somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন, এক পাগল বাউল

২১ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৫:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ূনের ছেলেবেলার কথা।

হটাত তার গান শেখার শখ হলো। বাবাকে বলার পর গানের শিক্ষক রাখা হলো।
কয়েকদিন পর শিক্ষকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটল। তিনি হতাশ হয়ে বললেন, তোমাকে দিয়ে হবেনা। শুধুশুধু সময় নষ্ট। তোমার গলায় সুর নাই। তুমি বরং তবলা শিখো।

শিক্ষকের কথা হুমায়ূনের মনে ধরল। এবার তবলা কিনে তবলা শিক্ষক নিয়োগ করা হলো। 'তেরে কেটে ধিনতা' পর্যন্ত যাবার পর " তুমি অকৃতকার্য " বলে শিক্ষক পালিয়ে গেলেন। সঙ্গীত জগতের মোহন দরজা হুমায়ূনের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো।

তবে চিরতরে বন্ধ হয়নি। সুরের মূর্ছনা হুমায়ূনের পিছু ছাড়েনি কখনোই। তার ভিতরে এক পাগল বাউল বাস করে। সে গ্রামে গঞ্জে যেখানেই যায়, বাউল বয়াতীদের গান শোনার জন্য তাদের ডেকে আনতো, অথবা নিজেই ছুটে যেতো। এ যেনো এক মোহন আকর্ষণ! তন্ময় হয়ে তাদের গান শুনলে চোখ দিয়ে অশ্রুর ধারা বয়ে যায়। আহা, জীবন কী মধুর!

একদিনের ঘটনা বলি।
হুমায়ূন হবিগঞ্জে বেড়াতে গেছে। সার্কিট হাউজে রাত কাটিয়ে ভোরবেলা মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।
হুমায়ূন তার বাস্তব জীবনে যতটাই বিশৃঙ্খল থাকুক না কেনো, একটা নিয়মানুবর্তিতা সবসময় মেনে চলতো। সেটি হলো, এই সাতসকালে পারতপক্ষে কারো সাথেই সাক্ষাৎ করতো না। এই ভোরবেলা তার একান্তই নিজস্ব অবগাহনের সময়।

তবে সেদিন এক ব্যাতিক্রম ঘটনা ঘটল। এক রূপবতী তরুণী সাথে একটা হারমোনিয়াম নিয়ে এসেছে তার সঙ্গে দেখা করতে।
রূপসী অপ্সরার ডাকে সাধুদেরই শত বছরের ঘুম ভেঙে যায়। আর হুমায়ূনকে শুধু একটা নিয়ম ভাঙতে হবে।
মেয়েটির সাথে দেখা হলো। মেয়েটি সাথে এক প্যাকেট সন্দেশ নিয়ে এসেছে। হুমায়ূন মিষ্টি পছন্দ না করলেও সেদিন মেয়েটির ইচ্ছাপূরণের জন্য তিনটি সন্দেশ পেটে পুরে দিলো।
মেয়েটির দ্বিতীয় ইচ্ছাটাও ভয়াবহ। এই ভোরের স্নিগ্ধ নির্জনতা ভেঙে সে গান শোনাতে চায়। গায়িকা কথা দিলো, শুধু একটাই গান, তার বেশি একটাও না। কথা রাখতেই হবে।
হুমায়ূন বলল, আচ্ছা, গান শোনা যাক।

পুবের আকাশ সবে ফরসা হয়েছে। গাছপালার ফাঁক গলে সূর্যরশ্মি আসতে শুরু করেছে। গ্রাম্য মনোরম একটি আবহাওয়া আছে আশপাশে। তরুণী গান ধরল,—
নিশা লাগিল রে /
বাঁকা দুই নয়নে নিশা লাগিল রে /
হাসন রাজা পিয়ারীর প্রেমে মজিল রে...

গাইতে গাইতে মেয়েটির চোখে পানি এসে গেল। সে চোখ মুছতে মুছতে বলল, "এটা হাসন রাজার একমাত্র প্রেমের গান। আমার অনেক প্রিয়। আমি যতবারই গাই, ততবারই কাঁদি। আপনি যদি আপনার কোনো নাটকে গানটা ব্যবহার করেন, আমার খুব ভালো লাগবে।''

একটা ঘোরের মধ্যে কয়েক দিন কেটে যায়। হুমায়ূন ঢাকায় ফিরে এল।
সত্যিই একটি নাটক লিখে ফেলল।
অচিন বৃক্ষ।
দরিদ্র স্কুল মাস্টারের স্ত্রীর ঠোঁটে গানটি করা হলো।
গান রেকর্ডিং হচ্ছে। অবাক কান্ড! নাট্যকার হুমায়ূন কাঁদতে শুরু করেছ। আশপাশের লোকজনের বিস্ময় কাটে না। হাসন রাজার এক প্রেমের গানে এই রসিক লোকটি কান্নার কী পেলো? পাগল একটা!

অনেকদিন পরের কথে। আগুনের পরশমণি ছবিতে সার্কিট হাউজের সেই তরুনীর মতোই সুন্দরী একটি মেয়ে এক মুক্তিযোদ্ধার প্রেমে পড়েছে। এক পূর্ণচন্দ্রের জোছনা রাতে খুব আবেগ দিয়ে মেয়েটিকে দিয়ে হুমায়ূন আবার গাওয়ালো, নিশা লাগিলো রে...

হুমায়ূনের চোখের পাতা অজান্তেই ভিজে যাচ্ছে। ভেতরে একধরণের তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ অনুভূতির উৎস তার জানা নেই। হয়তো কেউ জানেনা!

#লেখাটা_হুমায়ূনের_কয়েকটা_আত্মজীবনী_থেকে_সাজানো_হয়েছে
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×