কয়েকবছর আগে ছোটমামার সাথে সময়ের আপেক্ষিকতা নিয়ে একটা বিরাট আলোচনা করি। অনেক মজার আলোচনা। তখন আমার ইসলামের প্রতি এতটা বিশ্বাস ছিল না। হালকা পাতলা নাস্তিক ছিলাম। তখন মামাকে একটা প্রশ্ন করছিলাম। " সময় বলতে যদি আসলেই কিছু থাকে, আর কেয়ামতেওযদি সময় ব্যাপারটা থাকে তাহলে আল্লাহ বুড়া হন না কেন ? আর সময়ের শেষ কোথায় ? "
গত ১৪ তারিখ রাতে মামা এর ব্যাখ্যা দেন। আমি পুরোটাই লিখে দিচ্ছি। কেউ না বুঝলে করার কিছু নাই।
তিনি বলেন " রিফাত তুমিতো আপেক্ষিকতা পড়ছ। আপেক্ষিকতার ব্যাপারটা আসলেই জটিল। থাক। সহজ ভাবে বলি। পৃথিবী নিজ অক্ষের চারদিকে ২৪ ঘন্টায় ঘোরে। আর এই ২৪ ঘন্টায় সুর্যের আলো পৃথিবীতে পড়ে আর আমরা একটা দিন হিসাব করি। যদি পৃথিবী সুর্য হত আর সুর্য পৃথিবী হত তাহলে আমাদের দিনের সময়টা বেড়ে যেত। হয়ত ৩৬ ঘন্টায় এক দিন হত।
এখন মনে কর তুমি সুর্যে। আর তোমার বন্ধু পৃথিবীতে। তুমি সুর্যে থেকে ২৪ ঘন্টায় পুরো পৃথিবীকে একবার ঘুরতে দেখবে। কিন্তু তোমার বন্ধু ২৪ ঘন্টায় পুরো সুর্যকে একবার ঘোরা দেখতে পারবে না। কারন ওর কাছে ২৪ ঘন্টার পর আর সময় নাই। কিন্তু তোমার কাছে আছে।
ব্যাপারটাকে এবার বড় করে দেখ। তুমি সুর্য থেকেও অনেক দুরে একটা গ্রহে আছ যেখানে পৃথিবীর সাপেক্ষে দিনের হিসেব অনেক বড়। তাহলে তুমি ঠিকই তোমার বন্ধুকে কলেজে ভর্তি বিয়ে বাচ্চা এসব করতে দেখবা। কিন্তুতোমার বন্ধু তোমাকে ছোটই দেখবে। কারণ তোমার ওখানে দিনের হিসেব বড়। কিন্তু তোমারবন্ধুর ওখানে ২৪ ঘন্টাতেই দিন হচ্ছে। তারপর সপ্তাহ মাস বছর কেটে যাচ্ছে।
অথচ তুমি তখন কেবল সপ্তাহ হিসেব করছ। যদি এরচেয়েও অনেক দুরে যাও হিসেব আরও বড় হবে। তখন তুমি তোমার বন্ধুর বাচ্চার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবকিছুই দেখতে পারবা। আর তোমার বয়সও থেমে থাকবে। বুঝলা ?
— হ্যা মামা। বুঝলাম।
— তাহলে বলতো এই বিশ্বজগত থেকেও অনেক দুরে পরপর সাত আসমানের উপরে আল্লাহ বসে আছেন যেখানে সময়ের ব্যাবধান প্রচুর। আল্লাহর বয়সকি কখনও বাড়বে ? তার পক্ষে কি প্রতিটা মানুষের অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ দেখা কোন কঠিন ব্যাপার ??? "
এই হল আমার ছোটমামা। তাকে আমি অনেক শ্রদ্ধা করি। আমি তার মত হতে চাই। প্রকৃত জ্ঞানী। আসলেই কিছু জানতে চাই।
মামা কখনোই সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেননি। ডিপ্লোমা করেছেন। অথচ তার বাহ্যিক জ্ঞান ভাল । আমাদের অনেকেরই জ্ঞান ঐ বই পড়ে পাশ করার মাঝেই শেষ। আসল শিক্ষা চেখে দেখাই হয়ত সমাজের ভাষায় " গোল্লায় যাওয়া "