somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালি মুসলমানের পয়লা বৈশাখ কম্পলেক্স

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আশা করি সবাই, পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ মাছ খাইয়া, পুকুরের আর নদীর মাছ খাওয়ার সিজনে ইলিশ মাছের জাটকার বারোটা বাজিয়ে, অসময়ে খেয়ে প্রজাতিটাকে ধ্বংস করে হইচই করে একদিনের জন্যে বাঙ্গালি হওয়া শেষে ঘরে ফিরছেন। আসেন আপনের সাথে আমার কিছুটা মোকাবিলা আছে।

প্রথমে একটা সেনসিটিভ জায়গায় হাত দেই। আমি বেশ কিছু ইসলামিক মাইনডেড বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে এই সমালোচনা শুনছি, পয়লা বৈশাখ বা গায়ে হলুদ সব অনুষ্ঠানে হিন্দুয়ানির চর্চা করা হয়।

এই নিয়া প্রতিক্রিয়াশিলতাটা খুব একটা চরম লেভেলে না হলেও আমার মনে হইছে, শহুরে বাঙ্গালি মুসলমানের মধ্যে যারা ইসলাম পালনে আন্তরিক তাদের মধ্যে অনেকেই একটা আইডেনটিটি ক্রাইসিসের মধ্যে পড়েন একটু হলেও –আমি তাই একটু এই বিষয় হালকা মেজাজে তেনা পেঁচাবো, কেউ বেশী সিরিয়াসলি নিয়েননা।

সমালোচনাটা আমি আমলে নেই কারণ, ইসলামিক আত্মপরিচয় এবং বাঙ্গালি আত্মপরিচয়ের মধ্যে যেই কন্ট্রাডিকশান সেইটা আমাদের ভুবনের একটা বাস্তবতা।

এই খানে প্রধান সন্তুষ্টি হইলো যে, ইতিমধ্যে এই দুইটা পরিচয়ের মধ্যে একটা ব্যাল্যান্স চলে আসছে যেইটা মোটামুটি ভাবে সমাজে গৃহীত হইছে । এই ব্যালান্সটাও সময়ের সাথে এক এক সময় এক দিকে ঝুঁকে পড়ছে একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে।

তবুও, শহুরে মধ্যবিত্ত বাঙ্গালি মুসলমানের মধ্যে এই ব্যলান্সের জায়গায় অনইসলামিক কার্যক্রম হচ্ছে কিনা এই নিয়ে দ্বিধাটা বেশী দেখা যায়। গ্রামে কম দেখা যায়।

এই খানে দুইটা ইস্যু। একটা হইলো, এই আরবান মুসলমান যেই খানে দাড়ায় আছে, এবং যেখান থেকে সে কালচারকে চর্চা করে, সেই খানে সে চিন্তা করে যে, সে একটা স্বতন্ত্র সত্তা।

কয় এক হাজার বছরের কৃষি ভিত্তিক যে সমাজ এবং সংস্কৃতির সাথে তার কানেকশান জেনারেশান বাই জেনারেশান লুজ হইতাছে। তার নাগরিক সত্তা থেকে পাওয়া আইডেনটিটি গুলোর মধ্যে তার বাঙ্গালি এবং ইসলামিক আইডেন্টিটির যে ব্যাল্যান্স এইটার বয়সকাল এখনও ১০০ বছরও হয় নাই। ফলে, শহুরে মধ্যবিত্ত বাঙ্গালি মুসলমানের আইডেনটিটি কি সেইটা এখনও নির্মাণের প্রক্রিয়া চলতেছে, এইটা সম্পন্ন হয় নাই।

