মিরা, পারভেজকে সেই তখন থেকে বোঝাবার চেষ্টা করছে, কথা বলার সময় বাবার সাথে কোন রকম আর্গুমেন্টে যাবে না। বাবার প্রতিটা প্রশ্নে তোমার উত্তর যেন শুধু হ্যানা এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
পারভেজ বরাবরের মত মিরার কথায় পাত্তা দেয় নি। সে গলা উঁচিয়ে বলেছে, কেন শুধু হ্যাঁ না এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে? তিনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন “তুমি তো পুরাই বেকুব”
জবাবে আমি কি বলবো, হ্যাঁ ?
তিনি যদি ডাবল রেগে যেয়ে বলেন, কি বললে? তুমি বেকুব?
আমি তখন কি বলবো, না?
মিরা পারভেজকে থামিয়ে দিয়ে বল্লঃ বাবা তোমাকে বেকুব বলবেন কেন? একজন ফটোগ্রাফারকে বেকুব বলার মত বেকুব আমার বাবা নন। যত টুকু বলা উচিৎ ততটুকুই বলবে। আর হ্যাঁ! বাবার সাথে কথা বলার সময় অবশ্যই মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখবে।
--আর কি কি করতে হবে?
--আর কিছুই করতে হবে না, আগামী কাল সকাল ঠিক ৯টায় আমাদের বাসায় আসতে হবে। বাবা দশটায় বাসা থেকে বের হয়ে যাবেন।
গুলশান-১ এ মিরাদের এই প্রাসাদতুল্য বাড়িটার ভীতরে কোনভাবেই পারভেজের সি এন জি প্রবেশ করতে দিচ্ছে না দারোয়ান। দারোয়ানের একই প্রশ্নঃ কার কাছে যাইবেন?
পারভেজের কেবলই ইচ্ছে হচ্ছে এক হেস্কি টানে এই মোছওয়ালা দারোয়ানের এক গুচ্ছ মোছ উঠিয়ে নিতে। তাতে বেশ হুলস্থূল একটা ঘটনা ঘটে যাবে। মিরার বাবা রেগে তেড়ে আসতে পারে। মিরা হয়তো, কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই কেঁদে দিবে। এই মেয়েটা এই একটা কাজই ভালো পারে!
--মাথায় চুল কম, এক ভদ্রলোক আছেন না! কি যেন নাম? কি যেন নাম? ওঃ মনে পড়েছে, সামছুল সাহেবে! ওনার কাছে যাব।
--স্যারের লগে কথা হইছে?
--না! স্যারের মেয়ের সাথে কথা হইছে।
দারোয়ান আর বেশীদূর এগুলো না। পারভেজ কলিং বেলে চাপ দিতেই মিরা এসে দরজা খুল্ল। মিরা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বল্লঃ এখনো লেট? তোমার হাতে কি এইটা?
--এ্যালবাম!
--এ্যালবাম কেন? আশ্চর্য! বাবা তোমাকে দিয়ে কোন ফটোগ্রাফির কাজ করাবেননা, নিশ্চিত থাক। যেভাবে যেভাবে বলেছিলাম ঠিক সেইভাবে বলবে।
--ঠিক আছে।
মিরার বাবা সামছুল সাহেব ঝানু গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। তাজরিন ফ্যাশান, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি এই ধরণের কত্ত ঘটনা ঘটে গেল, কিন্তু সামছুল সাহেবের ব্যবসা তিল পরিমান কমে নাই। তার গার্মেন্টসে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বিভিন্ন সময় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে তিনি শক্ত হাতে তা দমন করে বি জি এম ই এ এর নেতাদের কাছে বেশ প্রশংসিত।
সামছুল সাহেব মিরাকে একটু রুমের বাইরে যেতে বলে চোখ দুটি কোটর থেকে বের করে বল্লেনঃ তোমার নামই তাহলে পারভেজ?
