কিছু কিছু অনুভূতির তুলনা হয় না, হয় না কোনো রং। আমাদের সব আয়োজন থমকে যায় চেতনার এই বিন্দুতে। আজও বুঝতে পারিনি কেনো এমন হয়, তবে চলছে এভাবে হাজার বছর!
বাবা যখন বয়ে নিয়ে যায় পূত্রের লাশ তখন মনে হয় এতটা ভার ওঠানোর শক্তি আল্লাহ কখনোই দেননি। তবু সে হেটে চলেছে কাধে নিয়ে। চোখ দুটি শুকিয়ে গেছে, বুকের শ্বাস প্রশ্বাসটা খুবই সাধারন, চিন্তার ফিল্মে উকি দিলে কিছুই নেই। শুধু একটাই তাড়া, শেষ মোনাজাতের!
অথবা সেই ১২ বছরের ছেলেটা যে হতবুদ্ধ হয়ে ড্রেনে জমে থাকা ১০-১২টা লাশের মধ্যে একটির দিকে চেয়ে আছে। একটু আগে চিনতে পেরেছে এটা তার বাবার লাশ। ড্রেন আর লাশের গন্ধে মানুষের মাথা ঘুরছে, কিন্তু তার এখন একটাই চিন্তা বাবাকে সে কিভাবে বয়ে নিয়ে যাবে। তার সাথে আসা বড়কাকা নাকি রাস্তায় শুয়ে আছে, আশেপাশের মানুষ ওকে জড়িয়ে কাদছে, কিন্তু ওর চিন্তা সামনে অনেক কাজ, তার বাবার লাশটাকে গোসল করাতে হবে, সাদা কাফনের কাপড় পরাতে হবে, হুজুরকে ডাকতে হবে আরো কত কি! মা তো গতকাল থেকে ঘুমিয়ে আছে, এখনো ওঠেনি!
অথবা সেই যুবকের কথা কি মনে আছে, যে ছেলেটি ব্রুকলিন ব্রীজ থেকে শূন্যে লাফ দিলো। শোনা যায় ওর প্রিয় মানুষটির নাকি সেদিন বিয়ে হচ্ছিলো শহরের ৫ তারা হোটেলে। খুব জানতে ইচ্ছে করছিলো ওর পকেটে থাকা রিংটি কখনো প্রিয়তমাকে দিতে পেরেছিলো কি না! রিংটা অবশ্য কেনা ছিলো ধারের টাকায়! তবে এটা ঠিক ওর চোখের অশ্রু আর গায়ের রক্তে সেদিন ভিজেছিলো ব্রুকলিনের রাজপথ!
অথবা আরেকটা অনুভূতির কথা বলি যেটা আমার এক প্রিয়জনের। খুব কাছ থেকে নিজের মৃত্যুটাকে দেখা আর অনুভব করা মৃত্যুর পরশ কিভাবে গ্রাস করছে শরীরের প্রতিটি অনুভূতি, অথচ কিছুই করার নেই। অপেক্ষা কখন মৃত্যু নামের রহস্যময় সময়টি আগলে ধরবে! এটাই শেষ অনুভূতি, অনন্য এক অনুভূতি।
ইদানিং মৃত্যুটার প্রতি আমার আগ্রহ খুব গাঢ় হচ্ছে। যখনই কোনো শান্ত কবরস্হান দিয়ে হেটে যাই, মনে হয় নেই কোনো কস্টের অস্তিত্ব, নেই কোনো মিছে না পাওয়ার বেদনা অথবা স্বজন হারানোর বাজে চিন্তা। সমস্যা একটাই মৃত্যুকে নাকি স্বেচ্ছায় আলিঙ্গন করা মহা পাপ, মৃত্যুই নাকি এটা করে সময় হলে। বিধানটা বেশ কঠিন মনে হচ্ছে, কারন আমাকে যে বেহেশতে যেতে হবে, ওখানে একজনকে চাইতে হবে! আমি অপেক্ষায় আছি। শুধু নামাজে বসে একটা জিনিস চাই, সময়টা খুব দ্রূত এসে দাড়াক, এত ভয়ন্কর সুন্দর জীবন, এত ভালোবাসা আমার জন্য নয়!
ব্লাডি ডে!
ভেবেছো এক সকালবেলা
শিমুল ফুলে ছেয়ে থাকা
গায়ের মেঠো পথ
হেটে চলো আপনমনে
ক্লান্তি এলে সুধাবো তোমায়,
"এই একটু পথ
জিরিয়ে নেবো গাছের ছায়ে"।
ভেবেছো এক জ্যোৎস্নারাতে
ধূসর আলোয় যায় যে ভেসে
উদাসী এক জনপদ
শুনেছি নদীর ছন্দ গান
তাকিয়ে আমার বন্ধ চোখে
একে দিলে মিস্টি চুমো।
বইতে দাও ভাবনাটাকে
স্হান কাল পাত্র ভেদে
অবিস্তৃত ভালোবাসার
বেচে আছে আমার মনে
তুমি থাকো দূর শহরে
অন্য কারো বাহু ডরে!
তুমি কেনো নাম দিলে না
আমার স্বপ্নের সেই ঠিকানার
আকাশ চিরে হতাশার আধার
হানা দেয় স্মৃতিদের আড্ডায়
বিষন্ন সুরে বিউগল গুলো
আশ্রয় খোজে আপন ছায়ায়
এমনতো কথা ছিল না!
বর্ণহীন কিছু অনুভূতি আর ভয়ন্কর সুন্দর এ জীবন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!
রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।
আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!
এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঁচতে হয় নিজের কাছে!
চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু। লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা
২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিউ ইয়র্কের পথে.... ২
Almost at half distance, on flight CX830.
পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১
হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সামুতে আপনার হিট কত?
প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন