হুমায়ুন আহমেদ ক্যামিস্ট্রির উপর উচ্চতর ডিগ্রী নিলেও তার লেখা উপন্যাসগুলোতে এমন কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য দেয়া আছে যা আদতে ভুল। এই ভুলগুলো জনমনে এতটাই স্বীকৃত যে জাতীয় পত্রিকার আর্টিক্যালেও সেগুলো মানুষজন অবলীলায় ব্যাবহার করছে। পৃথিবী যদি তার কক্ষপথ থেকে সূর্য্যের দিকে এতটুকু এগোয় তাহলে নাকি সব পুড়ে ছাই হয়ে যাবে আবার সূর্য থেকে এক চিলতে দূরে সরে গেলে সব জমে বরফ হয়ে যাবে। অথচ ক্লাস সেভেনে ভূগোলের বই থেকে জানি পৃথিবীর কক্ষপথ অনেকটা ইলিপটিক্যাল (বাংলাটা আমার মনে নেই, বাংলাতে আমি বরাবরই কাঁচা)। তার মানে হলো সূর্য্যের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে কখনো এটা কাছে এসে পড়ে এবং কখনো এটা দূরে সরে যায়। কাছে আসা ও দূরে সরে যাবার পার্থক্য মোটামুটি ৫ লক্ষ কিমি এর কাছাকাছি। যখন কাছে আসে তখন বাংলাদেশের ওপর ঠাটা গরম পড়ে আবার যখন দূরে যায় তখন বাংলাদেশে হিম ঠান্ডা পড়ে। কিন্তু কখনোই এমন হয় না যে পুকুর সাগরের পানি ফুটছে অথবা সাইবেরিয়ার মতো বরফে লোকজন জীবন্ত আইসক্রীম হয়ে গেছে। সে যাকগে, বেশী কথা বললে আমার বোনের মতো সবাই বলে বসবে হুমায়ুন আহমেদের মতো তোমার নাম কতজন জানে!
তখন আমি দ্বিতীয় বর্ষে, কিউ কে হলেই ছিলাম। ছুটির দিন রুম মেটরা শহরে চলে যেতো যে যার বাসায় অথবা আত্মীয়দের সাথে সময় কাটাতে। আমি একা বসে হলে গেমস খেলতাম নতুবা লাইব্রেরী থেকে কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্সের বই এনে ডুব দিতাম। হঠাৎ শখ হলো সাতার কাটার। ফরিদপুরে আমার শৈশব কৈশোর যেখানে কেটেছে তার পাশেই প্রমত্তা কুমার নদী।তখন প্রমত্তা থাকলেও কুমার নদী তার যৌবন হারিয়েছে বহু আগেই। যখনই কেউ শোনে বাসার পাশে নদী থাকা সত্বেও সাতার জানি না, বিস্ময় আর কাটে না। তাই ভাবলাম সাতারটা শিখেই ফেলি। সাতার শেখার সময় প্রধান সমস্যা ছিলো লুঙ্গি। লুঙ্গি আমি গিট্টু দিয়েই পড়তাম। সমস্যাটা হতো যখন ডুব দিতাম লুঙি পানির উপরে উঠে মাথা ঢেকে ফেলতো এবং তাতেই লেপ্টে থাকতো। তাই পাড়ে আসতে গেলেই একটু লজ্জাস্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। একবার আমরা সবাই মিলে গোসল করতে গিয়েছি এমন সময় বন্ধু কামাল আইডিয়া দিলো কাছা মারতে। আমিও ভাবলাম পুরোপুরি দিগম্বর হবার চাইতে কাছা মারাটা খারাপ না। ঘাটে দাড়িয়ে কাছা মারার জন্য লুঙ্গির গিট্টু খুলে যেই না শক্ত করে মারতে যাবো এমন সময় কামাল দেয় ধাক্কা। লুঙ্গিটা ঘাটের গাছের ডালে আটকে পুরোটা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আর আমি পানিতে পড়ে সমানে হাবুডুবু খেতে থাকি। কামাল আমার লুঙ্গির দখল রেখেছিলো প্রায় ৩ ঘন্টার মতো। আর এতো গরমেও পানিতে এতটা সময় থাকার দরুন আমি কাঁপছিলাম। কিন্তু সেসময় আমার মাথায় দারুন একটা জিনিস ধরা দেয়।