ছোট্ট একটা একজাম্পল দেই।

আপনি শহরের ছেলে মেয়েদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আজকে বাংলা মাস কি ? ১০০০ ছেলে মেয়ের মধ্যে,৯৯০ জন বলতে পারবেনা।(পয়লা বৈশাখের দিন ছাড়া)। আমিও পারি না। গুগল হাতাই। কিন্তু, যে কোন আপনি গ্রামীণ মানুষকে জিজ্ঞেস করেন, আজকে বাঙ্গালি মাস কি ? উনি এক সেকেন্ডে এইটা বলে দিবেন। ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জন। কেন, কারণ, ধান এবং অন্য ফসলের বীজ বোনা থেকে শুরু করে, ফসল তোলা পর্যন্ত পুরো সময়টা সে ঋতু দিয়ে চিহ্নিত করে। এই উদাহরণ টা এই জন্যে দিলাম যে, কৃষি ভিত্তিক বাঙ্গালি মুসলমান যে মাত্র ৫০ কি ৬০ বছরে গ্রাম থেকে শহরে মাইগ্রেট করছে , সেই শহুরে আরবান মুসলমান তার পূর্ব পুরুষের কৃষি ভিত্তিক বাঙ্গালি সমাজ,সংস্কৃতি এবং ক্রিস্টির সাথে অনেক কম সংযুক্ত।

এর ফলে যখন তার বাঙ্গালি মুসলমানের মুসলমানিত্ত নিয়ে সচেতন হয়, তখন সে তার বাঙ্গালি সত্তার একটা অংশকে সহজেই খারিজ করে বলতে পারে, আমার পয়লা বৈশাখ দরকার নাই–

কারণ, পয়লা বৈশাখের রাজনীতি এবং অর্থনীতি সম্পর্কে তার সচেতনতা এবং সম্পর্ক কম। তার মধ্যে এই বোধটা নাই যে, এই চর্চা গুলো কয় এক হাজার বছরের একটা গ্রহণ বর্জন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা কৃষি ভিত্তিক সমাজের কিছু প্রয়োজনকে সন্তুষ্ট করার জন্যে দারাইছে।

আমি এই জন্যে একটু চলে যাই পয়লা বৈশাখের উৎসবের অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তার জায়গায়।

বিষয়টা আসছে বাকীর বা ক্রেডিট এর সংস্কৃতি থেকে ।

আমাদের দেশের বাঙ্গালি কৃষক সমাজে কখনোই ব্যাঙ্কের কনসেপ্ট ছিল না। এখন কৃষকের ধান বিক্রির টাকা আসতো ফসল ফলানোর পরে। ফলে সে, সারা বছর দোকানে বাকি রাখতো। এবং সমাজটা যেহেতু কৃষিভিত্তিক এবং কৃষির উৎপাদন এবং বণ্টন বাৎসরিক ঋতু পরিক্রমা মেনে চলে, ফলে বাৎসরিক ভাবে লেনা দেনার সমাপ্তি করে, নতুন বছরের জন্যে নতুন হিসেব করার একটা প্রয়োজনীয়তা সব সময় ছিল। এবং একটা ব্যবসার জন্যেও, সারা বছরের হিসেবটা শেষ করে, সব বাকি উদ্ধার করে, নতুন ভাবে নতুন বাকির হিসেব খুলার একটা সংস্কৃতি আবহমান কাল ধরে চলে আসছে।

এইটাই আমাদের পয়লা বৈশাখ। এই বছর শেষ, মানে আগের বছরের হিসাব মিটায় দিতে হবে। এবং নতুন বছরের শুরু যাকে বলে দোকানে হালখাতা। ফলে যেইটা হয়, এই পয়লা বৈশাখে একটা ব্যাপক টাকার মুভমেন্ট হয়। সবাই সবার হিসাব ক্লোজ করে দেয়। ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোর কর্মচারীরাও আবদার করতে পারে যে, বস কিছু বোনাস দেন। এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোও তখন একটা উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে, তার নতুন বছরের নতুন কাস্টমার ধরার জন্যে।

