সময়টা সকাল সাড়ে দশটা ছিল মনে হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরব ভালবাসার গল্প শুরুর সময়। শুধু নিঃশ্বাস,চোখের দেখা আর খোলা বইয়ের পাতাতে দৃষ্টি ফেরানোর মতই শব্দহীন ছিল এই সময়গুলো। আমি তখন স্কুলে পড়ি। সকালে ডাইনিং টেবিলে হুদাই একখানা বই নিয়ে বসে আছি। ছুটির দিনে আমার এইটাই নিয়ম হয়ে গেছে। বাপের চড়ের ভয়েই হোক আর মায়ের চ্যাঁচামেচির ভয়েই হোক, আমি বই নিয়ে বসে থাকি। খুব মনোযোগ দিয়ে হাজারও রঙের চিন্তা সাজাই, কখনও নিজে নিজেই হাসি, কখনও টেবিলে মাথা দিয়ে চলে যাই স্বপ্নিল ভুবনে। ধরাও পরে যাই... কখনও কখনও। আর আট দশটা ছেলের মতই ছিল জীবনটা। ঘর, স্কুল, টিভি আর খেলা ছাড়া তেমন কিছু হয়তো বুঝতাম না। সময়টাও কি ছিল অন্য কিছু ভাবার!!! মনে হয় না।
এদিনও যথারীতি হাতে একটা বই নিয়ে বসে ছিলাম। সম্বিত ফিরে পেলাম আম্মার ডাকে। আম্মার কাপড়গুলা ছাদে শুকাতে দিতে হবে। ভালই হল, একটা ব্রেক। যাহ্... বইটাকে হাল্কা শক্তি দিয়ে ছুঁড়ে দিলাম টেবিলের আরেক মাথায়। বালতি নিয়ে চলে গেলাম ছাদে। ভালই রোদ উঠেছে। কিছু সময় নিয়েই কাপড়গুলো তারের সাথে শুকাতে দিলাম। যত দেরিতে নিচে যাওয়া যায় ততই ভালো। নাহ! আর থাকা যায় না, ছাদ এক্কেবারে গরম তামার মত হয়ে গেছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে সূর্যটাকে একটা চড় দেবার মত করে হাতটা তুললাম। ভাবখানা এমন যেন, ব্যাটা তোর আর সময় হল না। যা ভাগ। আমার হাত তখনো নামে নাই। পিছন থেকে কিছু মেয়েলি কণ্ঠের হাসি কানে আসলো। ঘুরে দেখি পাশের বাড়ির ছাদ থেকে দুই তিনটা মেয়ে আমার কর্ম দেখে হেসেই খুন। বুঝলাম না, এইটাতে হাসার কি আছে! আর এই বাড়িতে তো এক আন্টি ছাড়া অন্য কোন মেয়ে দেখি নাই আজ পর্যন্ত। তাও আবার তিনটা। ওরা তো এখনও হাসছে। একরকম লজ্জা পেয়েই নেমে এলাম ছাদ থেকে।
এখন টেবিলে বসতে যাব, আরেক ঝামেলা। আমার টেবিলের পাশেই জানালা। সেখান থেকে ওই বাড়ির ছাদ পুরো দেখা যায়। ওই তিনটা তখনো বসে আছে। আমি আগা মাথা কিছু চিন্তা না করে বসে পরলাম। তোদের দাঁত আছে, তোরা হাসতে থাক।
তখনো আমায় কেউ বলেনি সামনের একটা বছরের জন্য এই প্রাণহীন টেবিলটা আর ওই নির্জীব ছাদটা স্পন্দনহীন কিছু মুহূর্তের সাক্ষী হবার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। যখন আমি কিনা সম্পূর্ণই অপ্রস্তুত। আমি অপ্রস্তুত আমার সময়কে অন্য কারও নাম করে দেবার জন্য, আমি অপ্রস্তুত আমার চোখকে অন্য কারও জন্য অন্ধ করে দেবার জন্য, আমি অপ্রস্তুত আমার শরীরকে অন্য কারও জন্য অনুভূতিহীন করে দেবার জন্য। আমি তখনো জানতাম না আমার দিল আমার সবচে বড় শত্রু হতে চলেছে। স্পন্দিত হবে অন্য কারও জন্য, যা এতদিন কেবলি আমার ছিল।
