somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একই যাত্রা ভিন্ন ফল...বাংলাদেশের দুই অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকের ব্যবচ্ছেদ!

০১ লা জুন, ২০১২ রাত ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সেনাবাহিনীর সিপাহিরা অফিসারদের হত্যা করে একটা বিদ্রোহের মাধ্যমে। নিহত হন মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফসহ অনেকে। সেই বিদ্রোহের অপরাধে কোন সিপাহীর বিচার হয়নি; হয়নি কোর্ট মার্শাল। অন্যদিকে সেইদিন অফিসার হত্যাকারী সিপাহীদের ট্রাক মিছিল করে "সিপাহী জনতা ভাই ভাই" শ্লোগান দিতে সহায়তা করে ঘটনাকে সিপাহী জনতার বিপ্লব হিসাবে মহিমান্বিত করে রাষ্ট্রীয় ভাবে অফিসার হত্যাকান্ডকে পুরষ্কৃত করা হয়। সেই থেকে ৭ই নভেম্বর মহান বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত হয়।

কিন্তু ২০০৯ সালের ২৫শে ফ্রেব্রুয়ারী বিডিআর এর সিপাহীরা বিদ্রোহ করে আর মেরে ফেলে সেনা কর্তাদের। একটা মিছিল করে "বিডিআর জনতা ভাই ভাই" শ্লোগানও দেওয়া হয়। কিন্তু পরিকল্পনা সফল হয়নি বলে বিডিআররে সিপাহীদের বেঘোরে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে।

ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হলেও - ফলাফল হলো সম্পূর্ন ভিন্ন।


আরকেটা গুরুত্বপূর্ন ঘটনাক্রম ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলেও একই ভাবে ভিন্ন ফলাফল হয়েছে।

প্রথম ঘটনা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে দেশের নেতা হওয়া -

ঘটনাক্রম এভাবে সাজানো যায় -

১) একজন রাষ্ট্রপতি ( এই ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমান) সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হন। (দৃশ্যত জিয়াউর রহমানের এই হত্যাকান্ডে কোন ভুমিকা ছিলো না।)

২) রাষ্ট্রপতি হত্যার পর সেই দলেরই একজনকে ( এই ক্ষেত্রে হবে খন্দকার মুশতাক আহমেদ) পুতুল বানিয়ে পিছনে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় নেওয়া হয়।

৩) পরে সামরিক আইন জারীর পর একজন বিচারপতি ( এখানে হবে আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম)কে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে সেনাপ্রধান (জিয়াউর রহমান) ক্ষমতা দখল করেন।

৪) ক্ষমতা দখলের পরই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষনে ৬ মাসের মধ্যে নিব্যাচন দিয়ে গনতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সেনাশাসক ব্যারাকে ফিরে যাবার অংগীকার করেন।

৫) ক্ষমতায় আসার পরপরই ৭১ এর পরাজিত শক্তিকে পুর্নবাসনের প্রকল্প নেওয়া হয়। যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধ করা হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লুকোচুরি। বিচারের নামে প্রহসন করে তাহেরসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে হত্যা করে সেনাবাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধামুক্ত করার একটা প্রকল্প শুরু করেন - সেখানে মঞ্জুর এবং মীর শওকতের মতো সহযোদ্ধাদের বাইরে পাঠিয়ে চরিত্রহীন পাকিস্তান ফেরত এরশাদকে সেনাপ্রধান বানিয়ে সেনাবাহিনীকে অমুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্বে তুলে দেন।

৬) রাষ্ট্রপতির হত্যাকারী সেনাকর্তাদের কোর্ট মার্শাল না করে দুতাবাসে চাকুরী দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়।

৭) কিছুদিন পর "জনগনের দাবীর" মুখেউনি বিচারপতিকে বঙ্গভবনের পশ্চাৎদ্বার দিয়ে বের করে দিয়ে নিজেই প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন।

৮) একটা গনভোট (হ্যাঁ/না) করে ৯৮% হ্যাঁ ভোট পেয়ে নিজেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করেন।

৯) শুরু হয় রাষ্ট্রীয় সম্পদ আর জনবল ব্যবহার করে রাজনীতিতে প্রবেশ।

১০) ঘোষিত হয় ১৯ দফা কর্মসূচী।

১১) বিভিন্ন দলছুটদের নিয়ে "জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট" তৈরী হয়। সেখানে ধর্মকে রাজনীতি ব্যবহারের বিষয়টা গুরুত্ব দেওয়া হয়।

১২) জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টকে "জাগদল" (জাতীয়তাবাদী গনতান্ত্রিক দল) এ রূপান্তিরিত করা হয়।

