somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হ্যালো, Donate Blood?

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১১ সালের ২৬ জুলাই, তখন ফেইসবুকে Sad But True (কঠিন বাস্তব) নামে একটা গ্রুপ খুব জনপ্রিয় ছিলো। আমাদের চারপাশের বিভিন্ন অসঙ্গতির চিত্র গুলো ক্যামেরা বন্দি করে গ্রুপে আপলোড করতো মেম্বাররা। সে এক মহা আজব কালেকশন! যারা দেখেননি তারা বুঝবেন না। তো সেই গ্রুপে প্রায়ই বিভিন্ন সমাজসেবামূলক পোস্টো আসতো। সবাই মহা উৎসাহে সেগুলোতে এগিয়ে যেত। এরকমই একটা পোস্ট দেখলাম গ্রুপ ওয়ালে,
"একজন মুমূর্ষু রোগীর জন্য সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকায় জরুরী ভিত্তিতে ২ ব্যাগ........."

আমার আশে পাশে খুজলাম ডোনার, পেলাম না। আমার নিজের রক্তের গ্রুপও আলাদা। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। মাত্র ২ ব্যাগ রক্তের জন্য কেউ মরতে বসেছে ব্যাপারটা ঠিক মানতে পারছিলাম না! ব্যাপারটা মাথার ভেতরে ঢুকে গেছিলো যেন! এটা নিয়ে ভাবছিলাম আর ওয়াল চেক করছিলাম। একবার ভাবলাম একটা ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলি, যেখানে ডোনাররা নাম রেজিস্ট্রেশন করবে। কারো রক্ত লাগলে ডোনার লিস্ট থেকে যোগাযোগ করে রক্ত সংগ্রহ করবে। কিন্তু আইডিয়াটা নিজের কাছেই পচ্ছন্দ হলো না! কারন আমাদের দেশে উচ্চ মূল্য আর ধীর গতির কারনে ইন্টারনেট ব্যাবহার এখনো সীমাবদ্ধই থেকে গেছে। রক্তদান করার জন্য একটা ওয়েবসাইটে কেও রেগুলার ঢু মারবে এটা বিশ্বাসযোগ্য ছিলো না। আর তাছাড়া শুধু রক্তদান বিষয়ক একটা ওয়েবসাইটে ট্রাফিক পাওয়া এত সহজ ছিলো না। মানে ব্যাপারটা অনেকটা আমার জ্ঞান ও সামর্থের বাইরে ছিলো।

হঠাৎ একটা পেইজের পোস্টে চোখ আটকে গেল। ১০৩টা লাইক, ১৩ টা শেয়ার! সেই সময়ে এটাই অনেক! ভেবে দেখলাম একটা পেইজের পোস্ট একই সাথে কত মানুষের ওয়ালে চলে যাচ্ছে! আর কাউকে জোর করে পেইজে আনতে হচ্ছে না! মানুষ এমনিতেই দিনে অন্তত একবার হলেও ফেইসবুকে ঢুঁ মারে। আর একটা বুহৎ অংশের নেট ব্যাবহারকারীতো শুধু ফেইসবুক ব্যবহার করার জন্যই নেট ব্যবহার করে। তাই কেউ একবার লাইক দিলেই তার ওয়ালে আমাদের পোস্ট রেগুলার চলে যাবে। তাহলে এভাবে যদি রক্তের পোস্ট দিই আর সবাই সেই পেইজে লাইক দেয় তাহলে ডোনার পাওয়া যাবে! ব্যাপারটা ভাবতেই আনন্দে মন ভরে উঠলো! খুঁজতে লাগলাম ফেইসবুকের পেইজ ক্রিয়েট করার অপশনটা।

