শাহবাগে তরুণদের আন্দোলনে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা সংবিধানে পুনঃস্থাপন ও সরকারের ব্যর্থতার বিষয়গুলো থাকলে আন্দোলন আরও সার্থক হয়ে উঠত এবং একটি অভিন্ন মাত্রা পেত বলেও মনে করে দলটি। সোমবার দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ক’দিন ধরে শাহবাগ চত্বরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে তরুণ-তরুণীদের জমায়েত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তরুণদের দাবির যৌক্তিকতা থাকতেই পারে। তাদের এ উচ্ছ্বাস ও আবেগের প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সবসময়ই ইতিবাচক বক্তব্য দিয়ে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, তরুণদের এ দাবি মহলবিশেষ দলীয়করণ করার সর্বাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তরুণদের উচ্ছ্বাসকে একদলীয় অখণ্ড কর্তৃত্বাধীন করার জন্য ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের কুটিল ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি নীলনকশায় তরুণদের এ আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার বিষয়টি ইতিমধ্যে জনগণের চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। শাহবাগ চত্বরের সমাবেশস্থলে আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবী ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম পত্রিকায় অগ্নিসংযোগ করেছে এবং পত্রিকাগুলো বন্ধ করে দেয়ার জন্য প্রতিদিন হুমকি দিচ্ছে। পাশাপাশি সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও বুদ্ধিজীবী ড. পিয়াস করিমকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে ‘৭৫-এর একদলীয় ফ্যাসিবাদের সুস্পষ্ট প্রতিধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রখ্যাত বাম নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ শিকদারসহ ৪০ হাজার প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে যারা চরম ফ্যাসিবাদী একদলীয় শাসনের প্রতিষ্ঠা করেছিল, তাদের হাতের ক্রীড়নক হওয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে তরুণদের। এরই মধ্যে নব্যবাকশালী আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে শাহবাগ চত্বরে, আওয়ামী লীগ নেতাকে মঞ্চে উঠতে বাধা দেয়ায় কিশোরী লাকি আক্তারের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। মঞ্চের উপরেই তার মাথায় এবং পিঠে প্রচণ্ড আঘাত করেছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। যারা নিরীহ শ্রমিক বিশ্বজিতের হত্যাকারী, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এসিড নিক্ষেপ করে শিক্ষক-ছাত্রদের মুখ যারা বিকৃত করে দিয়েছে, যারা কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কুপিয়ে আহত করে এবং ঘরে আটকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, যারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নি®পাপ কিশোরীদের নির্যাতন করে সেঞ্চুরির উৎসব করেছে তাদের সঙ্গে নিয়ে কোন আন্দোলনেই নৈতিকতা যোগ হতে পারে না। প্রতিটি আন্দোলন সফল হয় উচ্চ নৈতিকতার মাত্রা যোগ হলে। এদের এবং এদের ম“দাতাদের সঙ্গে রাখা হচ্ছে বলেই শাহবাগ চত্বরে লাকিরা লাঞ্ছিত এবং শারীরিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। এসব ঘটনার মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয় যে, হুমকি, আক্রমণ এবং নানা অপকৌশলে তরুণদের আন্দোলনকে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পথচলাকে নিশ্চিত করেছিল। আর এটি নিশ্চিত হয়েছিল বলেই মানবিক সাম্য ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার আমলে। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এ অবদান জাতি কোন দিন ভুলে যায়নি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল মনে করে, যারা দেশের সার্বভৌমত্ব লংঘন করছে, সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা করছে, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার ওপর বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানীর লাশ ঝুলিয়ে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের নির্লিপ্ততা যদি তরুণরা শাহবাগ চত্বরে আন্দোলনের দাবির পরিধিতে অন্তর্ভুক্ত করত তাহলে তা আরও গ্রহণযোগ্য হতো। কারণ এগুলোও মানবতাবিরোধী অপরাধ। ক্ষমতাসীন দল ও তাদের মন্ত্রী সভায় যেসব স্বাধীনতাবিরোধী রয়েছেন তাদের বিচারের দাবিও একই সঙ্গে উচ্চারিত হলে সারাদেশের মানুষের কাছে শাহবাগের আন্দোলনকারী তরুণদের দাবি আরও যথার্থ হয়ে উঠত।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পদ্মা সেতু কেলেংকারি, শেয়ারবাজার ধ্বংস, সোনালী ব্যাংক, হলমার্ক ও ডেসটিনি কেলেংকারির মাধ্যমে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে যারা লাখ লাখ মানুষকে সর্বস্বান্ত করেছে, তাদের আইনের ফাঁক দিয়ে রেহাই দেয়া হচ্ছে, কারণ এরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ লুটেরারাও মানবতাবিরোধী এবং এরাও অপরাধী। এদের বিচারের জন্য শাহবাগ চত্বরে তরুণদের বর্তমান আন্দোলনে একটি সোচ্চার দাবি হতে পারলে তাহলেই কেবল আন্দোলন সর্বব্যাপী রূপ লাভ করত। সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী, কমিশনার চৌধুরী আলম, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামসহ অসংখ্য মানুষের গুম এবং গুপ্তহত্যা যে সরকারি মদদেই ঘটে চলেছে তা কারও জানতে বাকি নেই। তরুণদের দাবিনামাতে বর্তমান সরকারের এই প্রাণঘাতী অপকর্মের বিষয় উল্লেখ থাকলে তাদের এ আন্দোলন দল মত নির্বিশেষে একটি অভিন্ন মাত্রা পেত।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




