সম্প্রতি সময় আমাদের দেশের ডিভোর্সের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে। সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় সূত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশ প্রতিদিন গড়ে ৩৯ ডিভোর্সের ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন সূত্রে দেখা যায়, আমাদের দেশে ঘন্টায় একজনের ডিভোর্স হচ্ছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন পত্রিকায় তথা টিভি চ্যানেলগুলোতে কতটি ডিভোর্স হচ্ছে তার হয়তো নিউজ করা হচ্ছে কিংবা যাদের ডিভোর্স হচ্ছে তাদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ডিভোর্স এর ফলে কতজন সন্তান পরিবারের আদর থেকে বঞ্চিত তথা বাবা-মার আদর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা নিয়ে ভাবার কিংবা লিখার কিংবা চিন্তা করার মতো আমাদের দেশে কেউ নেই। আমাদের দেশের সেপারেশন পরিবারের সন্তানরা কত দুঃখ কষ্টে বড় হচ্ছে তা নিয়ে দেখার কেউ নেই। হ্যাঁ, দেশে বেশ কিছু এতিম খানা আছে। কিন্তু যাদের বাবা মা থাকতেও নেই। যারা সেপারেশন পরিবার থেকে অর্থাৎ ডিভোর্স পরিবার পরিবারের সন্তানদের থাকার কোন জায়গা কোন সংগঠন কোন কিছুই নেই। এমনকি আমাদের দেশের এসব পরিবারের সন্তানকে ট্যাবু ধরা হয়। দেশের মানুষ ধরেই নেয় এসব ডিভোর্স পরিবারের সন্তানরা কখনোই ভালো কিছু করতে পারবে না, তারা মানুষ হিসেবে ভালো না। ছোটবেলা থেকেই এসব পরিবারের সন্তানদের নানা দুঃখ বঞ্চনায় সমাজের অনেক তুচ্ছ তাচ্ছিল্য বড় হতে হয়। এমনকি আমাদের দেশের এলিট সোসাইটির পরিবার কিংবা সাধারণ পরিবারের মানুষরা তাদের সন্তানকে ডিভোর্স পরিবারের সন্তানদের সাথে মিশতেও মানা করে। আমাদের দেশে তখন দেখা যায়, ডিভোর্স অথবা সেপারেশন পরিবারের সন্তানেরা বিভিন্ন দুঃখ কষ্ট অথবা মানসিক যন্ত্রণায় বড় হচ্ছে। সবাই ভাবে যে ডিভোর্স পরিবারের সন্তানরা মানেই বাজে, খারাপ। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন। অনেকেই হয়তো এসব পরিবার থেকে ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি হতে পারছে না, এর প্রধান কারণই হচ্ছে তাদের প্রতি অবহেলা। এসব ডিভোর্স পরিবারের সন্তানদের নিয়ে ভাবার কেউ নেই আমাদের দেশে বর্তমানে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অধিদপ্তর থেকে অনাথ বাচ্চা পথশিশু কিংবা গরিব বাচ্চাদের নিয়ে ভাবা হলেও এসব ডিভোর্স পরিবারের সন্তানদের নিয়ে কোনো ভাবা হয় না। আজ পত্রিকায় হয়তো কতটি ডিভোর্স হচ্ছে তার পরিসংখ্যান করা হচ্ছে। কিন্তু ডিভোর্সের পর গড়ে প্রায় ১০০ জন সন্তান বাবা-মার আদর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিদিন তা নিয়ে ভাবার কেউ নেই, তা নিয়ে লেখার কেউ নেই। এমনকি এসব ডিভোর্স পরিবারের সন্তানরা বড় হয়ে যদি তারা প্রতিষ্ঠিত হয় তাদের সাথে আমাদের দেশের মানুষের তাদের ছেলে অথবা মেয়েদের বিয়ে দিতে চায় না। তারা ধরেই নেয়, ডিভোর্স পরিবারের সন্তান মানে তারা খারাপ, তারা বাজে। এই বিংশ শতাব্দীতে আমাদের এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে সবারই বের হয়ে আসা উচিত। একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো, ডিভোর্স এর পিছনে সন্তানদের কোন হাত নেই। হ্যাঁ, তারা হয়তো প্রপার গাইড লাইন পাচ্ছে না অর্থাৎ বাবা- মার আদর কিংবা প্রপার গাইডলাইনের অভাবে তারা বিপথে চলে যাচ্ছে। এখন সময় এসেছে তাদের নিয়ে ভাবার। দিনদিন ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে সেই সঙ্গে ডিভোর্স পরিবারের সন্তানদের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের সরকার তথা দেশের সুশীল সমাজের লোকজনকে অথবা বিত্তশালী লোকজনদের অনুরোধ করবো, আপনারা ডিভোর্স পরিবারের সন্তানদের নিয়ে ভাবুন তাদের কিভাবে সমাজের প্রতিষ্ঠা করা যায়, দেশ ও দশের মঙ্গলে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তারা যেন কোনরকম বিপথে না চলে বরং তারা যেন দেশের মঙ্গলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে। ধন্যবাদ।।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৮:৫৫