নিজে সরাসরি মুক্তি যুদ্ধ করেন নি, মুক্তি যোদ্ধাদের সাহায্য করেছিলেন হুকুম আলি ব্যাপারী। বয়সে কিশোর হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা হুকুম আলি কে দিয়ে তথ্য আদান-প্রদানের কাজ করিয়ে নিতেন, শখ করে তাকে “লিটল মাউথ গ্রেনেড” বলে ডাকতেন যোদ্ধারা।
হুকুম যেই টিমে কাজ করতো সেখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধাই পড়ালেখা জানতেন না, হুকুম তখন ক্লাস সিক্সে পড়া ছাত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের উদেশ্য করে যেই বুলেটিন গুলো ছাপা হত, হুকুম সেগুলো পুথি পাঠের মত করে সকলের মাঝে বসে পড়ে শোনাত।
এই বুলেটিন পড়তে পড়তে কয়েকটা নাম হুকুমের মাথায় গেথে যায় টিক্কা খান, ইয়াহিয়া খান, রাও ফরমান আলি, গোলাম আযম। কোন লেখায় যখন গোলাম আযমের নাম আসতো তখন হুকুম আলি কিছুক্ষণ থেমে বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলতোঃ গোলামের বাচ্চা গোলাম আযম বলেছেন “এই সব বিশৃঙ্খলাকারী ভারতের এজেন্টদের যেকোন মুল্যে প্রতিহত করায় ধর্ম প্রাণ মুসলমানদের একমাত্র ঈমানী দায়িত্ব”!
সাথে সাথে সকলে গোলাম আযম বেঈমান, গোলাম আযম বেঈমান ধ্বনি তে এলাকা প্রকম্পিত করে তুলতো। হুকুম কোনভাবেই মেনে নিতে পারতো না একটা মানুষ তার মাতৃভূমির সাথে এতোটা বিশ্বাসঘাতকতা কিভাবে করতে পারে! বুলেটিনে একেকদিন গোলাম আযমের বিভিন্ন বিবৃতির অংশ বিশেষ পড়ে পড়ে তার প্রতি এক ধরনের ঘৃণা বোধ চরম পর্যায়ে চলে যায়।
যুদ্ধ শেষ হয়। যুদ্ধে এক হাত এবং এক পা হারায় হুকুম আলি। মুক্তিযোদ্ধাদের সকল জায়গায় বীরের খেতাবে ভূষিত করা হতে থাকে। যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মের ব্যবস্থা করা হতে থাকে। পঙ্গু হুকুম আলির কোন ব্যবস্থায় হয় না।
রুটি রুযী নিয়ে যখন চরম দুশ্চিন্তায় ছিল হুকুম আলি তখন একদিন কবিরাজ হারুন ব্যাপারীর সাথে পরিচয় ঘটে তার। কবিরাজ হিসেবে হারুন ব্যাপারীর এলাকা জুড়ে নাম ডাক তখন তুঙ্গে। কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মধ্যে তুমুল সখ্যতা তৈরি হয়।
একদিন সুযোগ বুঝে হারুন ব্যাপারীর কাছে হুকুম আলি জিজ্ঞেস করেঃ আচ্ছা, আপনে কেমনে কবিরাজী করেন?
--বিষে বিষক্ষয়!
--একটু বুঝাইয়া বলবেন?
--রোগ বালা সারাবার জন্য নতুন রোগবালা আমদানি করি।
--উস্তাদ! বুঝি নাই!
--ধর, কারো যদি পেটে অত্যধিক পিড়া হয় তবে ইসলামের শত্রু আবু জাহেলের নাম বিশবার কাগজে লিখে সেই কাগজ মাদুলির ভীতরে ঢুকিয়ে রোগীর গলায় বেঁধে দেই। এতে কি হয়? আবু জাহেল এবং ঐ পিড়া যুদ্ধ করে। আবু জাহেল যেহেতু রোগের চেয়েও বড় হারামি সেহেতু রোগ আবু জাহেলের কাছে পরাজিত হয়। রোগী সুস্থ হয়ে মাদুলি খুলে ফেলে।
এই কথা শোনার পর থেকে হুকুম আলি নিজেও কবিরাজী শুরু করে। সেই ৭২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত, বিভিন্ন রোগের সু চিকিৎসা দিয়েছে হুকুম আলি। যত বড় রোগই হোক না কেন, ওষুধ একটাই! গোলাম আযমের নাম বিশবার লিখে মাদুলি ঝুলিয়ে দেয়া, রোগ ভয়তে পালিয়েছে।
তবে আজ হুকুম আলির মন বেজায় খারাপ। গোলাম আযমের অপরাধের শাস্তি হিসেবে জেল দেয়া হয়েছে, ফাঁসি নয়! তার মানে, গোলাম আযম অতবড় বেঈমান না যতবড় বেঈমান হুকুম আলি ভেবে এসেছিলে।
দিন দিন যেই হারে নিত্য নতুন রোগ বাড়ছে তাতে গোলাম আযমে বোধ হয় আর কাজ হবে না, নতুন কারো নাম খুঁজতে হবে।
এই মুহূর্তে তার কয়েকজনের নাম মাথায় এসেছে, যারা বেইমানীর দিক দিয়ে গোলাম আযমকে ছাপিয়ে গিয়েছে। গোলাম আযম করেছিল ৭ কোটি মানুষের সাথে বেইমানী আর এরা করেছে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের সাথে।
এদের নাম মাদুলিতে ভরলে, রোগ নিশ্চয় ভয়ে পালাবেই তা সে যতবড় ডিজিটাল রোগই হোক না কেন!