somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমিয়াখুম বিজয়ের গল্প - বান্দরবান ভ্রমণ দ্বিতীয় পর্ব

২৬ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরু হল সূর্যের আলো ফুটতেই। সকালে খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম ৭.৩০ এর মধ্যেই। আবার ও ভাত আর মুরগি, সাথে ডাল। পথে খাওয়ার জন্য বিস্কিট কিনে নিলাম সবাই কারণ মাঝে খাওয়ার জিনিস কেনার মত জায়গা আর পাওয়া যাবে না। হালকা ওষুধপত্র ও কেনা হল।







তিন্দু থেকে রেমাক্রির পথে

৮ টার দিকে আবার নৌকা ভ্রমণ শুরু। পথে বড় পাথরে যা দেখলাম অবর্ণনীয়। পাহাড় থেকে পাথর ভেঙ্গে নদীতে পড়ে আছে। এর মাঝে সবচেয়ে বড় যে পাথরটা ওটার নাম রাজাপাথর। বড় পাথরের ধারে চাইলে ক্যাম্পিং ও করা যায়। এবার ও বেশ কিছু জায়গায় নামতে হল পানি কম থাকায়। মজার ব্যাপার সকালের পানি যত ঠাণ্ডা হবে ভেবেছিলাম তারচেয়ে অনেক গরম ছিল। নৌকার তলা প্রায়ই নিচের পাথরে আটকে যাচ্ছিল। মাঝি দক্ষতার সাথে তার মাঝ দিয়েই নৌকা বেয়ে চলল।



দেবতার পাহাড়





বড় পাথরের কিছু দৃশ্য



রাজাপাথর

প্রায় দুঘণ্টা লাগল রেমাক্রি পৌঁছাতে। রেমাক্রি গিয়ে সবচেয়ে ভাল যে কাজটা করেছি তা হল একজোড়া স্যান্ডেল কেনা। ১৫০ টাকা দিয়ে একজোড়া বার্মিজ স্যান্ডেল কিনেছিলাম। পরে বুঝেছি ওটা না থাকলে পাহাড়ে ওঠার সময় কি বিপদে পড়তে হত।

এখন শুরু হল আমাদের আসল ট্যুর। রেমাক্রি থেকে হাঁটা শুরু হল। রাস্তা বেশ ভালই, পাহাড়িদের ভাষায় সমতল আর আমাদের ভাষায় পাথুরে রাস্তা। দুপাশে পাহাড়, মাঝখানে রেমাক্রি খাল। পানির গভীরতা নেই, হাঁটু পানি খুব বেশি হলে। পাহাড়ের গা ধরে এগিয়ে গেলাম আমরা। প্রায় পনে দুঘণ্টা পর পৌঁছালাম নাফাখুম ঝর্ণায়। জীবনের প্রথম নিজের চোখে দেখা প্রাকৃতিক ঝর্ণা, এক কথায় অসাধারণ। অনেকদূর থেকেই ঝর্ণার আওয়াজ পাওয়া যায়। সবাই সেখানে হালকা খাওয়া দাওয়া সারলাম। কেউ কেউ গোসল করল ঝর্ণার পানিতে। শীতকালে নাফাখুম বেশ ছোট দেখালেও বর্ষায় এর আসল রূপ দেখা যায়।



রেমাক্রি থেকে যাত্রার শুরু



নাফাখুমের পথে







নাফাখুম

নাফাখুমে ঘণ্টা খানেক কাটানোর পর আবার হাঁটা শুরু হল। পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটার অনুভূতিই অন্যরকম। নিজেকে টারজান মনে হয়। B-) B-) সবার মাঝে কিছুটা উত্তেজনা, কিছুটা অজানার ভয়। এখনকার সমতল আগের চেয়ে একটু খারাপ এবং কিঞ্চিত বিপদজনক। ঠিক করা ছিল থাকা হবে জিন্না পাড়ায়। প্রায় ৩ ঘণ্টা হাঁটার পর বিকেলের দিকে সেখানে পৌঁছালাম। সেটা ছোটখাটো একটা টিলার উপরে। সেখানে উঠতেই জিহ্বা বের হয়ে গেছে সবার। শুনলাম কিছুদূরেই একটা পাড়ায় নাকি নেটওয়ার্ক আছে। ওটা একটা নতুন পাড়া। ওখানেই যাব ঠিক করলাম। যেতে যে অবস্থা হল সবার বলাই বাহুল্য। মাঝে একটা বিশাল পাহাড় টপকিয়ে সেখানে যেতে হয়। ওঠানামার রাস্তা দুটাই বেশ খাড়া। নামার সময় দৌড়িয়ে নামা বুদ্ধিমানের কাজ। তাহলে পায়ে চাপ কম পড়ে, পিছলাবার ভয়ও কম থাকে। কিভাবে উঠেছি ভাবতে এখনও ভয় লাগে। আর পিঠের ব্যাগটাকে মনে হচ্ছিল ১০০ কেজি ওজনের বোঝা। পাড়াটা যে পাহাড়ের উপর সেটায় ওঠার ট্রেইল বেশ ভাল, তবে ওঠার কষ্ট তো একই। পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। হতাশার কথা সেখানে গিয়েও আমরা দেখলাম নেটওয়ার্ক নেই। কারো শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি অবশিষ্ট নেই।



জিন্না পাড়া থেকে নতুন পাড়া



দেখতে সুন্দর হলেও উঠতে গেলে আর সুন্দর লাগে না

সাদেক ভাই ইতিমধ্যে থাকার জায়গা ঠিক করে ফেলেছে। উঠলাম পাড়ার কারবারির বাসায়। কারবারি হল পাড়ার প্রধান। ওখানে গিয়ে সবাই যেটা করলাম সেটা হল ব্যাগগুলো ছুঁড়ে ফেলে বারান্দাতেই শুয়ে কাত। যাই হোক সেরাত সেখানেই কাটালাম। রাতে দেখলাম আশপাশের সব বাড়ির মানুষজন একত্রে জড়ো হয়ে বাংলা মুভি দেখছে। সিনেমার নাম বাঘা ও বাঘিনী। এই সিনেমাও আমার কাছে অনেক বিনোদনের মনে হচ্ছিল তখন। আমাদের যখন এই দুরবস্থা বেচারা সাদেক ভাই তখন রান্নার আয়োজন করছিল। পাড়া থেকে বনমুরগি, চাল আর চালকুমড়া কিনতে হয়। মুরগির দাম প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা। থাকা খরচ আগের মতই জনপ্রতি ১০০ টাকা। রাতে সেদিন খেলাম রাক্ষসের মত। খেয়ে আর দেরি না করে সাথে সাথেই ঘুমিয়ে গেলাম। সামনে দীর্ঘ যাত্রা অপেক্ষা করছে।

পরবর্তী পর্বে থাকছে আমিয়াখুম ঝর্ণা আবিষ্কার।

অন্যান্য পর্বের লিঙ্কঃ

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:০২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×