somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের আদালতে শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ (প্রথম পর্ব)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজকাল অনেকে “ শায়খ আলবানী শায়খ আলবানী” বলে নাক-মুখের পানি একাকার করে ফেলছেন। আলবানী রাহিমাহাল্লাহ যা বলছেন, তা-ই ফুল এন্ড ফাইনাল হিসেবে ধরে নিচ্ছেন। তিনি যে হাদিসকে সহীহ বলেছেন, সেটাই যেন চূড়ান্ত; এরকম ভাব নিচ্ছেন অনেকেই।
কিন্তু আলবানী (রহঃ) হাদিস সম্পর্কে, বিভিন্ন মনীষীর ব্যাপারে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা মুসলিম উম্মাহকে অবাক করে দিয়েছে। নিম্নে তাঁর কিছু মন্তব্য তুলে ধরা হলঃ

●ইমাম বোখারী (রহঃ) কে অমুসলিম আখ্যায়িত
করাঃ
শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) ইমাম
বোখারী (রহঃ) কে অমুসলিম আখ্যায়িত করেছেন।
ইমাম বোখারী (রহঃ) বোখারী শরীফের “কিতাবুত
তাফসীর” এ সূরা কাসাস এর ৮৮ নং আয়াতের
যে ব্যাখ্যা করেছেন, সে সম্পর্কে নাসীরুদ্দিন
আলবানী (রহঃ) লিখেছেন, “এ ধরণের ব্যাখ্যা কোন মুমিন-মুসলমান দিতে পারে না। তিনি বলেন, এ ধরণের ব্যাখ্যা মূলতঃ কুফরী মতবাদ “তা’তীলের” অন্তর্ভূক্ত”।

●শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) সম্পর্কে আলোচনাঃ
শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) লিখেছেন, “আমি শায়খ ইবনে তাইমিয়াকে দেখেছি, তিনি হাদীসের প্রথম অংশকে দুর্বল বলেছেন এবং হাদীসের শেষ অংশকে তিনি মিথ্যা মনে করেছেন। আমার ধারণামতে “হাদীসকে যয়ীফ বলার ক্ষেত্রে এটি ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এর বাড়াবাড়ি, যা তাঁকে হাদীসটি যয়ীফ বলতে উদ্বুদ্ধ করেছে; অথচ তিনি হাদীস বর্ণনার বিভিন্ন পরম্পরা খতিয়ে দেখেননি। এবং এ ব্যাপারে গভীর দৃষ্টিপাত করেননি।”
[সিলসিলাতুস সহীহা, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৩৪৩-৩৪৪, হাদীস
নং ১৭৫০]

●আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) “কালিমুত তাইয়্যিব” নামক বিখ্যাত একটি কিতাব রচনা করেছেন। শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) সে কিতাব সম্পর্কে লিখেছেন, “যারা আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এর এ কিতাবটি সম্পর্কে অবগত রয়েছে, তাদেরকে নসীহত করব, এ কিতাবে যে সমস্ত হাদীস রয়েছে সেগুলোর প্রতি তারা যেন আমল করতে অগ্রসর না হয়, যতক্ষণ না হাদীসগুলো শক্তিশালীভাবে প্রমাণিত হয়। আমি এর উপর যে টিকা সংযোজন করেছি, এর মাধ্যমে প্রত্যেকের জন্য বিষয়টি সহজ করে দিয়েছি। সুতরাং যে সমস্ত হাদীস প্রমাণিত হবে সেগুলোর উপর আমল করা হবে, নতুবা সেটি পরিত্যাগ করা হবে”।
[সহীহুল কালিমিত তাইয়্যিব, পৃষ্ঠা-৪]

▪শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানীর এ কথা উল্লেখ
করে আল্লামা হাবীবুর রহমান আজমী (রহঃ)
লিখেছেন,
“অর্থাৎ নাসীরুদ্দিন আলবানীর একথা বলার দ্বারা মূল উদ্দেশ্য হল, মানুষ যেন আবশ্যকভাবে তাঁকে ইমাম বানায় এবং তাঁর অন্ধ অনুকরণ করে। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আলবানীকে জিজ্ঞেস না করবে এবং তার বিশ্লেষণকে গ্রহণ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লামা ইবনে তাইমিয়াসহ অন্য কোন বিশ্বস্ত ও গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী মুহাদ্দিসের হাদীসের উপরও নির্ভর করবে না।”

●হানাফী মাযহাবকে খ্রিস্টধর্মের সাথে তুলনা করাঃ
শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) হানাফী মাযহাবকে খ্রিস্টধর্মের সাথে তুলনা করে লিখেছেন, “এ থেকে স্পষ্ট যে, হযরত ঈসা (আঃ) আমাদের শরীয়ত অনুযায়ী ফয়সালা দিবেন এবং কিতাব সুন্নাহের মাধ্যমে বিচার করবেন। তিনি ইঞ্জিল, হানাফী ফিকহ কিংবা এজাতীয় অন্য কিছু দ্বারা বিচার করবেন না”।
[আল্লামা মুনযীরি (রহঃ) কৃত “মুখতাসারু সহিহীল
মুসলিম” এর উপর শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) এর টিকা সংযোজন, তৃতীয় সংস্করণ, ১৯৭৭, আল- মাকতাবুল ইসলামি, পৃষ্ঠা-৫৪৮]

