somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উদ্দেশ্যহীন যন্তর

০৩ রা অক্টোবর, ২০০৭ রাত ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেখি, জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আপনার ধারনাটা কি, বলুন তো?

আপনাকে এই প্রশ্নটা কখনো কেউ করে নাই। আপনি বজ্রাহতের মত কেবল বসে থাকেন, নড়েন না। সিস্টেম আপনাকে সেটা শেখায় নাই। যা শিখিয়েছে তা হলো কিভাবে সফল (এটার মানেটা কি?) ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার হওয়া যায়। শিখিয়েছে কিভাবে এই প্রতিযোগিতার বিশ্ব জিততে হয়, টাকা কামাতে হয় আর শিখিয়েছে কিভাব কাজ হাসিল করতে হয়। আরো শিখিয়েছে- যতটা সম্ভব ইন্দ্রিয়ের ভোগ। কিন্তু জীবনের যে উদ্দেশ্য . . . পারতপক্ষে, আমাদের শিক্ষকরাও কখনো এই অস্পৃশ্য ব্যাপারটা তোলে না, যেন অর্থহীন, অস্তিত্বহীন একটা বিষয়। আমরা বৈজ্ঞানিক, প্রকৌশলী - দার্শনিক তো আর না।
আমাদের শিক্ষার কী সংকীর্ণ অবস্থা!
যেমন, চিকিতসাশাস্ত্রই ধরুন- তলপেটে গোলমাল তো দশটা ডাক্তারের কাছে যান। তাদের প্রত্যেকেই রক্ত পরীক্ষা আর এক্সরের বন্যা বইয়ে দেবে, যতক্ষণ না ঘোষণা দেয় যে সমস্যাটা তাদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের বাইরে। ততদিনে আপনি ডজন বা তারো বেশিবার তাদের কাছে যেতেই থাকেন আর তাদের পরিবারকে খুশি রাখেন (ভিজিট আপনাকে দিতেই হবে। সমস্যা ধরা পড়ুক, না পড়ুক!)

আমরা হাসি। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য কি- এই প্রশ্নের উত্তর আর দেয়া হয় না, যত বিদ্যাই আপনার থাকুক না কেন। এটা থাকে কেবল কল্পনায়, যদি আদৌ তেমন কিছু আপনি কল্পনা করেন কখনো।
অতএব স্মৃতি নিংড়ানো।

কেউ কেউ হয়ত কিছু আভাস স্কুলে ফেলে এসেছেন। কোন্ গ্রুপ নেবেন, বিজ্ঞান না মানবিক? গণতন্ত্র:জনগণের জন্য, জনগণ নিয়ে, এবং জনগণেরই । পৃথিবীর সুউচ্চ পর্বত আর মহাসমুদ্র। ক্লোরিন গ্যাস কিভাবে তৈরী করে? মানুষ সামাজিক জীব। ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতা। কোন খেলা- ক্রিকেট না ফুটবল? বিজ্ঞানমেলায় প্রথম পুরস্কার জিতলেন। মেয়েদের কিভাবে পটাতে হয়? এই ছুটিতে শিমলা ! ডাক্তারী না হয় ইঞ্জিনিয়ারিং- একটাতে হতেই হবে; সেরা চাকরী তো কেবল এখানেই।
নাহ! এগুলোতে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে সারবস্তু কিছু মেলা দায়।

আপনি স্মরণে আনেন নীতিকথা আর ছেলেবেলায় কিন্ডারগার্টেনে শেখা ছড়া। আন্দ্রোক্লিস আর সিংহ? যে শেয়ালটা বনের রাজা হলো! Mary had a little lamb. ব্যা !ব্যা ! ব্ল্যাক শিপ! আরো অন্যান্য। ভালোরাই ওইসব গল্পে বিজয়ী বীর। কিন্তু সেখানেও আপনি আসলে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পান না।
এ একাধারে ভয়ংকর আর হতাশার। অবশেষে এই সহজ সাধারণ বাস্তব প্রশ্নের জবাবের জন্য আপনাকে দারস্থ হতে হয় অকাল্পনিক কল্পনার ফানুসের কাছে।

