somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি ও সুনীল, অর্থাৎ সুনীল ও আমি, অর্থাৎ আমরা চারজন

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুনীলকে আমার অনেক কথা বলার ছিলো। বলা হয়নি, তাই তাকে নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু লিখতে বসলে শব্দ থেমে যায়। কিছুই লিখতে পারিনা।
অথচ সুনীলের প্রকাশিত প্রায় সব লেখাই পড়া হয়ে গেছে অনেক আগে। কত দিন রাত্রি, কত একাকী মুহূর্ত সুনীল ছিলো আমার একান্ত সঙ্গী। কতবার তার লেখার সমুদ্রে ডুবেছি-ভেসেছি অপূর্ব আনন্দ-বেদনায়, সুখ-দুঃখে, উচ্ছলতায়-অশ্রুতে তার হিসাবও তো রাখিনি। তার লেখায় এক সহজবোধ্য সরলতা আছে, যা সহজেই আপন করে নেয়। তাছাড়া লেখার ভেতর হটাৎ কিছু লাইন থাকে, যা সহজেই মনে গেঁথে যায়।

শক্তি একটা কথা প্রায়ই বলতেন, "তা’ও রক্ষে, সুনীল মোটে একবেলা লেখে, দু’বেলা লিখলে সে যে কী দাঁড়াত!"
তা শুনে সুনীল ওঁর ট্রেডমার্ক মার্কা হাসিটা হেসে বলতো, "তা হলে মদটা খাওয়া হত কখন?"
সুনীল তার লেখার যে বিশাল সম্ভার রেখে গেছে, তা অনেক আগেই আয়তনে ছাপিয়ে গিয়েছে রবীন্দ্র রচনাবলীকেও।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “সবাই তো জানে, সে কত বড় মাপের সাহিত্যিক ছিল। কিন্তু কত বড় মাপের মানুষ সে ছিল তা তো সবাই জানবে না। এত কোমল, এত আবেগপ্রবণ মানুষ, এতো নম্র ভদ্রলোক সচরাচর দেখা যায় না। ও যে কতজনকে গোপনে সাহায্য করেছিল, তা আমি জানি।”

সুনীলের বিভিন্ন লেখায় তার নিজের জীবনের ছাপ পাওয়া যায়। তবু সবটা কী আর পাওয়া যায়? "অর্ধেক জীবন" তার আত্মজীবনীর মধ্যবয়সে এসে থেমে গেলেও, অনেক ফাঁক থেকে গেছে। তাই তো সে শুরুতেই হ্যামলেটের লাইন জুড়ে দিয়েছে,
"throw away worser part of it and live the purer with the other half."
সুনীল লেখক শ্রীপান্থর কাছে বলেছিলো, এত প্রেমের দৃশ্য এঁকেছি, কিন্তু শরীরের সম্পর্ক দেখাতে গেলে কলম আটকে যায়। কেন? না, নিজের শরীরটাই কীরকম অস্থির হয়ে ওঠে। ওটা সাহেবরাই পারে। যেটা আড়ালের দিক সেটা আড়ালে রাখাটাই তো ভাল।”
তার খুবই প্রিয় ছিল বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘অটোবায়োগ্রফি’, কিন্তু স্বীকার করত, জীবনের সব ভাললাগা, মন্দলাগা, জয়-পরাজয়, প্রেম-ঘৃণা, উচ্চতা-নীচতা, দোষ-গুণ, মহত্ত্ব-ক্ষুদ্রতা, ওভাবে বলা অসম্ভব কঠিন, প্রায় অসম্ভব।

সুনীলের ইচ্ছা ছিলো, মানিকবাবুর ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র মতো একটা উপন্যাস লিখে ফেলতে পারলে সব লেখা বন্ধ করে দিবে।
কত উপন্যাস লেখা হয়ে গেলো তবু আক্ষেপ তার গেলোনা, সেই মনের মতন উপন্যাসটা না লেখাই থেকে গেলো!

সুনীলের প্রথম প্রেম ছিলো কবিতা।
সুনীল একজীবনে এতো এতো কবিতা লিখেছে শুধু একটা কবিতা লেখার জন্যই। সেই কবিতাটা লেখা হয়েছিলো কী না, তা আর জানা গেলো না!

প্রথম কাব্যগ্রন্থ "একা এবং কয়েকজন" লিখলেও সুনীলের বিষণ্ণ সুন্দর কবিতাগুলোর যাত্রা শুরু "আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি" থেকে। "একা এবং কয়েকজন" নামটা সুনীলের মায়ের খুব পছন্দের। এই নামে তার একটা উপন্যাসও আছে এই উপমহাদেশের বিপ্লবীদের নিয়ে। সুনীলের শান্তিনিকেতনের বাড়িটার নামও "একা এবং কয়েকজন"।

কফি হাউসের আড্ডা গানে একজন নিখিলেশ আছে। সুনীলেরও একজন কবিতার বন্ধু আছে নিখিলেশ। তাকে নিয়ে কখনো বলছে,
"আমি ও নিখিলেশ, অর্থাৎ নিখিলেশ ও আমি, অর্থাৎ আমরা চারজন।"
আবার বলছে,
"নিখিলেশ, তোর সঙ্গে জীবন বদল করে কোনো লাভ হলো না আমার।"
নিখিলেশ হয়তো সুনীলের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। আর তার কবিতার একান্ত প্রেয়সী নীরার কথা তো সবাই জানে!

সুনীল নিজে উদ্বাস্তু জীবন কাটিয়েছে। তবু সে সবসময়ই আশাবাদীদদের কাতারে ছিলো। সুনীল তার মৃত্যুর আগের জন্মদিনে একটা কথা বলেছিলো,
“মরে যাওয়ার আগে আমার একটাই আকাঙ্ক্ষা। পৃথিবীজুড়ে এই হানাহানি, রক্তপাত, কুৎসিত ধ্বংসলীলা বন্ধ হোক।”

আজন্ম রোমান্টিক এই মানুষটার ভালোবাসার জন্য কাঙালপনা আর গেল না!
"তবুও আমার জন্ম কবচ, ভালোবাসাকে ভালোবেসেছি
আমার কোনো ভয় হয় না
আমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না।।"
অবলীলায় লিখতে পারে মনের কথা,
"আমি নাস্তিকের গলায় চিৎকার করে নিজের ছায়াকে ডাকি"
অথবা,
"বিষণ্ণ আলোয় এই বাংলাদেশ
এ আমারই সাড়ে তিন হাত জমি
যদি নির্বাসন দাও,
আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াব
আমি বিষপান করে মরে যাব।"

একবার যে কবিতা ভালোবেসেছে, তার আর নিস্তার নেই। শুধু কবিতার জন্য জীবনযাপন, আদিগন্ত পৃথিবী ভ্রমণ।
"শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়।"
আবার বলেছে,
"এক এক সময় মনে হয়, বেঁচে থেকে আর লাভ নেই
এক এক সময় মনে হয়
পৃথিবীটাকে দেখে যাবো শেষ পর্যন্ত...
সন্ধ্যের আকাশ কী অকপট,
বাতাসে কোনো মিথ্যে নেই,
তখন খুব আস্তে, ফিসফিস করে, প্রায়
নিজেরই কানে-কানে বলি,
একটা মানুষ জন্ম পাওয়া গেল, নেহাৎ অ-জটিল কাটলো না!"

(ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ ব্যতীত লেখকদের মন্তব্য ও কবিতার অংশ সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×