somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের প্রধান দুই নেত্রীও তো সন্তানের জননী, তাদের অনুভূতি খুব জানতে ইচ্ছে হয়!

২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিভিন্ন ছুটিতে বাড়ি গেলে এখানে ওখানে যাওয়ার একমাত্র বাহন হচ্ছে, মোটরসাইকেল। ঈদের আগের দিন বিকালে এলাকার বন্ধুরা অপেক্ষা করছে বাস টার্মিনালে, কয়েকজনের ঘন ঘন ফোন “এই, চা তো ঠাণ্ডা হয়ে গেল! তাড়াতাড়ি আয়”। তড়িঘড়ি করে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হলাম, পথের মাঝে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ চেকপোস্ট। বাঁশিতে তে ফুঁক দেয়ার সাথে সাথে রাস্তার এক পাশে দাঁড়ালাম।

একজন কদাকার পাকস্থলীর অধিকারী পুলিশ সদস্য এসে আমার মোটরসাইকেল থেকে কিছু না বলে চাবিটা ছো মেরে নিয়ে বল্লেন, ঐ যে ঐখানে স্যারের সাথে কথা বলেন।

এই রোদহীন বিকালেও সানগ্লাস পরে স্যার (?) একটা মোটর সাইকেলে নিতম্ব গলিয়ে আয়েশিভাবে বসে পা নাচিয়ে নাচিয়ে মোটর সাইকেলের কাগজপত্র চেক করছেন। স্যার কে ঘিরে অসংখ্য মোটরসাইকেল। স্যারের কাছে যেয়ে কয়েকবার বল্লাম, এক্সকিউজ মি! এক্সকিউজ মি!
স্যার মাথা তুলে তাকালেন না। কদাকার লোকটি বল্লেন, আপনার গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে আসেন।
কাগজ পত্র নিয়ে স্যারের সামনে ধরলাম! স্যার মাথা তুলে বল্লেন, সিরিয়াল আছে। সিরিয়াল ভেঙ্গে আপনারটা আগে দেখতে পাড়ি না।
কিছুটা আমতা আমতা করে বল্লাম, তাতো অবশ্যই না! অবশ্যই না!

যেই কাগজপত্রে একটু সমস্যা আছে তাকে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন পুলিশ সদস্যের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। মোটরসাইকেলওয়ালা পকেট হাতড়ে কিছু টাকা বের করে তাকে দিয়ে চাবি নিয়ে ভেগে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে পুরা পরিস্থিতি আঁচ করতে পারলাম।
বেশ অনেকটা সময় পর, আমার কাগজ হাতে নিয়ে ভুরু কুঁচকে চেক করা শুরু করলেন। শো-রুম থেকে কেনা বাইক, কাগজপত্র অরিজিনাল। সমস্যা পাওয়ার কথা নয়।
তিনি কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে?
--না!
--ড্রাইভিং লাইসেন্স সারা মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন কেন? আর মোটরসাইকেল চালাতেগেলে পায়ে জুতা পরা লাগে। আপনি তো স্যান্ডেল পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঐ যে ওনার সাথে কথা বলেন।
তিনি টাকা কালেক্টর পুলিশের কাছে যেতে বল্লেন।

এমন সময় এলাকার পরিচিত ছাত্রলীগ নামধারী এক বড় ভাই যার বাইকের সামনে “ছাত্রলীগ” স্টিকার মারা, চেকপোস্টের কাছে এসে দাঁড়ালেন।
স্টিকার ভাই স্যারের সামনে হাত বাড়িয়ে দিলেন, কি ব্যাপার ওসি সাহেব! কাল ঈদ আর আজকে কি লাগায়ছেন এইসব? পোলাপাইনদের একটু ফুর্তি করতে দেন। এখন বাইক ধরাধরি করলে হবে?
ওসি সাহেব পা নাচানি থামিয়ে বল্লেন, কি করব বলেন! উপরের অর্ডার।
--আপনাদের উপরে যে কারা থাকে তাদের যদি ** ** যাইত তাহলে ভাল হইত।
এই ধরনের গালাগালি শুনেও, ওসি সাহেব বোকার মত নির্বিকার হাসলেন।

