্তির টাকা ছিল ৬৮০০ টাকা। যেহেতু গাড়ীটি প্রায়সময় আইডল পড়ে থাকত তখন একজন ভদ্রমহিলা, যার বাড়ীতে তার মা কাজ করত তাকে সেটি ভাড়ায় খাটাতে পরামর্শ দেন। তাকে তিনি নন্দিনী দিদি বলে ডাকতেন, তিনিই তাকে গাড়ি ভাড়া ব্যবসার মৌলিক শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং নিজে যেখানে চাকুরী করতেন INTEL অফিসে রমেশের গাড়ীটি মাসিক ভাড়ার দেওয়ার বন্দোবস্ত করে দেন। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয় নি।

২০০৫ সালের মধ্যে তিনি আরও ৫-৬টি গাড়ি কিনে ব্যবসাতে লাগান। কিন্তু তাকে খুব কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হয় কারণ ছোট ও কমদামি গাড়ী সহজলভ্য ছিল। তখন তার মনে একটি নতুন আইডিয়ার উদয় হল,বিলাসবহুল গাড়ি ভাড়া দেওয়া।বেশিরভাগ কোম্পানিরই ছিল সেকেন্ড হ্যান্ড বিলাসবহুল গাড়ি, যা তেমন একটা ভালো ছিল না।

শুভানুধ্যায়ীরা তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে ২০০৫ সালে একটি বিলাসবহুল গাড়ি কেনাতে ৪০ লাখ রুপি ব্যয় করা একটি বড় ভুল। তিনি ভেবেছিলেন যদি ব্যবসা ক্ষতি হয় তাহলে গাড়ীটি বিক্রি করে দেবেন। তিনি বিশ্বাস করতেন- "আপনি যদি ব্যবসায় সাফল্য পেতে চান তবে আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে"। এবং তার এই ঝুঁকি খেটে গেল। ২০১১ সালে তিনি একটি রোলস রয়স কিনতে প্রায় ৩.৫ কোটি রুপী বিনিয়োগ করেন এবং তাতেও ম্যাজিক, শাহরুখ খান, অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বর্য রাই, এবং বেশ কয়েকজন রাজনীতিকদের কাজে তাঁর বিলাসবহুল গাড়ির ভাড়া নেওয়া হয়।


বর্তমানে রমেশের কাছে ৬০জন ড্রাইভার কাজ করছেন। তার প্রথম ড্রাইভার এখনও তার জন্য কাজ করে। প্রতিদিন সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে ওঠেন,সকাল ৮টা থেকে ১০ অব্দি সেলুনে কাজ করেন তারপর তাঁর car rental office বসেন বিকেল ৪টা অব্দি। আবার ৪টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা অব্দি সেলুনে বসে, অফিসে ফিরে রাত ৮.৩০ অব্দি কাজ করেন। তিনি রবিবার সারাদিন তার স্যালুনে কাজ করেন, যেহেতু সেদিন প্রচুর পুরানো গ্রাহকরা আসেন আর এইভাবে নিজের অতীতকেও ধরে রাখেন।


বর্তমানে তাঁর দুই কন্যা এবং একটি পুত্র স্কুলে পড়ালেখা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন "লোহা অকেজো পড়ে থাকলে, তাতে জং পড়ে"। নতুন উদ্যোগীদের প্রতি তার সহজ বার্তা- "কর্মঠ হও,নম্র হও আর সাথে দরকার একটু ভাগ্য তাহলে সাফল্য নিশ্চিত"।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

আমার অন্যান্য লেখা -
"অরণ্যদেব"- যাদব পায়েং
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ১:১৮
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×