কোনো কোনো দার্শনিক হয়ত যুক্তি দেখাবেন যে প্রত্যেক মানুষকে তার নিজ নিজ লক্ষ্য নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নে তার নিজের ইচ্ছার উপরই ছেড়ে দেয়া উচিত। এখন, কোনো ব্যক্তির স্বেচ্ছাউতসারিত নির্ধারিত লক্ষ্য আর জীবনের আসল উদ্দেশ্যের মধ্যে অবশ্যম্ভাবী একটা পার্থক্য আছে। এই মুহুর্তে সেই জলজ্যান্ত পার্থক্যটা ভুলে থাকা যাক। এবং আসুন দেখি, এই সমাজের যান্ত্রিকতা আপনাকে কতটুকু স্বাধীনতা দেয়, যদি নিজের লক্ষ্য নিজেই নির্ধারন করতে যান। দোলনা থেকে কবর, আপনার লক্ষ্য বাছাই কমবেশি নির্ধারিত হয় সমাজের সাথে আপনার অনিবার্য মিথস্ক্রিয়ায়।
আপনি একদম দুধের শিশু হলে কী খাবেন- সে পছন্দ (choice) কি আপনার থাকে? মার কাছে যেটা ভালো, সে তাই খাওয়ায়- মাঝে মাঝে নির্দয়ভাবেও, বিশেষ করে যখন কোনো খাবার আপনার একদমই ভাল লাগে না, যতই আপনি উগরে দিতে চান বা চিল্লান না কেন। মা কেবল মিষ্টি শব্দ করে, ওলেলেলে, মুখে, কখনো বা লাঠি দিয়ে।
শিগগিরই আপনি প্রতিবাদ মুখর হন যদি সেই খাবারটা না দেয়া হয়, যা খেলে একসময় আপনি অহরহ বমি করতেন।

আপনার কোন স্কুলে যাওয়া উচিত? তারা কি আপনার মত নেয় এ ব্যাপারে? সাধারণত, আপনি সেই স্কুলেই যান, যেখানে আপনার বাবা-মার সামর্থ্য আছে পাঠানোর। যদি সামর্থ্যে কুলোয়,তারা আপনাকে সেই স্কুলে পাঠায় যেটা তারা আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো বলে মনে করেন। আর সামান্য যেটুকু আপনার জ্ঞান- তার সিংহভাগই আপনি পান সেখানেই। কিভাবে বুঝবেন যে সেটা সত্য না মিথ্যা?এটা কোনো বিষয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রায় সবাই আপনার কথায় সায় দিচ্ছে।
আপনি কী ঠিক করেন আপনার থাকার জায়গা? কোন ভাষায় কথা বলবেন? কোন পোষাকটা পরবেন? একটা টাই শুধু কোমড়ে জড়ান। আর দেখতে হবে না। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারই কেন হতে হবে শুধু?আনকোরা নতুন একটা পেশা কেন নয়?
লিস্টে কুলোবে না।

নাহ! যে পরিস্থিতিতে জন্মেছেন, আপনি কেবল তার গড়া মাটির পুতুল। হয় খাপ খাইতে শেখো, নয়তো . . . আপনি খাপ খাইতে শিখেছেন। That's all. কিছুসময়ের জন্য হয়তো ফালাফালি করেন, কিন্তু কতক্ষণ?

সাদা কথা হলো, জন্ম হবার পর থেকে আপনার ব্রেইন ওয়াশ হয়ে আছে, জীবনে সম্পর্কে এক গতানুগতিক ধারণা নিয়ে আছেন আপনি। স্কুলে যাও। ডিগ্রি নাও। একটা চাকরি গছাও। বিয়ে কর। স্থিতু হও। বাচ্চা পয়দা কর। এবং এইভাবে একদিন মরে যাও।

জীবন হয়ে যায় উদ্দেশ্যহীন একটা যন্ত্র

----------------------------------------
(লেখাটা বিজ্ঞানবিষয়ক পাক্ষিক নিউজলেটার Science and Nescience এর Purposeless Machine নামের একটি লেখার অনুবাদ। মূল লেখাটা ছাপা হয়েছিল ১৯৯৪ এর ১লা সেপ্টেম্বর সংখ্যায়। মূল ইংরেজিটা দারুণ রসঘন। অনুবাদের আড়ালে হনুবাদ হবার তীব্র আশংকা নিয়েও লেখাটি পোস্ট করলাম, কেবল বিষয়টা ইন্টারেস্টিং বলেই )
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০০৭ রাত ১:২২
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×