সন্ধায় যথারীতি কি না কি একটা বই হাতে নিয়ে বসে পরলাম টেবিলে। পড়া প্রতিদিনের মতই ৪২০ মার্কা হচ্ছে। সকালের ঘটনাটা এমনিতেই মাথায় আসলো। আমি কি মনে করে একটু তাকালাম ছাদের দিকে। বাহিরে অন্ধকার নামছে। ছাদটা খালি। তবে যে জিনিসটা নজরে পড়ল সেটা ক্ষণিকের জন্য আমায়...... অস্বস্তি??? এইটাই মনে হয় ঠিক। আমার জানালার পাশেই ও বাড়ির দোতালার সামনের রুমের জানালা খোলা। যেটা এই ক’ বছর খোলাই হত না, সেখানে আজ একটা টেবিল এবং যথারীতি এক মনযোগী ছাত্রী মহা উৎসাহে বিদ্যাসাগর ফিমেল ভার্সন হতে মাতোয়ারা। এবং এই ছাত্রী সকালের ওই তিনজনের একজনই তো মনে হচ্ছে! কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকিয়ে থেকে আবার বইয়ের দিকে......
সারাদিন স্কুলেই কেটে যায়। বিকালে স্যারের বাড়ি থেকে এসে ভাবলাম ছাদের উপর থেকে একটু হেঁটে আসি। আজ আর মাঠে যাবার মত শক্তি নাই। আমার এটা একরকম বদঅভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেদিন মাঠে যেতে পারি না সেদিন ছাদে উঠে সূর্যাস্ত দেখি। ভালো লাগে। অজানা কোন কারণে। ছাদে উঠার পর দেখলাম গতকাল রাতের মেয়েটাও দাঁড়িয়ে আছে। আমি জানি না, এখনও জানি না, আমি কি দেখেছিলাম- শুধু জানি আমার পৃথিবী কয়েক মুহূর্তের জন্য থেমে গিয়েছিল। আমি যেন জীবনে প্রথমবার কোন মেয়েকে দেখছি! মনে হল আজকের সূর্যটাও সময় নেবে অস্ত যেতে। আমার সূর্যাস্ত দেখা শেষ হয়ে গেলো তখনি যখন আমার চোখে চোখ পড়তেই সে নেমে চলে গেলো। আমি আর সূর্যের দিকে তাকাই নাই। আমি এই নয় বছরের স্কুল জিবনে একটা সিঙ্গেল মেয়ের সাথে কথা বলা তো দূরে থাক ঠিকভাবে তাকিয়েও দেখি নাই। সেই আমার আজ এক পলকের দেখাতেই আর পলক ফেলার শক্তি নেই। আমি এই মুহূর্তে নিজের উপর সন্দিহান। এই আমিকে আমি এর আগে কখনও আবিস্কার করি নাই। চলে এলাম নিচে।
আজ টেবিলে একরকম আগ্রহ নিয়েই বসলাম। বই খোলার আগে তাকালাম জানালাটার দিকে। অন্ধকার! আমি জানি না, আমি কার ভিতর প্রবেশ করেছি। কোন যুক্তি ছাড়া আরও একবার দেখতে চাই ওই অবয়ব।
রাত ১১ টা। এখনও অন্ধকার! নিজেই মনে মনে হাসলাম! আমি একটা পাগল। ঠিক করলাম কাল টেবিল অন্য রুমে নিয়ে যাব। জানালা লাগাতে যাব ঠিক এমন সময় ঘরটাতে আলো জ্বলে উঠলো, সাথে আমার মনের কোনেও। সেই ছায়া, সেই রঙ, সেই... জানালার পাশে এসে দাঁড়াল। আমিও সাহস করে দাঁড়িয়ে পড়লাম। মিনিট পাঁচেক সময় রাতের আধারকে সাক্ষী রেখে দিলাম এই পরিচয়ের।
সকালে স্কুলে যাবার জন্য মোটামুটি রেডি... শহিদ (কাল্পনিক নাম) ছেলেটা এসে হাযির। আমার জুনিয়র। পাশের বাসাতেই থাকে। প্রচণ্ড রকম ডানপিঠে। এইতো গত মাসে ভর দুপুরে হলুদ পাঞ্জাবি, জিন্স আর খালি পায়ে আমার কাছে এসে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে দাঁত কেলিয়ে বলল,
- ভাইয়া, হিমু সাজছি। তোমার সাথেই প্রথম দেখা করতে আসলাম। পুরা শহর ঘুরব। দশটা টাকা দাও, বাহিরে ভাত খাব।
- দশ টাকায় ভাত খাওয়া হয়ে যাবে?
