somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা : সমাজ ও বাস্তবতার আলোকে

০৯ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষা-ব্যবস্থার মূল রূপরেখাটি কাঠামোগতভাবে ইংরেজদের মাধ্যমে গঠিত, যা তাদের কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে করা হয়েছিল। ফলে স্বভাবতই এ শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধের বিষয়টি পুরোপুরি অবহেলিত। এ শিক্ষাব্যবস্থায় কেবল জাগতিক বিষয়াবলির উপরই গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে একজন শিক্ষার্থী ধর্মীয় শিক্ষা লাভের কোনো সুযোগ পায় না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ধর্মের মূল বিষয় থেকেও সে থাকে অজ্ঞ। ইসলামের হালাল-হারাম, ফরয-ওয়াজিব সম্পর্কে কোনো স্বচ্ছ ধারণাও তার লাভ হয় না। সে শুধু বৈষয়িক কিছু বিষয়ের জ্ঞান লাভ করে। দুনিয়ার জীবন পরিচালনার জন্য, জীবিকা উপার্জনের উপায়-অবলম্বনের জন্য যতটুকু প্রয়োজন শুধু ততটুকু জ্ঞানই সে লাভ করে। ইসলামী মূল্যবোধ তার মাঝে সৃষ্টি হয় না। আল্লাহর স্মরণ ও আখেরাতের জবাবদিহিতা, জাহান্নামের ভয় তার অন-রে সৃষ্টি হয় না। ফলে সে দুনিয়ার জীবনকে একমাত্র জীবন মনে করে। ভোগ-বিলাসিতা ও উপভোগের জন্য কর্মজীবনে বৈধ-অবৈধ বাছবিচার না করে অর্থ উপার্জনে মেতে উঠে। কাজে ফাঁকি দেওয়া, দায়িত্বে অবহেলা, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা ধরনের অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, কলকারখানা, হাসপাতাল, ওয়াসা, ডেসকো, গ্যাস, টেলিযোগাযোগ, পোস্ট অফিস, রেজিস্ট্রি অফিসসহ সকল প্রকার সেবাপ্রতিষ্ঠান সবকিছুই আজ দুর্নীতিগ্রস-। ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও জাতি সকল পর্যায়ে উন্নতির পথে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দুর্নীতি। আর তা এতই ব্যাপকতা লাভ করেছে যে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের প্রথম সারির একটি দুর্নীতিগ্রস- দেশে হিসেবে পরিচিত। এসব ছাড়াও খুন-সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতি, লুণ্ঠন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে দেশ ছেয়ে গেছে। ফলে দেশবাসীর জীবন আজ দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।
মূলত ধর্মীয় শিক্ষা ও ইসলামী মূল্যবোধ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে এ শিক্ষায় শিক্ষিতরা আজ শুধু নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার নয়; বরং তাদের চারিত্রিক স্খলনও ঘটছে। ধর্ষণ, ব্যভিচার, অশ্লীলতা ও নগ্নতায় সমাজ-জীবন দূষিত হয়ে গিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও আজ আর নিরাপদ থাকেনি শিক্ষিত দুশ্চরিত্রদের হাত থেকে। শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি, আসা-যাওয়ার পথে সহপাঠি কিংবা বখাটেদের ইভটিজিং, ধর্ষণ ইত্যাদি আজ আর কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মেয়েদের শিক্ষা-উচ্চ শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকরা আজ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অনেক ক্ষেত্রে তারা মেয়েদের শিক্ষাই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় তরুণ শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় শিক্ষা ও বিধি-নিষেধ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে না পারায় এবং তাদের মন-মানস সেভাবে গড়ে না ওঠায় উঠতি বয়সে তারা নানা রকম অশ্লীলতা ও নগ্নতায় জড়িয়ে পড়ছে। তথ্য-প্রযুক্তির শিক্ষা লাভ করে তার অপব্যবহারে মেতে উঠছে। মোবাইল ইন্টারনেট, অরক্ষিত সাইবার ক্যাফে ও ফুটপাতের সস্তা পর্ণো ভিসিডির সুবাদে তাদের চারিত্রিক অধঃপতন কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌছুচ্ছে তা সচেতন নাগরিকদের কাছে অবিদিত নয়। এসব কিছুর প্রধান কারণ হল, ধর্মীয় শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও চেতনায় উজ্জীবিত না হয়ে শুধু বৈষয়িক বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং আল্লাহ-আখেরাতকে ভুলে দুনিয়ার জীবনকেই একমাত্র জীবন মনে করা। যারা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত, যারা ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী, যারা ধর্মীয় বিধি-বিধান ও অনুশাসন মেনে চলে তারা নিজেরা কখনো দুর্নীতি ও কোনো প্রকার অনৈতিক কিংবা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত হয় না। এমনকি সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস- প্রতিষ্ঠানেও তারা সৎ ও ধার্মিকরূপেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করে থাকে।
ইসলাম নৈতিকতার ধর্ম
ইসলাম শানি-, মানবতা ও নৈতিকতার ধর্ম। ইসলামে রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থা। ইসলামী মূল্যবোধ ও চেতনা একজন মানুষকে করে সচেতন, কর্মক্ষেত্রে করে তৎপর, কর্মঠ, সৎ ও দায়িত্বশীল। সমাজ-জীবনে করে সহমর্মী ও সহানুভূতিশীল। অন্যের দুঃখে দুঃখিত হয় ও অন্যের সুখে সুখী। নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে অন্যের জন্য নিবেদিত থাকার দীক্ষা দেয় ইসলাম। যার বাস-ব চিত্র আমরা দেখতে পাই সাহাবায়ে কেরামের জীবনে। যারা ছিলেন ইসলামী আদর্শের জীবন- নিদর্শন। কুরআনের দ্যুতি আর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্যে ধন্য প্রত্যেক সাহাবীর অন-রে ঈমানী চেতনা এতই উজ্জীবিত ছিল যে, মাটির মানুষ থেকে তাঁরা হয়েছেন সোনার মানুষ। তাঁদের যুগ হয়েছে সোনালী যুগ, ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ। যে যুগের সফলতা ও স্বার্থকতার কথা অমুসলিমরাও স্বীকার করে থাকে।
প্রত্যেক সাহাবী ধর্মীয় অনুশাসন এত গভীর ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলেছেন যে, তাঁরা দুনিয়ায় থেকেই আল্লাহ তাআলার সন'ষ্টির ঘোষণা লাভ করেছেন। তাঁদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, (তরজমা) আল্লাহ তাদের প্রতি সন'ষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন'ষ্ট। তারাই আল্লাহর দল।-সূরা মুজাদালা : ২২
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি সন'ষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন'ষ্ট এবং তিনি তাদের জন্য প্রস'ত করেছেন জান্নাত, যার নিম্ন দেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে এটাই মহা সাফল্য।-সূরা তাওবা : ১০০
এ কারণে সাহাবায়ে কেরাম পরবর্তীদের জন্য ছিলেন আদর্শ। যাঁদের অনুসরণ করলে কেয়ামত পর্যন- যে কোনো যুগের যে কোনো জাতির নিশ্চিত সফলতা ও সৎপথ প্রাপ্তির ঘোষণা স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদান করেছেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×