১৩) অবশেষে দলের নাম আধুনিকায়ন করে (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি (ইংরেজী) করে জিয়াউর রহমান তার চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন।


অন্য ঘটনাটা নীচে দেওয়া হলো - যা সেনাশাসক লে: জে: হোমো এরশাদের ক্ষমতা দখল ও রাজনীতিতে লটকে থাকার ঘটনা- খুব খেয়াল করে পড়তে হবে। কারন ঘটনা দুইটা এতো বেশী মিলে যায় যে - মনে হতে পারে পুরোটাই কপি/পেস্ট করা হয়েছে।

ঘটনাক্রম এভাবে সাজানো যায় -

১) একজন রাষ্ট্রপতি ( এই ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান) সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হন। (দৃশ্যত এরশাদের এই হত্যাকান্ডে কোন ভুমিকা ছিলো না।)

২) রাষ্ট্রপতি হত্যার পর সেই দলেরই একজনকে ( এই ক্ষেত্রে হবে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার) পুতুল বানিয়ে পিছনে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় নেওয়া হয়।

৩) একজন বিচারপতি ( এখানে হবে আহসান উদ্দিন চৌধুরী)কে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে সেনাপ্রধান (এরশাদ) ক্ষমতা দখল করেন।

৪) ক্ষমতা দখলের পরই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষনে ৬ মাসের মধ্যে নিব্যাচন দিয়ে গনতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সেনাশাসক ব্যারাকে ফিরে যাবার অংগীকার করেন।

৫) কিছুদিন পর জনগনের দাবীর মুখে উনি বিচারপতিকে বঙ্গভবনের পশ্চাৎদ্বার দিয়ে বের করে দিয়ে নিজেই প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন।

৬) ক্ষমতায় আসার পরপরই ৭১ এর পরাজিত শক্তিকে পুর্নবাসনের প্রকল্প অব্যহত রাখা হয়। যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধ থাকে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লুকোচুরি অব্যহত থাকে। কোন বিচার না করেই জিয়ার খুনী নাম দিয়ে কিছু মুক্তিযুদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে সেনাবাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধা নেতৃত্ব শুন্য করার প্রকল্প সমাপ্ত করা হয়।

৭) রাষ্ট্রপতির হত্যাকারী কোর্ট মার্শাল না করে দুতাবাসে চাকুরী দিয়ে পুরষ্কৃত করা সেনাকর্তাদের দেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেওয়া হয় রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে। হত্যাকারীরা সংসদ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার সুযোগ পায় এরশাদের বদৌলতে।

৮) একটা গনভোট (হ্যাঁ/না) করে ৯৮% হ্যাঁ ভোট পেয়ে নিজেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করেন।

৯) শুরু হয় রাষ্ট্রীয় সম্পদ আর জনবল ব্যবহার করে রাজনীতিতে প্রবেশ।

১০) ঘোষিত হয় ১৮ দফা কর্মসূচী।

১১) বিভিন্ন দলছুটদের নিয়ে "জাতীয় ফ্রন্ট" তৈরী হয়। সেখানে ধর্মকে রাজনীতি ব্যবহারের বিষয়টা গুরুত্ব দেওয়া হয়।

১২) জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টকে "জনদল" এ রূপান্তরিত করা হয়।

১৩) অবশেষে দলের নাম আধুনিকায়ন করে "জাতীয় পার্টি" করে এরশাদ তার চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন।

উপরের দুইটা ঘটনা যদিও হুবুহু মিলে যাবে - তারপরও জিয়াউর রহমান হয়ে যাবেন মহান নেতা আর এরশাদ হয়ে গেছে পতিত স্বৈরাচার। ইতিহাসে পুনরাবৃত্তির যদিও হয় - ফলাফল হয় ভিন্ন। কারন ঘটনার সময়কাল ভিন্ন হবার কারনেই হয়তো মানুষ ভিন্নভাবে ঘটনাকে গ্রহন করে।

তবে সত্যের স্বার্থে আবেগহীন ভাবে ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে - সব ঘটনাই কিন্তু এ - কেউ জনগনকে বোকা বানাতে পেরেছে আর কেউ ব্যর্থ হয়েছে। যিনি সাফল্যজনক ভাবে জনগনকে বোকা বানাতে পেরেছে - সে সফল আর হিরো - আর যে বোকা বানাতে ব্যর্থ - সে পতিত ভিলেন।

সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে - ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিতে ভিন্ন ফলাফল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১২ রাত ২:৫১
৩০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×