somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন জন্মের কিছুদিনের মধ্যে চিপস খায় আর একজন জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই চিপস বিক্রি করে!

১৩ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ির ভীতরে বসেও গলা-বুক শুকিয়ে আসছিল। একটু পরপর পানি খেয়ে তৃষ্ণা মেটাবার ঝামেলা এড়াতে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিচ্ছি থেমে থেমে।
গাড়িতে বসা কলিগের সাথে আলোচনা করছি, সরকার যদি বিশেষ বিবেচনায় “উড়াল সেতু(উড়াল পংখী অনায়েসে উড়তে পারে, সেতু না!)” বনানি-কাকলী পর্যন্ত এক্সটেন্ড করতো তাহলে হয়তো ঘন্টার পর ঘন্টা এই জায়গায় জ্যামে আটকে থাকতে হত না! আর বাংলাদেশের আবহাওয়াও যেন বাংলাদেশের নিয়ম মেনে চলছে, বরষার সময় চৈত্রের দাবাদহ, শীতের সময় বরষা! নিয়ম না মানায় নিয়ম।

ঢাকার দেয়ালগুলো শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে “চাইল্ড লেবার ডে” উপলক্ষে বিভিন্ন রঙয়ের পোস্টারে ছেয়ে ফেলা হয়েছে। এবারের থিম হচ্ছে, No to child labour in domestic work।
এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, বাসাবাড়িতে শিশুদের কাজ করা কে না বলুন। খুবই ভালো কথা।
তারমানে, শিশুদের কি রাস্তায় নেমে কাজ করা কে উৎসাহিত করা হচ্ছে? এই প্রশ্নের হয়তো সকলের সমচ্চারিত উত্তরঃ না না! কখনোই না!

কিন্তু যে দিবসে সারা পৃথিবী জুড়ে শিশু শ্রমিকদের বাসাবাড়িতে কাজের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে, সেই একই দিবসে বনানী সিগন্যাল থেকে এই ছবিটা আমাকে ক্যামেরাবন্দী করতে হল। ছবিটা ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, ছেলেটার পিছনে একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্কুল বাস। জ্যামে আটকে থাকা স্কুল বাসের পাশে যেয়ে ছেলেটি খুব বেশীক্ষণ “ এই চিপস লইবেন, চিপস!” বলতে পারে নাই। কারণ সে জানে, এই ধরনের বাসের কেও তার চিপস আদৌ খাবে না, কখনো হয়তো খাই নাই। পিচ গলা গরম কে উপেক্ষা করে সে এ গাড়ি থেকে ও গাড়ির দরজার সামনে যাচ্ছে আর মাথায় সেট করা সেই একই কথা আওড়িয়ে যাচ্ছে, চিপস লইবেন.........

ঘামে ভেজা শিশু ছেলেটি হয়তো জানেও না, আজ শিশু শ্রমিক নামক একটা দিবসের বিভিন্ন মঞ্চ কাঁপানো পরিবেশনা চলছে বড় বড় মিলনায়াতনে! মঞ্চের পরিবেশনা দেখে, যে গৃহকর্তী তার বাসায় কাজ করা শিশুটির একটা চায়ের কাপ ভেঙ্গে ফেলার অপরাধে তার পিঠে গরম খুন্তির সেঁক দিয়েছিলেন সেও হয়তো গ্লিসারিন ছাড়া চোখের পানি মুছছেন! এই গৃহকর্তীর এক ফোটা চোখের পানি এমন হাজার শিশুর হাজার লিটার ঘামের পানির চেয়েও অধিকতর মূল্যবান!!

মনটা খারাপ হয়ে গেল। ইচ্ছে হল ছেলেটাকে একটু ডেকে নাম ধাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করি, তাতে আমার গ্যাংটা বড় হবে! সিগন্যালে চিপস বিক্রি করা ছেলেগুলোর এতো সময় কই! এখনই যদি সিগন্যাল ছেড়ে দেয়! যতদূর সম্ভব দৌড়ে দৌড়ে চিপস বিক্রি করতে হবে! চিপস!

