somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যৌনকর্মী উপাখ্যাণ

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাই আর বোনের মধ্যে বয়সের পার্থাক্য তিন । উচ্ছলতার মধ্যে ওদের বেড়ে ওঠা । বাবা মায়ের ভালোবাসা নিয়ে প্রায়ই দ্বন্দ হয় বিথী আর ইমনের মধ্যে । এক জন বলে বাবা মা শুধু আমাকে ভালোবাসে, অন্যজন উল্টো । হাসান হাসি দুজনার ভালোবাসার ধন বিথী ইমন । ওরা দুজনই পারিবারিক বিনোদনের উৎস । ওদের মিষ্টি শত্রুতা দেখে যে কারও অবিভুত হওয়ার কথা । ১৪ বছরের বিথী অনেকটাই শান্ত স্বভাবের ।ইমনের অনেক অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করাই তার ধর্ম । অন্যদিকে ইমন অনেক প্রাণচঞ্চল । একটু রাগি মেজাজের । সারাক্ষন লেগে থাকে বিথীর পিছে । কথায় কথায় ক্ষেপিয়ে তোলে বিথীকে । একটেবিলে পড়তে বসলে টেবিলের নিচ দিয়ে বিথীকে খোচা আর মায়ের চোখের আড়ালে চিমচট কাটা ইমনের নিত্য কার্য । বিথী নালিশ করে মায়ের কাছে । গরম মেজাজ নিয়ে মা কিছু বলতে আসলে বিথীই আবার বলে এবার মাফ করে দাও ।
বড় একগুয়ে স্বভাবের ইমন । বিথীর জন্য কিছু কিনলে ইমনের জন্যও কিনতে হবে । এমনকি ইমনের জন্য জিনিসটি অপ্রয়োজনীয় হলেও । একদিন ঘটে এক মজার কাহিনী । বাব মায়ের সাথে বিথী ইমন যায় মেলায় । সেখানে মা বিথীর জন্য একটি চুলের ব্যান্ড কিনলো । ওমনিতেই শুরু হয় হাত পা ছোড়া-ছুড়ি । তাকেও ব্যান্ড কিনে দিতে হবে । বিথীর জন্য চুড়ি কিনলে তার জন্যও তাই । ইমনের আকুতির কাছে বাবা মা হার মানে ।
বিথি ক্লাস এইটে আর ইমন ফাইব এ । এত কিছুর মধ্যেও বোনের জন্মদিনে সবার আগে সুভেচ্ছা জানাতে ভুল করেনা ইমন । বাবার কিনে দেওয়া বাইসাইকেল চালানো শিখতে পারেনি তার পরেও বোনকে পিছনে না বসিয়ে সে সাইকেল চালাবে না । আছাড় খেয়ে খেয়ে বিথী ক্লান্ত , আর সে সাইকেলের পিছনে বসতে রাজি না । ওদের ভালোবাসার রং ঢং দেখে মায়ের চোখে জল আর মুখে হাসি একসাথে বিরাজমান ।
বাসা থেকে বিথীর স্কুলের দুরত্ব এক কিলোমিটারের বেশি নয় । বিথী স্কুলের ভালো ছাত্রীদের মধ্যে অন্যতম ও খুবই উচুমানের । তার জলন্ত প্রমান ক্লাস ফাইবে ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তি প্রাপ্তি । এত গুনের এই ছোট্ট মেয়েটি রুপের দৌড়েও কম যায় না ।
মধ্যবিত্ত তাই চার চাকার ঢাকনা য়োলা গাড়ি কেনার মুরদ নেই । রিক্সাই একমাত্র বাহন আর হেটে যাওয়াই একমাত্র বিকল্প উপায় । যাওয়া আসার পথে পাড়ার বখাটে ছেলেরা বিথীকে দেখে প্রায়ই বিভিন্ন আপত্তিকর উক্তি উচ্চারণ করে । দিনে দিনে এর মাত্রা বাড়ে । রাস্তার ওত পেতে থাকা অমানুষগুলি বিথীকে টিজ করার জন্য চিরকুট ছুড়ে মারা,সিগারেটের দেহাবশেষ ছুড়ে মারা,রাস্তায় ক্রিকেট প্রাকটিস,নগ্ন উক্তি নিক্ষেপ সহ এমন কোন ঘৃনিত কাজ নেই যা ওরা করেনি । বিথী তার তিক্ত অভিজ্ঞতা মায়ের কাছে বর্ণনা করার পরে মা বিথীকে স্কুলে দিয়ে আসে ও ছুটির পরে নিয়ে আসায় নিজেকে নিযুক্ত করে । আবার ইমনের আবদার বিথীকে স্কুলেনিয়ে যাওয়া হয় তবে ইমনকে কেন নেয়া হবেনা । মা সে আবদার উপেক্ষা করে বিথীকে নিয়মিত স্কুলে আনা নেয়া করে ।