- আরে হোটেলে যেয়ে মানুষের কাছ থেকে বাকি টাকা চেয়ে নেব।
ওর পাগলামির সাথে আমি আগে থেকেই পরিচিত। তাই কথা না বাড়িয়ে ১০ টাকা দিয়ে বিদায় করলাম। কি কারণে জানিনা, এই ছেলেটা আমার একরকম অন্ধভক্ত। আমি ডাকলে ওর হাজার বড় কোন কাজ থাকুক, দৌড়ে চলে আসবে।
- তুমি? স্কুলে যাবানা? ড্রেস কই?
- ভাইয়া, স্কুল আজ বন্ধ। তারিকুল ফোন করছিল। কলেজের কোন এক স্যার নাকি মারা গেছেন।
- ও!
- কি করবা আজ? চল শহরে যাব।
- ঘোড়ার ডিম। আমাকে বেরোতে দিবে না।
- তোমার বাপ মা এরকম কেন! ধুর, তুমি কি মেয়ে মানুষ?
- বাদ দাও। আমার একটা প্রবলেম হইছে। একটু হেল্প করতে পারবা?
- তোমার জন্য জান হাযির। বল বল......
আমি দাঁড়ি কমা সহ সব খুলে বললাম।
- ভাইয়া তাইলে তো একবার দেখতে হয়। শহিদ বড় বড় চোখ করে বলল।
- পরে দেখ। আগে তুমি মেয়েটার ডিটেইল আমাকে যোগাড় করে দাও। আর শোন আব্বার কানে যেন না যায়। ডাইরেক্ট বাড়ি থেকে বের করে দেবে।
শহিদ মিচকি একটা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। যাবার আগে শুধু বলে গেলো, ভাইয়া তুমি এরকম না আমি জানি। মেয়েটাকে আমার দেখতেই হবে।
আমি নিজেও জানি..................... আবার, আমি নিজেও জানি না।
বিকেল বেলায় হাঁপাতে হাঁপাতে হাযির ছেলেটা।
- ভাইয়া বোথ গুড অ্যান্ড ব্যাড নিউজ।
- কিরকম? ওই ব্যাপারে?
- নাম মিরা (কাল্পনিক নাম), এটা তার ভাইয়ের বাসা, এখান থেকেই এসএসসি দেবে। বাকি দুইটা তার বোন। ওরা চলে যাবে আজ। বাট......
- বাট?
- বাট, তোমার এক বছরের সিনিয়র। কিন্তু বয়সে তোমার চেয়ে তিন মাসের ছোট।
- তুমি এই তারিখও যোগাড় করছ?
- তোমার সিনিয়র শোনার পর এইটা যোগাড় করছি। কিন্তু ভাইয়া তুমি উনার সাথে কথা বলবা ক্যামনে?