আইডিয়াটা হলো তাপমাত্রার সামান্য তারতম্যের দরুন জ্বর ঠান্ডা লাগে। যদি আমার ঠান্ডার মধ্যেই ঠান্ডা পানিতে গোসল করার চেস্টা করি তাহলে আমাদের শরীর এই জ্বর ঠান্ডা প্রতিরোধী হবে। যদিও বায়োলজী সাবজেক্ট টা আমি সবসময় এড়িয়ে চলেছি এবং এসএসসির পর বায়োলজী আর পড়া হয় নি, কিন্তু বিবর্তন অথবা পরিবেশের সাথে শরীরের খাপ খাওয়ানো ব্যাপারটা যদি সত্যি হয় তাহলে জ্বর ঠান্ডা থেকে পুরোপুরি মুক্তি মিলবে। কামালের কাছ থেকে লুঙ্গিটা পাবার পর যখন ওকে মার না দিয়ে উল্টো আইডিয়া শেয়ার করলাম তখন বললো,"তুই একটা পাগল!"
সত্যি কথা বলতে পরবর্তী শীতে এটা আমি প্রয়োগ করার চেস্টা করেছিলাম। হলের পানিতে কে পানি গরম করবে! যদিও আমরা দু টাকার ব্লেড কিনে ওটা ভেঙ্গে নেগেটিভ পজিটিভ দুটোতে লাগিয়ে পানি গরম করতাম কিন্তু তাতে যথেস্ট ইলেক্ট্রিসিটির খরচ হতো। তাই শুধু কাপড় ধুতাম গরম পানি দিয়ে। এক মাস হলে থাকার সময় যখন ঠান্ডা পানিতে গোসল করা শুরু করি সত্যি সেবার জ্বর ঠান্ডা সর্দি কিছুই হয়নি। সবচে বড় কথা শরীরে অন্যরকম একটা অনুভূতি বিরাজ করছিলো। যদিও গোসল করবার আগে হাইপারথার্মিয়া হবার উপক্রম হতো।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মানুষদের সম্পর্কে একটা খুব প্রচলিত কথা আছে সেটা হলো এদের জীনে এমনকিছু এক্সট্রা আছে যার কারনে এরা প্রবল ঠান্ডা সহ্য করতে পারে। আমার মনে হয় এটা সঠিক নয়। কারন এদের অনেকেই ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে অভ্যস্ত হয়ে যায় যার ফলশ্রুতিতে তাদের শরীরে জ্বর ঠান্ডা সর্দির বিরুদ্ধে অন্যরকম প্রতিরোধী ব্যাবস্থা গড়ে ওঠে। যদিও আমি এখন আর ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে পারি না কিন্তু সুইডেনের উত্তরে বহুদিন থাকার কারনে ১২-১৪ ডিগ্রী আমাকে কাবু করে না। তবে সেখানকার মানুষদের জ্বর ঠান্ডা সর্দি অনেক কম হয় যারা কিনা প্রচন্ড ঠান্ডাতেও ঠান্ডা পানিতে গোসল করে।
সেদিন নাসার একটা আর্টিক্যাল পড়লাম পৃথিবীর মেরুসমূহ তাদের স্থান পরিবর্তন করছে এমনকি এর নিজস্ব চৌম্বকীয় বলয়ও পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতি ১০০ বছরে উত্তর মেরু নাকি ১০ মিটার সরে যাচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা গ্রীনল্যান্ডের গ্লেশিয়ার কানাডার হাডসন বে এর দিকে না জমে ২০০০ সাল থেকে হঠাৎ করে লন্ডনের গ্রীনউইচের দিকে জমতে শুরু করেছে। এরা সাথে পৃথিবীর চৌম্বকীয় বলরেখার পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আজকের পত্রিকাতে দেখলাম এন্টার্কটিকার চাইতে বেশী বরফ পড়বে আমেরিকার শিকাগোতে এ বছর।
