অসহিষ্ণুতার আগুন: 'বেআদবি' নয়, এই দেশে মানুষ মারাই এখন 'অমার্জনীয় অপরাধ'
নতুন নকিব নামক এক ব্লগারের সাম্প্রতিক পোস্টের শিরোনাম ছিল: "আল্লাহর শানে আবুল সরকারের ধৃষ্টতা ও বেআদবি অমার্জনীয় অপরাধের শামিল।"
এই শিরোনামটি একটি ব্যাপক ও বিপজ্জনক প্রবণতাকে তুলে ধরে: যখন দেশে একের পর এক মাজার ভাঙা হচ্ছে, মৃত মানুষের দেহ কবর থেকে তুলে পোড়ানো হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলা হচ্ছে, ঠিক তখন এদের সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে বাউল শিল্পীর 'বেআদবি' নামক এক তুচ্ছ শব্দের ওপর!
এই লেখকের এবং তার সমমনাদের মানসিকতা এখন আর কেবল "ধর্মীয় সমালোচক"-এর পর্যায়ে নেই, এটি উগ্রতা এবং জিহাদী মানসিকতার স্পষ্ট প্রতিফলন।
২০২৫ সালে বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দ্বারা অসংখ্য সহিংস ঘটনা ঘটেছে:
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশে কয়েক ডজন মাজার ভাঙা হয়েছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে মাজার থেকে মৃত পীরকে কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো জঘন্য ও পৈশাচিক ঘটনাও ঘটেছে।
বিভিন্ন অঞ্চলে পোশাক-আশাক ও জীবনযাত্রার ওপর ইসলামী মব দ্বারা মোরাল পুলিশিং এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণের ঘটনাও ঘটছে।
অথচ নতুন নকিবের মতো ব্লগাররা এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়, হত্যা, সহিংসতা, এবং বর্বর মাজার হামলা নিয়ে কার্যত নীরব। তাদের চোখে এগুলি "অমার্জনীয় অপরাধ" নয়। তাদের যত মাথাব্যথা কেবল আবুল সরকারের একটি অমার্জিত বা ভুলভাল বক্তব্য নিয়ে।
যখন বাউলদের ওপর হামলা হয়, তাদের মারধর করে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়, তখন নতুন নকিব-এর কলমে সেই হামলার তীব্র নিন্দা আসে না। বরং আসে "দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি"র দাবি। এর মাধ্যমে তিনি কি প্রকারান্তরে এই বার্তা দেন না যে, উগ্রপন্থীদের ক্ষোভ ন্যায্য, কেবল আইন হাতে নেওয়াটাই ভুল? এই ধরনের বক্তব্য সহিংসতাকে উসকে দেয় এবং উগ্রতাকে বৈধতা দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