বিথীর মা জনাবা হাসির মতে বখাটে শয়তানগুলোর চোখ অত্যন্ত ধারালো । ওদের দৃষ্টি অনেক তীক্ষ্ম,পোষাক ভেদ করে ওদের দৃষ্টি ছুয়ে যায় নারী শরীরের উন্নত বক্ষ সহ সকল গোপনীয় অঙ্গ । ব্যাপারটা খুবই লজ্জাজনক । ওদের কারনে অনেক অমুসলিম স্কুল ছাত্রীরাও বোরকা পড়ে স্কুলে যায় ।বিথীও বোরকা পড়া শুরু করে । কিন্তু সেও বৃথা চেষ্টা । ওরা চিনতে ভুল করেনা ।
একদিন বিকেল বেলা স্কুল থেকে বাসায় যাচ্ছে বিথী । সেদিন মা সাথে নেই । পথ আগলে দাড়ায় রোমেল । বখাটেদের একজন । বলে ভালোবাসি । বিথীর কিশোরী মন এমন প্রস্তাব পাবার জন্য প্রস্তুত নয় । রোসমল আবার বলে শোন মেয়ে আমার প্রস্তাবটা ভেবে দেখ । ও হ্যাঁ মনে রেখ বুড়িগঙ্গা অনেক দিন লাশের গন্ধ পায়নি । ভয়ে বিথীর পা জড়ো হয়ে আসে । কন্ঠ এত শুকিয়ে যায় যে কিছু বলতে পারে না । হৃদপিন্ডের সাথে সমান তালে পা ফেলে বাসায় চলে আসে ।
স্কুলে যাওয়া বন্ধ । মানষিক ভাবে প্রচন্ড রকম ভেঙ্গে পরে । উবে যায় বিথীর জীবনের সব হাসি আনন্দ । মায়ের কাছে আর ইমনের নামে নালিশ করে না । ইম বলে আপু তুই স্কুলে যাস না কেন ? তোর না সামনে পরীক্ষা ! উত্তর দেয় না বিথী । ভয় সারাক্ষণ তাকে গ্রাস করে রাখে । সে ভয় সম্ভ্রম হারানোর ভয় । সে ভয় জীবন হারানোর ভয় । পুলিশে জানিয়ে ও কোন লাভ হয়নি । কারন শয়তান গুলোর হাত পুলিশের চেয়ে ও লম্বা ।
দিন গড়াতে গড়াতে ফাইনাল পরীক্ষা আসে । বিথী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে চায় । সবাই সিদ্ধান্ত নেয় বিথী পরীক্ষা দিবে । মা বিখীকে নিয়ে স্কুলে যায় । ফেরার সময় পথ অঅগলে দাড়ায় দশ বারোটি যুবক । একজন ক্রিকেটের ব্যাট দিয়ে মাথায় করে বিথীর মাকে । লুটিয়ে পড়ে মাটিতে । বিথীকে টানা হেচড়াকরে মাইক্রোতে তুলে নেয় । দ্রুত অদৃশ্য হয় মাইক্রোবাসটি ।
রাস্তার পাসে কিছু মানুষের ভীড় । ভীড় ঠেলে সামনে গেলে দেখা যায় একটি ব্যানিটি ব্যাগ । তাতে আছে একটি ছোট্ট লুকিং গ্লাস,একটি কড়া লাল লিপস্টিক সহ কিছু কসমেটিক্স সামগ্রী,একটি হেয়ার ব্রাস,একটি আবাসিক হোটেলের ভিজিটিং কার্ড । আর এর পাশেই পরে আছে একটি অর্ধনগ্ন নারীর শরীর । মুখ দেখা যায় না । কেউ একজন সাহস করে মুখটি ঘুড়ায় । সেকি! এ ত বিথী । কিন্তু উপস্থিত কেউ চেনেনা । সবাই বলে উপসর্গ দেখে মনে হচ্ছে যৌনকর্র্মী ।
ইমনের পড়ার টেবিলে একটি চেয়ারই শুধু খালি হয়নি বাবা মায়ের হৃদয় ও শুন্য হয়েছে ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×