মোদ্দা কথা এই সময়ে অর্থনীতিতে ব্যাপক একটা গতির সঞ্চার হয়। সবার হাতেই টাকা। এই টাকাটা টা খরচ করতেই, প্রয়োজন হয় উৎসবের, মেলার। যেই মেলায়, যাত্রা শিল্পীরা, বেদেরা, নাগর দোলা, কাপড়, খেলনা, মিষ্টি নির্মাতা হইতে শুরু করে সবার জন্যেই একটা সুযোগ হয়।

এখন এই সময়ে রাজারা বা জমিদাররাও তাদের খাজনা আদায় সম্পন্ন করে।

ফলে একটা ক্যালেন্ডার ডেট নির্ধারণের প্রয়োজন থেকে , বাদশাহ আকবর লুনার ক্যালেন্ডার ভিত্তিক হিজরি সালের সাথে ভারতীয় সালকে মিশ্রণ ঘটিয়ে একটা সৌর ক্যালেন্ডার ভিত্তিক নতুন ক্যালেন্ডার জন্ম দেন, যার অনেক টুকু অংশ এসেছে, ভারতীয় ক্যালেন্ডার থেকে। এর পূর্বে, এই মুগোল শাসকরা হিজরি সাল অনুসারে খাজনা নিতেন, কিন্তু এতে অসুবিধা হইত, কারণ লুনার ক্যালেন্ডার ভিত্তিক হিজরি সাল সৌর বছর থেকে ১২ দিন কম হয়। ফলে দেখা গ্যেছে, আমাদের ঈদ যেই রকম বছরের পর বছর ১৫ দিন আগাইতাছে ঠিক তেমনি খাজনা কালেকশানের দিনও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঋতুতে পরতাছে। ফলে দেখা গ্যেছে, ফসল তোলার সময় হয় নাই, কিন্তু খাজনার টাইম চলে আসছে।

এইটা এডজাস্ট করার জন্যেই, বাদশাহ আকবর এই হাইব্রিড, হিজরি ক্যলান্ডার এবং প্রচলিত ভারতীয় ক্যালেন্ডার মিশিয়ে বঙ্গাব্দ তৈরি করছেন। তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আমি একজন গবেষক থেকে কোট করলাম।

“ভারতের মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতেহউল্লাহ শিরাজীকে হিজরি চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। আমির শিরাজির সুপারিশে পারস্যে প্রচলিত সৌর বর্ষপঞ্জীর অনুকরণে ৯৯২ হিজরি মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবর হিজরি সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহণের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এ জন্য ৯৬৩ হিজরি সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতিপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্জীর প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরি সালের মহররম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এ জন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জীর প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়। আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এর পরদিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়।“

ড. মাহফুজ পারভেজ | মানবজমিন

এইটা আবহমান কাল থেকে বাংলায় চলে আসছে এবং কৃষি ভিত্তিক সমাজের যে অর্থনীতি তার একটা মৌলিক প্রয়োজন কে মেটায় এবং যা বাংলার অর্থনীতির একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।

কারণ, এই মেলা ভিত্তি করে যে, কেনা কাটা হয়, অর্থনীতিতে যে অর্থ-যোগ হয় সেইটা কেন্সিইয়ান মডেলে দেখতে গেলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রান সঞ্চার করে।

এখন একজন শহুরে শেকড় ছিন্ন বাঙ্গালি মুসলমানের জন্যে পয়লা বৈশাখ এবং সাথে চৈত্রসংক্রান্তি যা মূলত পয়লা বৈশাখের আগের দিনের হালখাতা ক্লোজ করার উৎসব এই গুলোকে হিন্দুয়ানী উৎসব বলে খারিজ করার একটা প্রবণতা আসতে পারে। এইটা তার এই যে সাংস্কৃতিক উৎসব তার সাথে যে অর্থনীতির যে সংযোগ এবং তার সাথে তার যে বিচ্ছিন্নতা সেইটার একটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মাত্র।