২০০-৩০০ বছর আগে এক ভদ্রলোক উদ্ভট থিওরী দিয়ে বসে হুট করে পৃথিবীর দুই মেরু তাদের স্থান বদল করবে। এর ফলে বিশাল সুনামী ভূমিকম্প হবে যেটা কিনা ২০১২ নামের একটা হলিউডি মুভিতে চিত্রায়ন করা হয়েছে। যদিও বিজ্ঞানীরা এমন হুট করে পরিবর্তনের ব্যাপারটা উড়িয়ে দিয়েছেন, কিন্তু পৃথিবীর মেরুর স্থান পরিবর্তনের ঘটনাটা সত্য তবে বেশ ধীর গতির।
অনেকেই বলেন মানুষ একটা নিখুঁত সৃষ্টি অথবা এই যে মহাবিশ্ব কোথাও কোনো ব্যাত্যয় হচ্ছে না। আসলে এটা ভুল। সূর্যের চারপাশে পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহ যেভাবে ঘুরছে তাদের মধ্যে অনেক গড়মিল আছে। বলা হয়ে থাকে পৃথিবী এখন যেভাবে ঘুরছে এভাবে ঘুরতে থাকলে ১০০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে ভেনাসের সাথে সংঘর্ষ হবে। আর আমরা যদি কোনো মতে পৃথিবীর গড় কক্ষপথ ১৫ মিটার সরাতে পারি তাহলে ৫০০ বছর পর ভেনাসের সাথে সংঘর্ষটা দেখতে পারবো। আবার সূর্যের উজ্জ্বলতা যেভাবে বাড়ছে সে হিসেবে ধরে নিলে ৪ বিলিয়ন বছর পর এটি লাল দানবে পরিনত হয়ে পৃথিবীকে খেয়ে ফেলবে। আবার কাল থেকেই যদি এর ১০ শতাংশ উজ্জ্বলতা বাড়ে তাহলে ১ বিলিয়ন বছরের মধ্যে পৃথিবীর জীবন শুন্য হবে। একটা ৩০০০ টাকার টেলিস্কোপ কিনে ব্লাজারের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে পুরো গ্যালাক্সিটাকে ব্লাক হোল কিভাবে গিলে খাচ্ছে। গ্যালাক্সিটা আমাদের মিল্কিওয়ের থেকে কয়েকগুন বড়। আমাদের মিল্কিওয়ের কেন্দ্রের কাছাকাছি একটা ব্লাক হোল আছে। তার মানে দেখা যাচ্ছে আমাদের মহাবিশ্ব মোটেই নিখুত সৃষ্টি নয়। আমাদের জীবনের আয়ু কম বলে, আমরা ছোট বলে সবকিছু দীর্ঘস্থায়ী মনে হয় আসলে আমরা ধার করা সময়ে বসবাস করছি।
আবার আমাদের দেহের গঠনও নিখুত নয়। সামান্য একটা কাশির এদিক ওদিক হলে হার্নিয়া হতে পারে এমনকি আপনি ব্রেন স্ট্রোক করতে পারেন। মাটির সৃষ্টি বলে যে মিথ্যে কথাটা বলা হয় আমাদের শরীরে মাটির প্রধান উপাদান সিলিকার পরিমান মাত্র .০৫% অঠচ মাটিতে সিলিকার যৌগমূলক সিলিকেটের ক্রিস্টাল কোয়ার্টাজের পরিমান ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। বাকি যেসব উপাদান সেসবের অনুপাতের সাথেও আমাদের কোনো মিল নেই বরংচ আমাদের শরীরে পানির পরিমান ৬০ ভাগ। তার চেয়ে বড় কথা আপনি যদি শরীরে সিলিকার পরিমান এতটুকু বাড়াতে যান আপনার শরীরে সিলিকেট পয়জনিং দেখা দিবে। সেদিন মা কে ফোন দিয়ে জানলাম বাংলাদেশে এখন নাকি ঘরে ঘরে থাইরয়েডে সমস্যা। এটা হয় জেনেটিক কারনে অথবা রেডিয়েশনের প্রভাবে। আমাদের দেশে এখনো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট বসানোর কাজ শুরুই হয়নি। ইউরেনিয়াম এনরিচম্যান্ট তো অনেক বড়।