- ঐটা পরে।
- আমি জানি, তোমার দৌড়। ভিতুর ডিম। দাড়াও আমি দেখছি।
পারলে ব্যাটা এখনি চলে যায়। আমি অনেক কষ্টে নিরস্ত্র করলাম।
- কটা দিন যেতে দাও প্লিজ। যা করছ এইটুকুই অনেক। আর আমার থেকে না শুনে কিছু করবা না দয়া করে।
- ঠিক আছে। তবে ভাইয়া আমি মেয়েটাকে দেখেছি। তোমার জন্য আমি সব করবো। ডোন্ট লেট হার অ্যাও্য়ে।
- আই উইল। কথাটা বলতে গিয়ে কেমন জানি বুকটা কেপে উঠলো।
রাত ১১.৩০ বাজে। এখনও অন্ধকার। আমি জানি তুমি আসবে। বাসার সব ঘুমিয়ে গেছে। আমি জানালার পাশে যেয়ে দাঁড়ালাম। ঠিক ১৫ মিনিট পর আলো জ্বলল। জানালার পাশে এসে একটু ক্ষণ দাঁড়িয়ে বসে পড়ল টেবিলে। আমিও বসে পরলাম। কোন বই সামনে ছিল জানিনা, তবে আমার সামনে আগত সময়টাকে বেঁধে রাখতে বড্ড ইচ্ছে করছিল।
রাত ২.২০...... আমি এক মুহূর্তের জন্যও চেয়ার ছেড়ে উঠি নাই, নাইবা সে উঠেছে। এর মাঝেই মনে হয় কয়েক শত বার তাকিয়েছি ওদিকে। নিস্পলক তাকিয়ে থেকেছি কতক্ষন। রাতের আঁধার চিড়ে আমার হৃদস্পন্দন পাঠিয়েছি কয়েক হাত দূরে। মূল্য...... আমার প্রতিটা পলকের জবাব আমি তার নির্ঘুম পলকেই পেয়েছি।
রাত ৩.০০ টা। মিরা জানালার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আমিও কোন রকম সঙ্কোচ না করে দাঁড়িয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ ঐভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলাম দুজন। আমি হাতঘড়িটা দেখার মত একটা ভান করলাম। কি বুঝল জানিনা, হাল্কা করে মাথাটা ঝাঁকিয়ে বাতিটা নিভিয়ে দিল। আমার জানালাও বন্ধ হয় হয়............
এভাবেই আমাদের প্রতি রাতে শব্দহীন মোলাকাত হতে থাকে। আমি বিকেলে মাঠে যাওয়া ফুল স্টপ করে দিলাম। আমার বিকেলের এক ঘণ্টা শুধু তার জন্য। বিনিময়ে তার বিকেলটাও আমার। প্রতিটি বিকেলে আমি একটা হুমায়ন নিয়ে চলে যেতাম ছাদে। প্রতিদিনই আমার উঠার ঠিক ৫ মিনিটের মাঝে মিরা চলে আসত। সন্ধ্যা নামত আমার আর তার চোখ ধরে। শুধু চোখের চাহনিতেই সব কথা হত। এক বছরে এমন একটা দিনও ছিল না যেদিন সূর্যটা ডোবার সময় আমাদের পাশাপাশি দেখে নাই। বসন্তের বাতাস যেন তার সুবাস আমার কাছে পৌঁছিয়ে দিত, প্রতি রাতের জ্যোস্না আমায় ওই অবয়বের নুর দেখাত, নিকষ কালো আঁধারে আমি তার খোলা চুল উড়তে দেখতাম, স্বপ্নের মাঝে- পর্দার আড়ালে কথা হত তার সাথে। এমনকি কোন এক বরষার দিনে কাকভেজা হয়েছি একসাথে। তাও নিঃশব্দে। কখনও দুপুরের ভরা থালা শেষ হয়েছে একসাথেই। আবার কোনোদিন আমার হাতের বইটা দেখে নিজের হাতের মুড়িমাখাটুকুন আমার সামনেই ফেলে দিয়েছে ছাদ থেকে। আমি শুধু দেখেছি...... নিঃশব্দে। ভেবেছি, এই ভালবাসার কি কোন জবান নেই। আমি জানি আমার এই বয়সে কিছু করার সাহস, শক্তি যেমন নেই...... ঠিক তেমনি নেই তারও। শব্দ এখানে শত্রু। স্তব্ধতাই কেবল এই বিরান ভুমির মরুঝড়কে বাধা দিতে পারে। আমি তাই ছিলাম বাকরুদ্ধ। যেমনটা ছিল সেও!