▪উল্লেখ্য তাঁর পিতা ছিলেন একজন হানাফি আলেম।
এছাড়া তিনি তার জীবনে দীর্ঘ একটি সময় নিজেও
হানাফী ছিলেন। তাঁর জীবনীতে লেখা হয়েছে,
“প্রথম জীবনে হানাফী, পরবর্তী জীবনে নিজেই
মুজতাহিদ ইমাম”। [সাবাতু মুয়াল্লাফাতিল আলবানী, আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আশ্-শামরানী, পৃষ্ঠা-২, ১৬]

●শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহঃ) এর
প্রতি অভিশাপঃ
শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ সম্পর্কে শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) লিখেছেন “আল্লাহ তায়ালা তোমার হাত অবশ করে দিক এবং তোমার জিহ্ক্ষাকে কর্তন করুক । [কাশফুন নিকাব, পৃষ্ঠা-৫২]

তিনি আরও বলেন , সে হল উটের প্লেগ রোগের মত একটা মহামারী (গুদ্দাতুল বায়ীর)। অতঃপর তিনি হাসতে হাসতে উপহাস করে বললেন, তোমরা কি জানো, উটের প্লেগ কী?

●ড. ইউসুফ আল-কারযাবী সম্পর্কে শায়েখের
উক্তিঃ
তিনি ড. ইউসুফ আল-কারযাবী সম্পর্কে বলেছেন “তুমি ইউসুফ কারযাবী থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখো এবং তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করো”। তিনি ড. ইউসুফ আল-কারযাবী সম্পর্কে আরও বলেছেন “ইউসুফ আল-কারযাবী শরীয়ত বিরোধী ফতোয়া প্রদান করে, তার কাছে রয়েছে ভয়ঙ্কর সব দর্শন”।

●জালালুদ্দিন সূয়ূতী (রহঃ) সম্পর্কে শায়খ
নাসীরুদ্দিন আলবানী লিখেছেন,
“কী আশ্চর্য! জালালুদ্দিন সূয়ূতী তাঁর জামে সগীরে কিভাবে এ হাদীস উল্লেখ করতে একটু লজ্জাবোধ করলেন না!”
তিনি জালালুদ্দিন সূয়ূতী (রহঃ) সম্পর্কে আরও
লিখেছেন- “জালালু্িদ্দন সূয়ূতী (রহঃ) হাঁক-ডাক
ছেড়ে থাকেন।”
[সিল-সিলাতুজ জয়িফা, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৮৯]
ইমাম হাকেম, ইমাম

●যাহাবী এবং আল্লামা মুনযিরি (রহঃ)
সম্পর্কে শায়েখের উক্তিঃ
শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানীর দৃষ্টিতে একটা হাদিস
সহীহ নয়, অথচ অন্যান্য মুহাদ্দিস তাকে সহীহ বলায়
তিনি হাদীসের বিখ্যাত তিন মুহাদ্দিস ইমাম
হাকেম, ইমাম যাহাবী, ইমাম মুনযিরি (রহঃ)
সম্পর্কে বলেছেন,
“হাকেম বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। ইমাম
যাহাবী তাঁর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
ইমাম মুনযিরি (রহঃ) “তারগীব ও তারহীব” নামক
কিতাবে তার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর এটি হয়েছে,
তত্ত্ব-বিশ্লেষণের প্রতি উদাসীনতা, তাকলীদের
প্রতি আত্মসমর্পণ (অন্ধানুকরণ), নতুবা একজন
বিশ্লেষণধর্মী আলেম কিভাবে একে সহীহ
বলতে পারেন”!

●হাফেয তাজুদ্দিন সুবকী (রহঃ) সম্পর্কে শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানী মন্তব্য করেছেন- মাযহাব অনুসরণের গোঁড়ামি তাঁকে প্ররোচিত করেছে। তাঁর কথা উল্লেখ করে এবং তাঁর গোঁড়ামির কথা আলোচনা করে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন উপকারিতা নেই। [সিল-সিলাতুজ যয়িফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৮৫]

মূলতঃ শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী পৃথিবী বিখ্যাত
অধিকাংশ মুহাদ্দিসের হাদীসের সমালোচনা করেছেন। এবং এ সমালোচনার ক্ষেত্রে তিনি হাদীসশাস্ত্রের কোন মূলনীতিরও তোয়াক্কা করেননি। বড় বড় মুহাদ্দিসগণ যে সমস্ত হাদীসকে সহীহ বলেছেন, সেগুলোকে তিনি যয়ীফ বলেছেন, আবার তারা যেটাকে যয়ীফ বলেছেন, তিনি নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সেগুলোকে সহীহ বলেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×