আমাদের শরীরের ডিজাইনের সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো আমাদের মেরুদন্ড। যখন আপনি কোনো ভারি জিনিস ওঠাতে যান এটা সরাসরি আমাদের লোয়ার ভার্টিব্রাতে লাগেযার ফলে আমরা বয়স কালে লোয়ার ব্যাক পেইনে ভুগি যেটা আর সাড়ে না। বডি বিল্ডার বা ওয়েটলিফটাররা তাই ভারী ওয়েট তুলবার জন্য পায়ের ওপর প্রেসারটা ভাগ করে দেয়।
কিন্তু এই যে পায়ের কথা বললাম এখানেও একটা ডিজাইনের ত্রুটি সেটা হলো হাটুতে। হাটুর ডিজাইনটা এমন ভাবে হয়েছে যে আমরা শুধু সামনে আর পিছে করতে পারি তাও একটা নির্দিস্ট পর্যায় পর্যন্ত। নরম বাটির অংশটা এমনভাবে বসানো যে একটু প্রেসার দিলেই পাপড়ের মত ভেঙ্গে যাবে।
মেয়েদের প্রসব বেদনা এত কস্টকর তার বড় কারন এই উড্ভট পেলভিস। যার কারনে প্রাকৃতিকভাবে সন্তান জন্ম দিতে গেলে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে।
ছেলেদের আরও একটা সমস্যা অন্ডকোষ যেটা কিনা এত গুরুত্বপূর্ন হওয়া সত্বেও কোনো নিরাপদ ব্যাবস্থা ছাড়াই ঝুলে আছে। আরেকটা সমস্যা মাড়ির দাঁত। মাড়ির তিনটা দাঁত ছোটবেলায় কোনো সমস্যা করে না। কিন্তু যখন মাথা বড় হতে থাকে বয়সের সাথে সাথে তখন চোয়ালের আকৃতি তেমন বড় হয় না তাই বয়স কালে আক্কেল দাঁত ওঠার সময় চরম ব্যাথার সৃষ্টি করে এমনকি পার্শ্ববর্তী দাঁতগুলোর জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায়। আবার কেউ যদি আপনার কনুইয়ের আগার ভেতরের রগে একটা আস্তে করে টোকা দেয় আপনি একটা শক অনুভব করবেন এবং হাতের আঙ্গুল গুলো অবশ হয়ে যাবে। এরকম আরো ব হু ডিজাইন ফ্লো নিয়ে আমরা একসময় নানা অসুখ বিসুখ এক্সিডেন্টে মারা যাই।
আসলে শুধু মানবজাতীই নয়, সকল কিছুই ভাঙ্গা গড়ার মাধ্যমে বিবর্তিত হচ্ছে। এখনো আমরা পারফেক্ট ফর্ম পাইনি। তবে আমরা সেদিকে এগুচ্ছি। আজ হতে ১০০০০ বছর পর আমাদের রূপ কি হবে সেটা চিন্তার বাইরে। ১০০০০ বছর আগে আমাদের রূপ কেমন ছিলো তা দেখলে খুবই হীনমন্যতায় ভুগতে হয় এই জন্য যে তারা কত কাদাকার ও দুর্বল ছিলো।
সমস্যা হলো এসব নিয়ে আমরা মিথের জগতে বাস করি। অনেকটা বিয়ের মতো। হিসাব করে দেখি বিয়ে করে লাভ নাই। যেই চাকুরী করি, যেখানে থাকি। সংসার টিকবে না। কিন্তু ঐ যে, শুধু ঐ কারনেই বিয়েটা করা!
এখন এই কারনটা কি?.............
হ্যাপী ব্লগিং!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৬:১৭