আমার গ্যাংদের কথা যখন চলেই আসলো তখন একটু বলি।

মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড কিম্বা শিয়ামসজিদ লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে যেই লেগুনা গুলো গুলশান, ফার্ম গেট, মিরপুর-১, মিরপুর-১০ সহ বিভিন্ন জায়গার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় তার উপরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মোটামুটি একটা জরীপ করেছি। জরীপের ফলাফল হচ্ছে, এই লেগুনাগুলোর মধ্যে প্রায় ৮০-৯০% লেগুনার টাকা কালেক্টর হিসেবে ৮-১২ বছরের শিশু কাজ করে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এরা শুধু একটা প্যান্ট পরে খালী গায়ে লেগুনার পিছনের পা দানিতে দাঁড়িয়ে ভাড়া কালেক্ট করে। সময়ে সময়ে লেগুনার ভীতরে অনায়েসে চলে যায়।
এই ধরনের কয়েকজনের সাথে আমার বেশ সখ্যতা আছে।

কাজলঃ গুলশান-১ এ লেগুনার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। উদ্দেশ্য মোহাম্মদপুর যাব। একটা লেগুনা এসে থামার সাথে সাথে যাত্রীকে নামার সুযোগ না দিয়েই সকলে পড়িমরি করে ভীতরে ওঠা শুরু করলো। লেগুনার ভীতর থেকে এক ভদ্রলোক চিৎকার করে গালি দিয়ে উঠলো, এই *** বাচ্চা সুপার ভাইজার মানুষ ঠ্যাকা, আগে নাইমা লই। বাবা কে নিয়ে এই ধরনের গালি কাজলের ভালো লাগে নাই, সে প্রতিউত্তরে বল্ল, আমারে গাইল দ্যান ক্যান? আমার কতা কে হুনে?
লোকটা কয়েকগুণ রেগে যেয়ে কাজলকে চড় শাসিয়ে বল্ল, ** ফেলাইতে সুপার ভাইজারি কর!
কাজল ভয়ে থতমত খেয়ে গেল। ব্যাপারটা আমার খুবই খারাপ লাগায় লোকটাকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিলাম। সাথে সাথে লেগুনার সকল যাত্রী কাজলের পক্ষ নিল। শেষের দিকে লোকটি মাফ চাওয়ার ভঙ্গি করে জায়গা ছেড়ে কোন মতে পালিয়ে গেল। সেইদিন থেকে কাজল আমার বেশ কাছের মানুষ হয়ে গিয়েছে। ওর সাথে দেখা হলেই খোস গল্প করি।

কাজলের মত, শরিফুল, জাহিদ, দুলাল বেশ কাছের হয়ে গিয়েছে। ঢাকা উদ্যানে ওদের স্ট্যান্ডে একদিন যাওয়ার জন্য খুব করে ধরেছে, এখনো যাওয়া হয়নি, যাব একদিন।

ধানমন্ডি ১৫ তে বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বয় কালু, যে বাবা মায়ের দেয়া শাহিন নামটি অনেক আগেই বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে।

নাম না জানা এই চিপস বিক্রেতা শিশুটির সাথে আমার কথা বলার সুযোগ হল না। গাড়ি আস্তে আস্তে এগিয়ে চলেছে, শিশুটি থেকে আমার দূরত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে। গাড়ির ভিড়ে হারিয়ে গেল, শিশুটি।

ক্যামেরা শাট ডাউন করে বড় অভিমানে বিধাতার কাছে জানতে চাই, যে শিশুটি ঐ হলুদ স্কুল বাসে জায়গা করে দেয়া পরিবারে জন্ম গ্রহন করলো সে জন্মের আগেই কি এমন পুণ্য করেছিল অথবা যে মহাখালীর বস্তির কোন পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছিল সে কি এমন পাপ করেছিল!

একজন জন্মের কিছুদিনের মধ্যে চিপস খায় আর একজন জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই চিপস বিক্রি করে!

৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×