আগেই বলছি, মধ্যবিত্ত বাঙ্গালি মুসলমানের বাঙ্গালিত্ত এবং মুসলমানিত্তের মধ্যে বেশ কিছু আইডেনটিটি ক্রাইসিস থেকে এই ধরনের ধারনার উৎপত্তি। এই জন্যে বাঙ্গালি মুসলমানের চরিত্র বিশ্লেষণ করাও একটু প্রয়োজন আছে।

এইটা বলার অপেক্ষা রাখেনা, ইসলাম ধর্মের দিক থেকে, এই শহুরে বাঙ্গালি মুসলমান একটা ইম্পারফেক্ট মুসলমান। কারণ, এই মুসলমানের মধ্যে যতটুকু না মুসলমানিত্ত ততটুকুই আছে বাঙ্গালিত্ত । এই দুইটার একটা ব্যাল্যান্স তার মধ্যে ইতিমধ্যেই স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু, এই ব্যলান্সটা পারফেক্ট ব্যাল্যান্স না এই খানে ধর্মের সাথে প্রচুর কন্ট্রাডিকশানের জায়গা আছে। যেমন , মহিলাদের শাড়ি, যেমন তরুণদের দাড়ি রাখা বা আরব দেশে প্রচলিত ড্রেস পরা।

ফলে, যাদের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা বাড়ছে তাদের মধ্যে এই বাঙ্গালিত্তের অংশ গুলোকে বর্জন করে ইসলাম ধর্মের দিকে যাওয়াটাও ব্যক্তি এবং পরিবার বিশেষে হইতে পারে এবং হয় এবং হইতাছে। তাছাড়া ৯১১ পরবর্তী বিশ্বে, আমেরিকার ইসলাম বিরোধী আগ্রাসনের মুখে বিশ্বের অনেক দেশে মুসলমানদের মধ্যে ইসলাম চর্চা ব্যাপক হারে বাড়ছে। কথার কথা হিসেবে বলি, ঢাকা ইউনিভারসিটির যে কোন ব্যাচের বছরের পর বছর গ্রুপ ছবি গুলোতে দেখবেন, হিজাব পরা ছাত্রীদের সংখ্যা ষাট দশক থেকে বিংশ শতকের প্রথম দশকে অনেক গুন বাড়ছে। এমনকি আশির দশকে সামাজিক অনুষ্ঠানে যেই পরিমাণ আন্টিদেরকে স্লিভলেস পড়তে দেখা গ্যাছে, এখন তার ১০% ও দেখা যায় না। এইটা অরগানিক প্রসেসে হচ্ছে।

এইটাও শহুরে বাঙ্গালি মুসলমানের ক্যারেক্টার ফর্মেশানের একটা প্রসেসের মধ্যে হচ্ছে ।

কিন্তু, ইন্টেরেস্টিংলি এই বাঙ্গালি মুসলমান তার মুসলমানিত্তকে আঁকড়ে ধরতে গিয়ে, যত না মুসলমান হইতাছে, তার চেয়ে বেশী হইতাছে বাঙ্গালি মুসলমান।

কারণ একটা প্রকৃত মুসলমান হইতে যেই আইডিওলোজিটা সে আঁকড়ে ধরতাছে তা কিন্তু, খুব ভালো মত ডিফাইন করা না। বরং সেইটা তার বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা আরও একটু রক্ষণশীল একজন বাঙ্গালি মুসলমানের প্রতিকৃতি।

এইটা খুব ইন্টারেস্টিং। একটু ব্যাখ্যা করি। এই খানে একটু বলে নেই, আমি এই খানে বাঙ্গালি মুসলমানের ইসলামিক আইডেনটিটির চরিত্র বিশ্লেষণ করছি, এইটা ধর্মীয় আলাপ না। এইটা সামাজিক অবজারভেশন।

