somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কত যে খুঁজেছি তোমায়...নিলয়

১১ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১. 'এই ওঠ!' পাশ থেকে ডাক দিলো নিলয়দা। শুনে একবার তাকিয়ে পাশ ফিরে শুলাম আবার। সারারাত গান বাজনা মৌজ মাস্তি করার পর আর কি ভাল্লাগে!
'ওঠ!' এবার ডিরেক্ট লাত্থি! 'চটকানা খাবি?'
'কি হইছে?' চোখ ডলতে ডলতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে ১১টা বাজে।
'স্টুডিওতে যামু...তমালরে রেডি হইতে কও। আর লগে ৫০০টাকা।'
'তমালরে আপনে কন...আর ট্যাকা টুকা নাই!'
'সিগারেট আছে?' চোখ ইশারা দিয়ে বালিশের পাশে দেখিয়ে দিলাম। একটাই আছে। 'তমালরে তো টিএন্ডটি তে পাই না...বছরে ১৪মাস নষ্ট থাকে।' ভুশশ করে ধোঁয়া ছেড়ে বলল। (তখন মোবাইলের যুগ ছিল না।)

চান্স পেয়ে বললাম 'আমি বাসায় যামু! সন্ধ্যায় দেখা যাক কি অয়।'
'না গেলে কিন্তু মিস।' হাসতে হাসতে বলল নিলয়দা। প্রানপনে শার্ট দিয়ে ভুড়ি ঢাকার চেষ্টা করছিলেন আরেক হাতে টুপি।

এই ফাঁকে তমাল হাজির। খালি গা। গলায় ছোট্ট টাওয়েল। মাথা ভেজা। 'নিলয়দা কি যাবেন নাকি আজকেও?' ঠোঁটে সেই মিষ্টি লজ্জিত হাসি...হাত মাথা মোছায় ব্যস্ত।

'তুমি কহন উঠলা...আমারে ডাকও দিলা না!' বিছানা থেকে উঠে স্যান্ডেল পড়তে পড়তে বললেন। কন্ঠে অভিযোগ।

'আরে ফোন আইছিল। বাইরে যামু।' কন্ঠে একটা তাড়ার আভাস পেলাম।

'তাইলে লও একলগে যাই...অয় যাইবো বাসায় আর তুমি আমার লগে কাম শেষ অইলে আবার এক লগে আইয়া খেলা দেহুম।' বুক পকেটে নিলয়দা প্রেসারের ওষুধ পাতি ঠিকমতো পকেটে ভরতে ভরতে বলল। অসম্ভব ক্রিকেট পাগল ছিলেন তিনি।

'নাহ! আর যাই কন বাংলাদেশের আর ভরসা নাই! আৎকা বাইরের বলে খুচা দিয়া আর কদ্দুর যাইবো কন?' গিটার মুছতে মুছতে রাগত স্বরে মতামত জানালো তমাল। 'চল। তোরে আমরা মোড়ে নামাইয়া দেই। তুই যাইসগা।'

জুতা পড়ে তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে আসলাম। তিনজন রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। নিলয়দার হাত ধরে ঝাকুনি দিয়ে রিক্সায় তুলে দিলাম।

সেই শেষ। আর হাত ধরার সুযোগ পেলাম না। এই ৫টি বছর ধরে শুধু ঐ স্মৃতিটাই ভাসে।

২.
বাংলাদেশের ছেলেপুলেরা প্রচুর গান শোনে। গান করেও। কিন্তু ভিতরে কি লালন করে তা আমার কাছে রহস্যময় মনে হয়। আমি এখনকার মিউজিক কিছু বুঝি না। না দেশের, না বাইরের। গত ১০ বছর যাবৎ আমি কোন গান শুনিনি। সঙ্গীতজগৎ থেকে নির্বাসন নিয়েছি। অনেকে বলে "মিউজিক শোনেন না...তাহলে আর বুঝবেন কি?" কথা সত্য।
কিন্তু মনে মনে বলি 'আমি যা শুনেছি আর বুঝেছি...তার কতটুকু তোরা পেয়েছিস!'

আমার গান শোনার কান, গানের জন্য তৃষ্ণা তৈরী হয়েছিল সেই ১৯৭৮ সাল থেকেই।

আজ নিলয়দার মৃত্যু বার্ষিকী। ৫বছর আগে ঠিক এই দিনে উনি চলে গিয়েছিলেন। উনার মুখে হ্যাপি'র সেই রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলো শুনতাম।আমি চাই প্রতিটি ঘরে ঘরে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের চাহিদা তৈরী হোক।

ঠিক যেমনটি নিলয়দা চাইতো।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৩২
৩১টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×