শহিদ আমার এইসব কিছুর একমাত্র দর্শক ছিল। শত শত বার আমাকে অনুরোধ করেছে মিরার সাথে কথা বলার। বলেছে স্কুলের পর আমাদের কথা বলার ব্যবস্থা করবে। আমিই সায় দেই নি। অজানা কোন ভয়ে। ভয় ছিল, না জানি এই বিকেল আর রাতগুলো হারিয়ে যায়। আমিই সায় দেই নি............
আমি দুই মাস হল ক্লাস ১০ এ উঠেছি। মিরার পরিক্ষা চলছে। একবার স্কুল থেকে আসবার সময় রাস্তায় দুজনের মুখোমুখি দেখা হয়। আমি শুধু একটা ছোট্ট হাসি দিয়েছিলাম। জবাবে সে না বোধক ভাবে মাথাটা একটু নাড়িয়েছিল, সাথে খুব কষ্টে ফুটিয়ে তোলা একটু হাসি ছিল ঠোঁটের কোণে। আমার কেমন জানি এক শূন্যতা অনুভুত হয় মনের মাঝে।
এরপরও আমাদের দিন কাটছিল আগের মতই।
.................................................................................................................. মিরার পরীক্ষা শেষ হয়েছে কয়েক দিন হল। গত দুই দিন বিকেলে ছাদে উঠে নাই। রাতে রুমেও মনে হয় আসে নাই। আমি দুটো দিনই মাঝরাত পর্যন্ত টেবিলে ছিলাম। পরদিন সকালে জানালার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিল মিনিট দশেকের মত। স্পষ্ট দেখেছিলাম আমি, একটা আকুতি, একটা শঙ্কা! আমি পড়তে পারছিলাম না। আমি পড়তে পারি না......... আসলেই আমি পড়তে পারি না।
দুপুর হতেই আকাশে মেঘ জমা শুরু করেছে। ঝড় আসতে পারে বোধ হয়। বিকেলে আমি প্রতিদিনের মতই ছাদে গেলাম। মিরা আজও আসবে না মনে হয়। হঠাৎ দেখলাম ওদের দরজার সামনে একটা রিকশা এসে দাঁড়াল। কিসুক্ষন পর মিরা একটা বড় ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলো। স্বাভাবিক, পরীক্ষা শেষ। বাড়ি যাবে হয়তো! পাগল মেয়ে, এইজন্য মন খারাপ করে দুদিন ছাদেও আসে নাই। মিরা রিকশাতে উঠার আগে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন। আমি মৃদু হেসে জানিয়ে দিলাম, আমি অপেক্ষা করবো।
রিকশা চলা শুরু করেছে। শহিদ ছেলেটা ক্যান জানি দৌড়িয়ে এদিকেই আসছে! আমার বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে ভিতু কণ্ঠে বলে উঠলো,
- ভাইয়া, সি ইজ গোয়িং ফরেভার।
কোথায় জানি একটা বাজ পড়ল। হাল্কা হাল্কা বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। আজ আর সূর্যের দেখা নেই। আমি দেখলাম রিক্সার ভেতর থেকে কেউ একটা হাত আমার দিকে নাড়িয়ে ক্রমেই ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।
মুষলধারে শুরু হয়েছে বর্ষণ। আমি শহিদকে হাত দিয়ে ইশারা করলাম চলে যাবার জন্য। আমি চাই না আমাদের দুজনের বর্ষণের সাক্ষী কোন মানুষ থাকুক। ( লেখাটি বুয়েট পড়ুয়া এক ছেলের জীবনে ঘটা বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে লিখিত )