যে কোন ধর্মের, তিনটা প্রধান কার্যক্রম।

প্রথম হচ্ছে, ধর্মের মুল বিশ্বাসের জায়গাটা। ইসলামের জন্যে সেইটা হইলো, আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস বা ঈমান থাকা। এবং হজরত মোহাম্মাদ (সাঃ) যে আল্লাহর রাসুল সেইটা বিশ্বাস করা এবং এবং আখিরাতে বিশ্বাস করা, যার মানে হইলো এই দুনিয়াটা একটা টেস্টিং গ্রাউন্ড। মৃত্যুর পরে, আল্লাহ আপনার বিচার করবে এবং সৎ কর্ম করলে, আপনি বেহেস্তে যাবেন এবং অসৎ কর্ম করলে দোজখে যাবেন। সাথে আছে, ইসলামের পাঁচটা মূলনীতি কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত পালন করা। এই গুলোর মুল লক্ষ্য হইলো, আল্লাহর সাথে ইবাদতের মাধ্যমে একটা আধ্যাত্মিক সংযোগ সৃষ্টি করা, ধ্যানের মাধ্যমে।

দ্বিতীয়টা হইলো, ধর্মের ভ্যালু সিস্টেম। ইসলামে যেই খানে বলে, আপনি মিথ্যা কথা বলবেন না, ঘুষ খাবেন না, কাউকে ঠকাবেন না, রাষ্ট্রকে ঠিক মত ট্যাক্স দিবেন, প্রতিবেশীর সুখ দুঃখ খেয়াল রাখবেন, পিতার মাতার যত্ন নিবেন। পর নারীর দিকে তাকাবেন না, সব সময় সত্য কথা বলবেন, হারাম খাবেন না, সুদ গ্রহণ না করবেন না ।

তৃতীয় টা হোল, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। আপনি সুন্নত মেনে চলে দাড়ি রাখবেন, সেই ভাবে ড্রেস পড়বেন, হিজাব বা নিকাব পড়বেন, বা মাথা ঢাকবেন। এবং ঈদ এবং অন্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান গুলো নিয়ম মত পালন করবেন।

আমরা আমাদের অবজারভেশন থেকে দেখছি, এই বাঙ্গালি মুসলমান যখন অধিক মুসলমান হতে চেষ্টা করে, তখন সে ইসলামের আধ্যাত্মিক এবং ভ্যালু গুলো মেনে চলার দুইটা ধারাকে বিভিন্ন ভাবে কম্প্রোমাইজ করে, কিন্তু জোর দেয় ইসলামের সাংস্কৃতিক অংশটুকুতে-যেইটা ধর্মের প্রধান দুইটা ধারা থেকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ।

আমি যত দূর দেখেছি, খুব কম মুসলমান তার ইবাদতকে অত্যন্ত আধ্যাত্মিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, যারা সম্পূর্ণ ভাবে ধর্মে মনোযোগ দেয় ওরা বাদে। এবং সব চেয়ে ইন্টারেস্টিং যেইটা সেইটা হোল, ইসলাম ধর্মের ভ্যালু সিস্টেম যেইটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ, যেমন ঘুষ না খাওয়া বা না দেয়া, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করা, দান খয়রাত করা, সরকারকে ট্যাক্স দেয়া, রাষ্ট্রের নিয়ম কানুন মেনে চলা , কারোটা না মেরে খাওয়া , সুদ গ্রহণ না করা – এই জায়গা গুলোতে তার বিবর্তন ইসলাম ধর্মের শিক্ষার উলটোদিক।

আমাদের দেশে যারা ইসলাম প্রচার করছেন, তারা কিন্তু, এইটা করেন নাই। তারা কালচারাল অংশে অনেক ছাড় দিছেন। কারণ, তারা দেখছেন ইসলাম ধর্মের কালচারাল কার্যক্রম গুলো মূলত আরব দেশের কালচার থেকে আসছে। এই জন্যে তারা ইসলামের কালচারাল কার্যক্রম গুলোকে অনেক কম্প্রোমাইজ করে, এই দেশের নদী মাত্রিক, কৃষি ভিত্তিক সমাজের সামাজিক অবস্থানের সাথে ধর্মকে ইসলামের কালচারাল ভ্যালুগুলোকে কাসটমাইজ করে, বাঙ্গালি মুসলমানের জন্যে একটা ইউনিক পরিচয় গড়ে তুলছেন। এইটাই না ইসলামিক, না বাঙ্গালিক- কিন্তু বাঙ্গালি মুসলমানের ইউনিক সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক আইডেনটিটি, যেই খানে পয়লা বৈশাখের উৎসব একটা পার্ট।