চান্স পেয়ে স্টিকার ভাইয়ের কাছে এগিয়ে গেলাম, ভাই ভালো আছেন?
--আরে তুমি এইখানে? তোমার গাড়ি আটকিয়েছে নাকি?
--হুম।
তিনি দুই মিনিটের মধ্যে গাড়ির চাবি আমার হাতে তুলে দিয়ে বল্লেন, কোথায় যাবে?
-টার্মিনালে।
--আমিও, চল যাই।
বাইক চালাতে চালাতে স্টিকার ভাইকে প্রশ্ন করি, আপনার গাড়ির কি কাগজ আছে ,ভাই?
--কাগজ? হাহাহাহ! তাহলে আর দল করি কেন?
--আপনার স্টিকারটা কিন্তু বেশ ভালো।
--তায়? কেন্দ্র থেকে কয়েকটা নিয়ে এসেছিলাম।
--ভাই, সামনেরবার যদি দল বদলায় তখনও স্টিকার থাকবে?
--মাথা খারাপ তোমার? তখন থাকবে, সাংবাদিক! হাহাহাহাহা।
খুব ইচ্ছে হল ভাইয়ের কাছ থেকে একটা স্টিকার নিই। কিন্তু কেন জানি চাওয়া হয় নি।

আজ সকালে সংবাদপত্র খুলে একটা সংবাদ দেখে কেবলই মনে হচ্ছে, ঈশ! কেন যে সেদিন একটা স্টিকার নিলাম না!
রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বিবেচনায় আলোচিত ১১৪টি খুনের মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার । এ ছাড়া আরও ১৬৩টি মামলার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যেগুলো প্রত্যাহার বা আসামিদের নাম বাদ দেওয়া হতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

আজকের সভায় ১৬৬টি নতুন মামলা এবং আগে নাকচ হয়ে যাওয়া ১১১টি মামলা নিয়ে আলোচনা হবে বলে কমিটির সূত্র জানিয়েছে।

নতুন ১৬৬টি মামলার মধ্যে ১১২টি প্রত্যাহারের বিষয়ে জেলা কমিটি সুপারিশ করেনি। ৩৬টি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন কমিটির বেঁধে দেওয়া সময় অর্থাৎ ২০০৯ সালের ১২ জুলাইয়ের মধ্যে করা হয়নি। নতুন মামলাগুলোর মধ্যে হত্যা মামলা ৬০টি। এ ছাড়া রয়েছে ধর্ষণ, ঘুষ লেনদেন, সরকারি টাকা আত্মসাৎ, ডাকাতি, অবৈধভাবে অস্ত্র নিজ দখলে রাখার অভিযোগ, কালোবাজারি, অপহরণ, জালিয়াতি, বোমা বিস্ফোরণ, চুরি ও অস্ত্র মামলা।
বর্তমান সরকারের আমলে কমিটির ৩০টি বৈঠকে এ পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ১১৩টি মামলা কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে সাত হাজার ১০১টি মামলা সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রত্যাহারের আদেশ দিয়েছে জাতীয় কমিটি। ফলে খুনি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, ধর্ষকসহ প্রায় এক লাখ অভিযুক্ত ব্যক্তি অব্যাহতি পেয়েছেন বা পাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন।

শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় এই ধরণের কুখ্যাত খুনি,ধর্ষণকারীকে মুক্ত করে দিলে দেশে আইনের শাসন বলে আর অবশিষ্ট কিছু থাকবে না।

খুনি শুধু রাজনৈতিক একটা দলের স্টিকার নিয়ে আবার নতুন উদ্যমে খুন করবে, ধর্ষণকারী তার লালসা পুরনে এই স্টিকারকেই ব্যবহার করবে।
যেসব খুনের মামলাগুলো এই সরকারের আমলে হয়েছে সেইগুলো প্রত্যাহার করা আইনের শাশনের উপরে মানুষের আস্থা অনেকাংশে কমিয়ে দিবে।
শুধু এই সরকারের আমলেই নয় বিগত সরকারের আমলেও এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে, আর এই সরকার সেই রেকর্ড ভেঙ্গেছে মাত্র!

২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারও ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বলে পাঁচ হাজার ৮৮৮টি মামলা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং ৯৪৫টি মামলা থেকে কিছু আসামিকে অব্যাহতি দেয়। এ প্রক্রিয়ায় মোট ৭৩ হাজার ৫৪১ জন অভিযুক্ত খালাস পান। এর মধ্যে অনেক খুন, ডাকাতি, ধর্ষণের মামলাও ছিল।

যে মা তার সন্তানকে হারিয়ে,বিচারের আশায় বুক বেঁধে ছিল, তার চোখের সামনে যখন খুনি ঘুরে ফিরবে তখন তার অনুভূতি কেমন হবে?

আমাদের প্রধান দুই নেত্রীও তো সন্তানের জননী, তাদের অনুভূতি খুব জানতে ইচ্ছে হয়!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×