জারা দৌড়ে বাবার চশমাটা এনে দিল। বাবার পাঞ্জাবিটার ডান হাতাতে একটু ভাঁজ ভেঙ্গে গিয়েছে, জারা ঝাড়ির সুরে ছোট বোন জয়া কে বল্ল, তুই চোখে কিছু দেখিস না? কিভাবে কাপড় আইরন করতে হয় তার উপরে তোর একটা কোর্স করাতে হবে। যা! আবার আইরন কর।
বাবা মখলেসুর রহমান যতই বলছেন, আর আইরন করা লাগবে না!
কে শুনে কার কথা! জারা বাবার পাঞ্জাবী আইরন করাবেই। জয়া মন খারাপ করে বাবার পাঞ্জাবী আইরন করছে।
আজ জারার মন ভালো। শুধু ভালো বললে কম বলা হবে, ভীষণ ভালো। এমন দিন বছরে খুব বেশী আসে না। আজ বাবার সাথে শপিঙয়ে যাবে। ঈদের শপিং।
মখলেসুর রহমান একটা ছোট-খাট ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির হিসাব রক্ষক হিসেবে কাজ করেন। সব সময় মেয়েদের আবদার পূরণ করতে পারেন না। তবে ঈদের কথা ভিন্ন। ঈদের আগে দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি শপিঙয়ে যান। ১০১২ রোজার ভীতরে তিনি শপিঙয়ে বের হন, তখন কাপড় চোপড়ের দাম একটু কম থাকে। রোযা বাড়ার সাথে সাথে দামও বাড়তে থাকে।
জারার পিড়াপিড়িতে মখলেসুর রহমান সাহেব তার দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছেন বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে। গত কয়েক বছর ঈদের কাপড় চোপড় নিউ মার্কেট থেকে কেনা হত। এইবার জারা গো ধরেছে, তার সকল বান্ধবীরা বসুন্ধরা সিটি থেকে সব লেটেস্ট ড্রেস কিনে। গতবার আদৃতা সানিয়া মির্জা নামের যেই থ্রি পিচ টা কিনেছিল, এক কথায় অসাধারণ। তারও আগের বার দেবদাস লেহেঙ্গা কিনেছিল ঐশী। তাকে অসাধারণ লাগছিল। সেও এইবার বসুন্ধরাতে যেয়ে এই ধরনের কোন একটা লেটেস্ট ড্রেস কিনবে।
মখলেসুর রহমান তার দুই মেয়েকে সাথে করে একটা কাপড়ের দোকানে ঢোকার সাথে সাথে একজন সেলস ম্যান এগিয়ে এসে বল্লেনঃ স্যার! আমাদের এইখানে সানি লিয়ন থ্রি পিচ আছে?
--সানি লিওন থ্রি পিচ?
--স্যার! চাইলে সানি লিওন টপসও দেখতে পারেন। অনেক গুলো কালার আছে।
মখলেসুর রহমান নিচু স্বরে তার মেয়ে জারা কে বল্লেনঃ তুই কোন ড্রেসের কথা যেন বলেছিলি ?
--বাবা! সানিয়া মির্জা! সে তো অনেক আগের কথা। আদৃতা কিনেছিল।
--ওঃ
--বাবা! এখন বোধ হয় সানি লিওন চলছে।
--তা হতে পারে! তা এই সানি লিওন টা কে রে মা?
--বাবা, আমি চিনি না! হয়তো কোন স্টার হবে!
--দাড়া! এদের কাছে শুনি। এক্সকিউজ মিঃ
সেলসম্যান দ্রুত পায়ে মখলেসুর রহমানের কাছে আসলেন।
--স্যার! কিছু বলছেন?
--হ্যাঁ! আচ্ছা, আপনাদের এইখানে সানি লিওনের আর কি কি আছে?
--স্যার! থ্রি পিচ, টপস, লেহেঙ্গা, ফতুয়া, শাড়ি। থ্রি পিচ টা বেশী চলছে।
--হুম! আচ্ছা, এই সানি লিওন টা কে?
--সরি স্যার!
--সানি লিওন টা কে? ইনি কি কাপড় ডিজাইন করেন?
--না স্যার!
--তাহলে কে?
--স্যার, আমাদের ম্যানেজার ভালো বলতে পারবেন।
মখলেসুর রহমান সাহেবের এই একটা সমস্যা। কোন কিছু মাথায় ঢুকলে সেইটার শেষ না দেখা পর্যন্ত তিনি অন্য কোন কাজ করতে পারেন না। এখন যেমন তার মাথায় ঘুরছে, সানি লিওন, সানি লিওন, সানি লিওন।
তিনি ম্যানেজারের কাছে যেয়ে বল্লেনঃ আপনার দোকানে তো দেখি সব সানি লিওন ড্রেস, তো এই সানি লিওন টা কে?
বাবার এই ধরনের প্রশ্ন করা দেখে জারার খুব লজ্জা লাগছে। সানি লিওন কে, এইটা জানা কি খুব জরুরী? গতবার যখন আদৃতা সানিয়া মির্জা ড্রেস কিনে জারা কে দেখাতে গিয়েছিল তখনও জারা জানত না সানিয়া মির্জা কে, তাতে সমস্যা কি কিছু হয়েছে?
সে নিজেও জানে না, সানি লিওন কে!
সে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বল্লঃ বাবা! সানি লিওন কে সেটা জানা লাগবে না।
মখলেসুর রহমান বল্লেনঃ কেন জানা লাগবে না? যার নামে এতো গুলো ড্রেস মার্কেটে আছে, তার সম্পর্কে অবশ্যই জানা লাগবে। ম্যানেজার সাহেব, আপনি বলেন।
ম্যানেজারঃ সানি লিওন......... সানি লিওন হচ্ছে...... হুম......... সানি.........
মখলেসুরঃ বলেন।
ম্যানেজারঃ এক্সকিউজ মি! আমি একটু ওয়াশ রুমে যাব। এসেই বলছি......
মখলেসুর রহমান সাহেব, বুঝে উঠতে পারছেন না। তার কৌতূহল বেড়ে গেল কয়েকগুণ। কে এই সানি লিওন যার নাম উচ্চারন করেই ম্যানেজার আর কিছু বলতে পারলো না।
তিনি দোকান থেকে দোকানে ঘুরছেন, সানি লিওন সম্পর্কে জানতে। সকলেই তার প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছে।
জারা জয়া বাবার পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত।
জারা জানে বাবাকে এখন থামানো যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত উত্তর না পাবেন ততোক্ষণ পর্যন্ত তিনি ছুটেই চলবেন। জারার প্রচণ্ড অপরাধ বোধ কাজ করছে, কেন যে সে বসুন্ধরাতে আসতে গেল! তা না হলে তো এই সানি লিওন ফানি লিওন সম্পর্কে বাবা এতো আগ্রহী হত না।
জারার মাথায় এখন সত্যি সত্যি খেলে বেড়াচ্ছেঃ আসলেই তো! কে এই সানি লিওন?