এভাবেই জন্ম হলো একটি পেইজ, শুরু হলো একটি যুদ্ধ,

Donate Blood/রক্ত দিন, জীবন বাঁচান

প্রথম দিনেই অনেক সাড়া পেলাম। দিন দিন লাইক বাড়তে থাকলো। অনেকেই রক্তের চাহিদা জানাতে থাকলো। সাথে আমরা দিলাম হেলথ টিপস, বিভিন্ন রোগের কারন, প্রতিকার, পরামর্শ, পুস্টি তথ্য সহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট। আমাদের পোস্ট গুলো শেয়ারের মাধ্যমে ছড়িয়ে গেল ওয়াল থেকে ওয়ালে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে শুরু করলো শত শত ডোনার। যারা স্বেচ্ছায় সম্পূর্ণ অচেনা একজন মানুষকে শুধুমাত্র একটা ফেইসবুক পেইজের পোস্ট দেখে রক্ত দিতে শুরু করলো। তৈরী হলো নতুন এক বন্ধন, সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেইসবুক আর শুধু যোগাযোগের কাজেই সীমাবদ্ধ থাকলো না। এর মাধ্যমে যুক্ত হলো শত শত ডোনার, তৈরী হলো প্রথম সোস্যাল নেটওয়ার্ক ভিত্তিক ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক। মজার ব্যাপার হলো সেটা ছিলো আমার প্রথম পেইজ। অ্যাডমিন প‌্যানেলের সেরকম কিছুই বুঝতাম না! আর তখন এত অপশনও ছিলো না। যখন পেইজের ইউজার নেম সেট করতে গেলাম প্রথম পচ্ছন্দ হলো donateblood কিন্তু সেটা আগেই একদল বিদেশী দখল করে বসে আছে। তারা তখন শুধু রক্তদান বিষয়ক সচেতনতামূলক পোস্ট দিত। তাছাড়া রক্তদান বিষয়ক সেরকম কোন কিছু খুজে পেলাম না ফেইসবুকে। শেষে donateblood এর পরে 18 লাগিয়ে দিলাম, ইউজার নেম হলো donateblood18. যেটার ভাবার্থ "১৮ বছর হলে রক্ত দিন"।

পরিচিতি বাড়ার সাথে সাথে কাজের পরিধীও বেড়ে গেল। অ্যাডমিন প‌্যানেলে যুক্ত হলো অনেকেই। প্রিন্স ভাই, আকাশ, সোহানা, অনুপমদা, অনিক, সজল, তন্বী, ধ্রুব, সাগর, শোয়েব, কিবরিয়া, ইমতিয়াজ ইমু, শোভন, সেলিম ভাই, মোহাইমিন, শুভ ভাই সহ আরো অনেকেই বিভিন্ন সময় অ্যাডমিনের দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেকের নাম এখন মনে পড়ছে না, সরি! এর মাঝেই শুরু হলো পেইজের ফ্যান বাড়ানোর প্রতিযোগীতা! শুরু হলো বানিজ্য! অনেকেই বের হয়ে গেল অ্যাডমিন প‌্যানেল থেকে, নতুন অনেকেই আসলো। আমরা আমাদের আগের ধারা বজায় রাখলাম। অন্যান্য পেইজ গুলা ২/৩ মাসেই ধেই ধেই করে লাখ খানেক ফ্যান বানিয়ে ফেলতে লাগলো। কিন্তু আমরা প্রতিদিন ৫/৭টা করে লাইক নিয়ে গুটি গুটি করে আগানো শুরু করলাম। দিন যেতে থাকলো, নতুন নতুন রক্তের চাহিদা আসতে থাকলো। অ্যাডমিন প‌্যানেলে ২৪ ঘন্টা কাজ করে গেল একদল কিশোর-তরুন। স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকলো। পার হয়ে গেল দুটি বছর।

এখন আমাদের ২৩০০০+ ডোনার আছে, ওয়েবসাইট আছে, ডোনার ডাটাবেজ আছে, যোগাযোগের নাম্বার আছে আর আমাদের একটা লক্ষ্য আছে......"রক্তে ভেজা বাংলার মাটিতে রক্তের অভাবে নিভে যেতে দেব না আর একটি মানব প্রাণ"। আমাদের কাজ এখন শুধু এগিয়ে যাওয়া।

আমরা বসে থাকি ফোনের অপেক্ষায়। হয়তো এখনই বেজে উঠবে ফোন! কেউ উৎকন্ঠা ভরা কন্ঠে বলবে,
: হ্যালো, Donate Blood?
: জি বলছি।
: আমার বাবার জন্য ২ ব্যাগ ও নেগেটিভ রক্ত লাগবে! বাবার অবস্থা খুব ভালো না, তাড়াতাড়ি রক্ত পাওয়া না গেলে........!

শুরু হবে আরেকটি রক্ত সংগ্রহ অভিযান......!

অন্তরের গহীন স্থল থেকে আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি সেই সব মহান রক্তদাতাদের প্রতি যারা এত দিন রক্তদান করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই সাথে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি সেই সব একনিষ্ঠ ফ্যানদের যারা বিভিন্ন সময় লাইক/শেয়ার করে সাহায্য করেছেন। আপানারা আমাদের হিরো, আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। সবার জন্যই রইলো অনেক অনেক শুভকামনা।

আমাদের রক্তদান প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×