আবার বছর কুড়ি পরে না হলেও চোদ্দ পনের বছর তো হবেই, আমি কলেজ স্ট্রীটের কফি হাউসে ঢুকলাম।গতকাল বই পাড়ায় গিয়েছিলাম মেয়ের জন্যে দুটো বই কিনতে।কি যে এক অদৃশ্য আকর্ষণ অনুভব করলাম, ভূতগ্রস্তের মত প্রবেশ করলাম কাফেটিতে।আনন্দের সঙ্গে দেখলাম, একটুও পাল্টায়নি আমার কফি হাউস।কি সহজে আমরা বলে ফেলি না, আমার কফি হাউস।এক সময় এখানে এত সময় কেটেছে যে, 'আমার' না বলে থাকি কি করে।বললাম বটে একটুও পাল্টায়নি, সত্যি কি তাই? কিছু না কিছু তো পাল্টাতে বাধ্য।তবু আপাত দৃষ্টিতে একই আছে সে।প্রথমে ঢুকেই তো দেখলাম ঘোড়ান সিঁড়ির নীচে সেই সিগারেটের দোকানটি এখনও বর্তমান।এক তলা দো-তলার ভাগাভাগি একই রকম।টেবিল চেয়ার একই রকম।হ্যাঁ, কিছু প্লাস্টিকের চেয়ার যুক্ত হয়েছে।বেয়ারারদের একই রকমের পোষাক, একই রকমের উষ্ণ আতিথেয়তা।একেবারে শেষ মাথায় দুই চেয়ারের একটা ছোট্ট টেবিল পেয়েছি।আমি খুশী।কিছুক্ষণ পরে অন্য চেয়ারটাও টেনে নিল পাশের টেবিলে আসা নতুন অতিথি।প্রথমে তো বসেই আছি, বসেই আছি।কেউ আসে না।অনেকক্ষণ সেই ডুবন্ত মানুষের সাহায্যের আকুতির মত উর্ধ্ব বাহু হয়ে বেয়ারারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলাম।আধ ঘন্টা বসে থাকার পর কেউ এলো।এখানে এটাই মজার।তাড়া করার জন্যে তো এখানে কেউ আসে না।যৌবন কালে বা ছাত্রাবস্থায় পকেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকার কথা নয়।তখন বান্ধবী বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়াটাই আসল উদ্দেশ্য।তাই দেরী করে অর্ডার নিতে আসাটা একটা উপরি পাওনা।এমনি তো আর এখানে বসতে দেবে না তাই চাঁদা তুলে কিছু না কিছু নিতেই হয়।আমি আমাদের সময়ের কথা বললাম অবশ্য।এখনকার ছেলে মেয়েদের কথা ঠিক বললাম কি না জানি না।তাদের তো এখন বাতানুকুল কাফেতেই জমায়েত বেশী।এখানে এখনও বেশ সস্তা।স্যান্ডউইচ চেয়েছিলাম, বেশ কিছুক্ষণ পর এসে জানালো ওটা পেতে দেরী হবে।কাল বিলম্ব না করে এখানকার সেই বিখ্যাত পকোড়া দিতে বলে দিলাম।এক প্লেট দশ টাকা।আর এক কাপ কফি আট টাকা।ভাবা যায়? এখানে সবাই জোড়ায় বা দলে এসেছে।সেটাই স্বাভাবিক।আমি একা বোকা বোকা মুখে কিছুটা চোর চোর ভাব।অবশ্য আমার বাঁ পাশের টেবিলে একটি মানুষ একা বসে খস্ খস্ করে পাতার পর পাতা লিখে যাচ্ছেন।আমার এক মিষ্টি বান্ধবী প্রেসিডেন্সীর ছাত্রী।ও জানত আমি কোন একদিন বই কিনিতে এ পাড়ায় আসব।বলেছিল, আমায় জানাবেন আমি থাকব।আজ এসে খোঁজ করে জানা গেল তিনি আজ বাড়িতে বসে আছেন, আজ আসেনইনি।আমি বললাম, বাহ্ মচৎকার।বান্ধবী হেসে বলল, বলেছিলাম আগে জানাতে, যেমন কর্ম তেমনি ফল।কিছুদিন আগে এই কফি হাউসের দেড়শ বছরের জন্মদিন পালিত হয়েছে, ধূমধাম করে।ট্রাম লাইন ধরে ধীর পায়ে ফিরে আসতে আসতে চোখে পড়ল, ইউনিভার্সিটির বয়সও দেড়শ পেরিয়েছে।আমি মনে মনে ভাবলাম, দুই প্রাচীন বন্ধু পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এই শহরটাকে বয়সে বুড়ি আর চলনে ছুঁড়ি হতে দেখছে, আর নির্ঘাত মুচ্কি মুচ্কি হাসছে।
আলোচিত ব্লগ
আমাদের জাতির কপালে শনি আছে

একাত্তরে যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে তারা বলেছে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না, সুতরাং ভারতের অধীন হওয়ার চেয়ে পাকিস্তানের অধীন থাকা ভালো। তারা মনে করেছে অধীকাংশ নাগরিক তাদের দলে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?
হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?
জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।
জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।
মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[
স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।