কিন্তু, আজকের আরবান বাঙ্গালি মুসলমান যখন তার কন্ট্রাডিকশানের জায়গা গুলোতে নিজেকে এডজাস্ট করছে, তাতে সে মোটেও পূর্ণ মুসলমান হচ্ছেনা, হচ্ছে একটু সামাজিক বা সাংস্কৃতিক ভাবে রক্ষণশীল বাঙ্গালি মুসলমান, যে নামাজ পরে, কিন্তু সুদ খাইতে যার কোন আপত্তি নাই। যে আসতে আসতে হিজাব ধরতাছে, কিন্তু কাজের মেয়ের উপরে টর্চার করতে তার কোন দ্বিধা নাই। একটু জেনারালাইজ করলাম, কারণ এইটা সবার জন্যে ঠিক না। কিন্তু, অব্জারভেশানটা মোটা দাগে সত্য।

কিন্তু আমার দেখায়, ওয়েস্টার্ন মানুষ যখন ইসলাম চর্চার দিকে ঝুঁকে তখন সে হয় অনেক বেশী মানবিক আর বাঙ্গালি মুসলমান ইসলাম চর্চার দিকে ঝুঁকলে হয়, সামাজিক ভাবে রক্ষণশীল।

এই আলোচনাটা করলাম, পয়লা বৈশাখ নিয়ে কিন্তু এইটা অনেক ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান এবং আচারের জন্যে প্রযোজ্য। যেমন, গায়ে হলুদ ।

সব চেয়ে বড় প্রবলেম হইলো, এই বাঙ্গালিত্তের জায়গাটাকে প্রবলেম হিসেবে ধরে নিয়ে সে কিন্তু নিজেই তার মুল প্রব্লেমের জায়গায় ছাড় দিয়ে বসে আছে, যেইটা আসলেই তার অস্তিত্ব এবং সত্তাকে ধ্বংস করছে। সেইটা হইলো, বলিউডী আগ্রাসন।

আজকে বলিউডী যেই সব ভ্যালু কোন দাড় দুয়ার ছাড়া, আমাদের হাজার বছরের গড়ে ওঠে সামাজিক ভ্যালুকে ধংশ করে দিচ্ছে, সেইটা কিন্তু তার বাঙ্গালিত্ত এবং ইস্লামিত্তের ব্যাল্যান্সে গড়ে ওঠা স্বতন্ত্রটাকে আঘাত করতাছে।

পয়লা বৈশাখ বা অন্যান্য বাঙ্গালি আচার নিয়ে তার ভ্যালু ধ্বসে পরে সামাজিক এবং পারিবারিক অস্থিরতা নিয়ে যে শঙ্কা এই জায়গায় বলিউডী ভ্যালুগুলো অনেক অনেক অনেক অনেক বেশী ক্ষতিকর। কিন্তু এই বিষয়ে তার শঙ্কা নাই, কারণ শাহরুখ বা সালমান তার প্রিয় নায়ক এবং বলিউডী সংস্কৃতির ভোক্তা হিসেবে সে এই ব্যাপারে কন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অক্ষম এবং এই ব্যাপারে টার সচেতনতাও নাই বললেই চলে।

অথছ, এই খানেই তার ধর্মীয় চেতনার হানি হওয়ার সম্ভাবনা সব চেয়ে বেশী এবং এই খানেই তার সব চেয়ে বেশী সচেতন হওয়া উচিত।

---- জিয়া ভাইয়ের লেখা -- অসাধারন SOUL SEARCHING একটা ARTICLE।
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×