--জি না! আমার নাম মোঃ পারভেজ হাসান।
--ঐ তো একই কথা! যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন।
--জি! যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন!
--কি কর তুমি?
--ছবি তুলি?
--হুম! মিরা অবশ্য বলেছিল। তা , কিসের ছবি তুল ?
--ছাগল, গরু, ঘাস, ফুল, ফল, নদী, নালা, খাল-বিল, ভালো মানুষের হাসি, খারাপ মানুষের হাসি......
--তার মানে, ক্যামেরাম্যান?
--জি না! ফটোগ্রাফার!
--ঐ তো একই কথা! যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন।
--জি! যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন!
--কিছুদিন আগে তো বিশাল এক অব্জেক্টের হাট বসেছিল সাভারে, রানা প্লাজা! হুহ! তুমি ছবি তুল নাই?
--জি না! আমি রানা প্লাজা ধ্বংসের ফলে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছিল তার ছবি তুলেছিলাম।
-- ঐ তো একই কথা! যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন। যতসব ছোট লোকের দল।
--জি! যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন!
--তা আমার মেয়েকে কিভাবে বশ করলে? ছবি তুলে?
--আমি বশ করিনি। ও স্বেচ্ছায় বসে এসেছে।
--বিয়ের পর আমার মেয়েকে কি খাওয়াবে শুনি?
--বিয়েই তো করবো না, খাওয়ানোর প্রশ্ন আসছে কিভাবে!
--আমি কোটিপতি না হয়ে বিয়ে করবো না।
--এই সব ছোট লোকদের ছবি তুলে কোটি পতি হবে? হাহাহাহাহাহ!
--স্যার! আমি বড়লোকদের ও ছবি তুলি। দেখবেন?
পারভেজ তার হাতে থাকা এ্যালবাম টা সামছুল সাহেবের কাছে নিয়ে গেল। সমস্ত এ্যালবাম জুড়ে ন্যুড ছবি। মডেল হিসেবে বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গিতে তার মেয়ে মিরা।
সামছুল সাহেব রাগে থর থর হয়ে কাঁপছেন।
পারভেজ অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে বল্লঃ একদম উত্তেজিত হবে না স্যার! একদম উত্তেজিত হবেন না! আপনার মেয়ে স্বেচ্ছায় আমার ক্যামেরায় ধরা দিয়েছিল। স্যার, আপনাকে বলেছিলাম না, আমি কোটিপতি হলে বিয়ে করবো। সিদ্ধান্তটা অনেক ভেবে চিন্তে নিয়েছিলাম। আজ আমি কোটিপতি হলে কালই আমার বিয়ের শানাই বাজবে। কন্যা রেডি। রানা প্লাজার হত্যা যজ্ঞে এক পা হারান বুলবুলি। অত্যন্ত ভালো মেয়ে। সমস্যা শুধু একটা পা নাই। শুনেছি টাকা হলে নাকি নকল পা-ও লাগানো যায়।
--তুমি কি বলতে চাও? বাস্টার্ড!
--উঃ হু! স্যার, আমার নাম পারভেজ! আমি আপাতত এক কোটি টাকা চাই। এই টাকা না দিলে, একটা রিপোর্ট যাবে মিডিয়াতে, হেড লাইনটা ঠিক করা আছে “বস্ত্র ব্যবসায়ী সামছুল সাহেবের মেয়ে যখন বস্ত্রহীন!”
--তোমাকে আমি খুন করবো!
--লাভ নাই। কত মানুষ কে আপনি খুন করেছেন তার হিসেব হয়তো আপনি জানেন না। এই বেহিসেবের খাতায় আর একটা নাম যুক্ত হলে এমন কিছু হবে না স্যার! টাকা কিন্তু ক্যাশে নিব।
সামছুল সাহেব তার মোবাইল ঘেঁটে ম্যানেজারের নাম্বার বের করলেন। এই নিয়ে তিনবার কল করলেন, ম্যানেজার ফোন ধরছে না। হারামজাদা গেল কোথায়?