somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসলেই তো! কে এই সানি লিওন?

২৩ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জারা দৌড়ে বাবার চশমাটা এনে দিল। বাবার পাঞ্জাবিটার ডান হাতাতে একটু ভাঁজ ভেঙ্গে গিয়েছে, জারা ঝাড়ির সুরে ছোট বোন জয়া কে বল্ল, তুই চোখে কিছু দেখিস না? কিভাবে কাপড় আইরন করতে হয় তার উপরে তোর একটা কোর্স করাতে হবে। যা! আবার আইরন কর।

বাবা মখলেসুর রহমান যতই বলছেন, আর আইরন করা লাগবে না!
কে শুনে কার কথা! জারা বাবার পাঞ্জাবী আইরন করাবেই। জয়া মন খারাপ করে বাবার পাঞ্জাবী আইরন করছে।

আজ জারার মন ভালো। শুধু ভালো বললে কম বলা হবে, ভীষণ ভালো। এমন দিন বছরে খুব বেশী আসে না। আজ বাবার সাথে শপিঙয়ে যাবে। ঈদের শপিং।
মখলেসুর রহমান একটা ছোট-খাট ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির হিসাব রক্ষক হিসেবে কাজ করেন। সব সময় মেয়েদের আবদার পূরণ করতে পারেন না। তবে ঈদের কথা ভিন্ন। ঈদের আগে দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি শপিঙয়ে যান। ১০১২ রোজার ভীতরে তিনি শপিঙয়ে বের হন, তখন কাপড় চোপড়ের দাম একটু কম থাকে। রোযা বাড়ার সাথে সাথে দামও বাড়তে থাকে।

জারার পিড়াপিড়িতে মখলেসুর রহমান সাহেব তার দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছেন বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে। গত কয়েক বছর ঈদের কাপড় চোপড় নিউ মার্কেট থেকে কেনা হত। এইবার জারা গো ধরেছে, তার সকল বান্ধবীরা বসুন্ধরা সিটি থেকে সব লেটেস্ট ড্রেস কিনে। গতবার আদৃতা সানিয়া মির্জা নামের যেই থ্রি পিচ টা কিনেছিল, এক কথায় অসাধারণ। তারও আগের বার দেবদাস লেহেঙ্গা কিনেছিল ঐশী। তাকে অসাধারণ লাগছিল। সেও এইবার বসুন্ধরাতে যেয়ে এই ধরনের কোন একটা লেটেস্ট ড্রেস কিনবে।

মখলেসুর রহমান তার দুই মেয়েকে সাথে করে একটা কাপড়ের দোকানে ঢোকার সাথে সাথে একজন সেলস ম্যান এগিয়ে এসে বল্লেনঃ স্যার! আমাদের এইখানে সানি লিয়ন থ্রি পিচ আছে?
--সানি লিওন থ্রি পিচ?
--স্যার! চাইলে সানি লিওন টপসও দেখতে পারেন। অনেক গুলো কালার আছে।
মখলেসুর রহমান নিচু স্বরে তার মেয়ে জারা কে বল্লেনঃ তুই কোন ড্রেসের কথা যেন বলেছিলি ?
--বাবা! সানিয়া মির্জা! সে তো অনেক আগের কথা। আদৃতা কিনেছিল।
--ওঃ
--বাবা! এখন বোধ হয় সানি লিওন চলছে।
--তা হতে পারে! তা এই সানি লিওন টা কে রে মা?
--বাবা, আমি চিনি না! হয়তো কোন স্টার হবে!
--দাড়া! এদের কাছে শুনি। এক্সকিউজ মিঃ
সেলসম্যান দ্রুত পায়ে মখলেসুর রহমানের কাছে আসলেন।
--স্যার! কিছু বলছেন?
--হ্যাঁ! আচ্ছা, আপনাদের এইখানে সানি লিওনের আর কি কি আছে?
--স্যার! থ্রি পিচ, টপস, লেহেঙ্গা, ফতুয়া, শাড়ি। থ্রি পিচ টা বেশী চলছে।
--হুম! আচ্ছা, এই সানি লিওন টা কে?
--সরি স্যার!
--সানি লিওন টা কে? ইনি কি কাপড় ডিজাইন করেন?
--না স্যার!
--তাহলে কে?
--স্যার, আমাদের ম্যানেজার ভালো বলতে পারবেন।

মখলেসুর রহমান সাহেবের এই একটা সমস্যা। কোন কিছু মাথায় ঢুকলে সেইটার শেষ না দেখা পর্যন্ত তিনি অন্য কোন কাজ করতে পারেন না। এখন যেমন তার মাথায় ঘুরছে, সানি লিওন, সানি লিওন, সানি লিওন।

তিনি ম্যানেজারের কাছে যেয়ে বল্লেনঃ আপনার দোকানে তো দেখি সব সানি লিওন ড্রেস, তো এই সানি লিওন টা কে?

বাবার এই ধরনের প্রশ্ন করা দেখে জারার খুব লজ্জা লাগছে। সানি লিওন কে, এইটা জানা কি খুব জরুরী? গতবার যখন আদৃতা সানিয়া মির্জা ড্রেস কিনে জারা কে দেখাতে গিয়েছিল তখনও জারা জানত না সানিয়া মির্জা কে, তাতে সমস্যা কি কিছু হয়েছে?
সে নিজেও জানে না, সানি লিওন কে!

সে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বল্লঃ বাবা! সানি লিওন কে সেটা জানা লাগবে না।
মখলেসুর রহমান বল্লেনঃ কেন জানা লাগবে না? যার নামে এতো গুলো ড্রেস মার্কেটে আছে, তার সম্পর্কে অবশ্যই জানা লাগবে। ম্যানেজার সাহেব, আপনি বলেন।
ম্যানেজারঃ সানি লিওন......... সানি লিওন হচ্ছে...... হুম......... সানি.........
মখলেসুরঃ বলেন।
ম্যানেজারঃ এক্সকিউজ মি! আমি একটু ওয়াশ রুমে যাব। এসেই বলছি......

মখলেসুর রহমান সাহেব, বুঝে উঠতে পারছেন না। তার কৌতূহল বেড়ে গেল কয়েকগুণ। কে এই সানি লিওন যার নাম উচ্চারন করেই ম্যানেজার আর কিছু বলতে পারলো না।
তিনি দোকান থেকে দোকানে ঘুরছেন, সানি লিওন সম্পর্কে জানতে। সকলেই তার প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছে।

জারা জয়া বাবার পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত।

জারা জানে বাবাকে এখন থামানো যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত উত্তর না পাবেন ততোক্ষণ পর্যন্ত তিনি ছুটেই চলবেন। জারার প্রচণ্ড অপরাধ বোধ কাজ করছে, কেন যে সে বসুন্ধরাতে আসতে গেল! তা না হলে তো এই সানি লিওন ফানি লিওন সম্পর্কে বাবা এতো আগ্রহী হত না।

জারার মাথায় এখন সত্যি সত্যি খেলে বেড়াচ্ছেঃ আসলেই তো! কে এই সানি লিওন?



৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×