ইহা তো আর নতুন করিয়া বলিতে হয় না যে জগতের যে গুটিকয়েক আশ্চর্য মানুষকে এখনো বিচলিত করিয়া তোলে তার মধ্যে পুয়েট ভবন সগর্বে স্থান দখল করিয়া আছে । মনুষ্য মনে সাড়া আলোড়নকারী অনেক কিছু এখানে খুজিয়া পাওয়া যাইবে । আমি আজিকে তেমনি এক খানা নিদর্শন বয়ান করিব । এটির নাম হইলো উত্তোলনকারী যন্ত্র ।অনেকেই ইহাকে লিফট মনে করিয়া ভুল করিতে পারেন । কিন্তু একবার ইহাতে চড়িলেই যে ভুল ভাঙিয়া যাইবে তা হলফ করিয়া বলিতে পারি । দেখিতে অত্যাধুনিক কালের কলের যন্ত্র মনে হইলেও একটি বার তার উদর গহবরে প্রবেশ করিলেই চমকিত হইয়া আবিস্কার করিবেনঃ আপনি ইতিহাসে ফিরিয়া গিয়াছেন । অবশ্য ভেতর ও বাইরের চাকচিক্য দেখিয়া এটা বুঝিবার যো নাই কোনক্রমেই । কিন্তু চকচক করিলেই যে স্বর্ণ হয় না তা বোধকরি ইহাই উৎকৃষ্ট ভাবে প্রমান করিতে পারে ।
ইতিহাসকালের ঝিক ঝিক রেলগাড়ির শকট যেমনিভাবে কুউউউ শব্দ করিয়া ক্রমে গতিবেগ বাড়াইতে বাড়াইতে চলিতে থাকে তেমনি আমাদিগের উত্তোলনকারী যন্ত্র ও ঝিক ঝিক করিয়া আমাদিগের অসীম ধরয ক্ষমতার পরীক্ষা নিয়া ক্রমে ক্রমে অতীব যত্ন সহকারে তাহার উদর গহবরের কপাটদ্বয় বন্ধ করে । পার্থক্য এই যে , কুউউ করিয়া কোন শব্দ কোন মনুষ্য শ্রবনেন্দ্রিয় শ্রবন করিতে পারে না । যাহা হউক , গহবরে প্রবেশ করিলেই এক আলো আধারি ভূতুড়ে পরিবেশ কোন অসমসাহসী পালোয়ান কেও গা ছমছম করা অনুভুতিতে আস্থে পৃষ্ঠে বাঁধিয়া ফেলিবে । কিন্তু উপরে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করিলে দেখা যাইবে ছয়টি বৈদ্যুতিক বাতির মধ্যে কেবল মাত্র একটি সততার সাথে দায়িত্ব পালন করিতেছে । বুঝি বা উদরের ভেতরে উদরিয় পরিবেশ সৃষ্টির জন্যই এই বেবস্থা ।
এর পর তার প্রধান বৈশিষ্ট্যের কথা বলা যাউকঃ উত্তোলনের মহা কাব্য । উহার রহস্যাবৃত গহবরে প্রবেশ করিলে এম্নিতেই সময় ধীরে প্রবাহিত হইতে থাকে । তাই নিজেকে action movieর slow motion shot এ আবিস্কার করাই কর্তব্য । সেই সাথে আবার প্রত্যেক তলায় ইহার বিরতি নিবার দৃঢ় প্রত্যয়ে ধরয চ্যুতি হওয়াও দিবালোকের মতই সত্য ও স্বাভাবিক। বিরতি মানে তো আর শুধু থামিয়া , এক নজর দেখিয়া , আবার যাত্রা আরম্ভ করা নয়ঃ ইহা এক তুঘলকি কাণ্ড । জাঁহাপনা তাহার উদরের কপাট খুলিবেন, কিছুক্ষন ভুঁড়ি উন্মুক্ত করিয়া বসিয়া থাকিবেন এবং তাহা বন্ধ করিয়া রাজকীয় ভাবে যাত্রা আরম্ভ করিবেন । তাই মাথার চুল ছিঁড়িবার মত ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিকই ঘটেঃ বিশেষ করিয়া যদি সময় তাড়া করিতে থাকে ।
মানবীয় ভুঁড়িতে বায়বীয় পদার্থের অস্তিত্ব খুজিয়া পাওয়া গেলেও ইহার উদরে বায়ু চলাচলের কোন সুবেবস্থা নাই । তাই অধিক সময় ধরিয়া ভুঁড়িতে অবস্থান করিলে অকালে প্রান হারাইবার সমুহ সম্ভাবনা বিদ্যমান । তাহার উপর রহিয়াছে দুঃসহ গরম । গরমের দিন ইহা তাতিয়া হাবিয়া যোজখ হইয়া থাকে ; উহার ভিতর মিনিট খানেক বাঁচিয়া থাকা অনেক সংগ্রামের ব্যাপার বটে ! যাহা হউক , এত কিছুর পরেও ইহার প্রতি আমার মমতা বিন্দুমাত্র কমে নাই কেননা , আমার মত মর্ত্যলোকের অধমের জন্নে অলিম্পাসের পাহাড়ের চূড়ায় গিয়া পাঠশালায় পাঠ গ্রহণ করিতে যাবার একমাত্র বাহন ,বিপদের সাথিঃ উত্তোলনকারী যন্ত্র ।
তারিখঃ ১৩/০৯/১১
সময়ঃ ১১ সকাল

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




