ডিএসএলআর
সেবার একটা বোনাস পেয়ে আমার কলিগরা যখন আলমারী-খাট ইত্যাদি ইত্যাদি প্রয়োজনীয় বস্তু কিনছিল আমি তখন সাহস করে একটা ক্যামেরা কিনলাম। জানিনা বাসায় গিয়ে বউয়ের কী রুদ্র মূর্তিটাই না আজ দেখতে হয়! খুব বেশি হলে বাসা থেকে বের করে দেবে আজকের মতো! উনি সাধারণত বাজে খরচ পছন্দ করেন না, তবে জামা-শাড়ি-গয়না এগুলো কিন্তু বাজে খরচের মধ্যে পড়ে না; আর অন্যদিকে একটা ক্যামেরা কেনার জন্য আমি যে বাসনা এতদিন পোষন করে রেখেছিলাম, তা সেদিন প্রস্ফুটিত হলো। অনেক সাহস সঞ্চয় করার চেষ্টা করে অবশেষে দুরুদুরু বুকে বাসায় গিয়ে আমার বউকে ক্যামেরার ব্যাগ দেখিয়ে বললাম, দুপুরের খাবার নেবার জন্য একটা ব্যাগ কিনেছি দেখো তো কেমন?
সে হাতে না নিয়েই বললো, ভাল হয়েছে। তোমাকে কতদিন ধরে একটা ব্যাগ কিনতে বলি, কিনো না।
- এই যে আজকে কিনলাম!
- ভাল হয়েছে। হাত মুখ ধুয়ে আসো চা করি।
বললাম, খাবার নেবার জন্য যে নতুন বাটি কিনছি সেটা দেখবে না?
- বাটিও কিনছো। বের করো দেখি।
বাটি বের করতে গিয়ে একটা ডিএসএলআর বের করলাম দেখে আমার বউ চোখ বড় বড় করে খাটে বসা অবস্থা থেকে লাফিয়ে উঠে বললো, ইয়া আল্লাহ! এইটা তুমি কি করছো! ক্যামেরা কিনছো?
- হুম
- কেন?
..... পরের অংশটা পুরাই ইতিহাস.... ) ) )
ইতিহাসের কোনো কিছুই উল্লেখ করতে চাই না, শুধু তার তোলা প্রথম ছবিটার বর্ণনা দিতে চাই। ছবির সাবজেক্ট আমি যেখানে আমার গলা থেকে ভূঁড়ি অবধি কিছু অংশ দেখা যায়!
আপনি কি Clash of Clans খেলেন?
সাবধান, CoC সমাজটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে! ডেসটিনি টাইপ গেম একটা! যেদিকেই তাকাই, যাদের কথাই শুনি শুধু CoC আর CoC.. কেমনে কী? বাসে-রিক্সায়-রাস্তাঘাটে, পড়ার টেবিলে, বন্ধুদের আড্ডায়, খেলার মাঠে, স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে সবখানেই একই চিত্র। কথা নেই বার্তা নেই, ইন্টারনেট বা ওয়াইফাইটা চালু করে দিয়ে চলছে CoC খেলা! কত সময় যে নষ্ট হচ্ছে মানুষের, তারা কিছুই বুঝতে পারতেছে না। সিগারেটের মতো একটা নেশা ধরে যাচ্ছে, একবার শুরু করলে আর ছাড়তে পারছেনা কেউ সহজে। এক বন্ধু একবার ফেসবুকে বলেছিল, যারা টাউন হল ৭ বা ৮ অবস্থায় খেলা ছেড়ে দেয় তারা নাকি মানুষও খুন করতে পারে!!! আমি বলি, এভাবে চলতে থাকলে সৃজনশীলতা নষ্ট হতে হতে এক সময় মানুষ.... এক সময় মানুষ... এক সময় মানুষ ....... (আর লিখতে পারতেছি না, সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! CoC তে টাউন হল ৮, এক্সপি ৯০ আর HayDay খেলা বাদ দিছি মাস ছয়েক হবে... এখন অপেক্ষায় আছি কবে CoC খেলা বোরিং লাগবে আর খেলা বাদ দিবো... আমার কাছে অনেক ভিলেজ/ওয়ার বেজ এর মডেল ডাউনলোড করা আছে, কারো লাগলে আওয়াজ দিয়েন )
আফটার শক
অনেকের মতোই ভূমিকম্প ব্যাপারটা আমার কাছেও ভীতিকর। যেহেতু ভূমিকম্পের খবর আগাম দেবার বা পাবার কোনো প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি কাজেই আমার মতো দুর্বলচিত্তের মানুষের জন্য পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের ভূমিকম্পের খবরই ভীতিকর। ইদানিং নেপাল, ভারত বা মিয়ানমারে যে ভূমিকম্প হবার ফলে আমার শহর যে ঝাঁকুনি খেলো তাতেই তো আমার অবস্থা কাহিল। এখন যে বাসায় ভাড়া থাকছি তাতে নির্মাণগত কারণে হোক বা অন্য যে কোনো কারণেই হোক ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিটা একটু কম লাগে। আর তাছাড়া আমার চামড়া একটু মোটা! নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রথম ঝাঁকুনির সময় আমার শহরেও যথেষ্ট অনুভূত হয়েছিল, কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারনে আমি তা বুঝতে পারিনি। বুঝতে যে পারিনি একথা বলায় এক বন্ধু বললো, যে আজকে ভূমিকম্প টের পায়নি তার মতো অভাগা আর একটাও নাই! বুঝলাম না, ভূমিকম্প বুঝতে না পারায় অভাগা হলাম কেমনে!
যাই হোক, ভূমিকম্পের চেয়েও বড় সমস্যা হলো, আফটারশক! ভূমিকম্প তো হঠাৎ করেই হয়ে যায়, কিন্তু আফটারশক তো বলে-কয়ে আসে! একটা বড় ভূমিকম্পের পরে কয়েকটা ছোট/বড় আফটার শক হতে পারে, কাজেই একটা ভূমিকম্প হবার পরে ভয়টা আরো বেড়ে যায়। আর আফটার শক ভীতিতে টয়লেট তো রীতিমত একটা ভয়ঙ্কর জায়গা। আমার মতো যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে তারা হয়তো জেনে থাকবেন, টয়লেটে কী পরিমাণ সময় ব্যয় করতে হয়! সেবার ভূমিকম্পের আঁচ পেয়ে যখন আফটারশকের অপেক্ষা করছিলাম তখন কয়েকদিন খুব ভয়ে ভয়ে থাকলাম। তারপর এক সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে টয়লেটে ঢুকেছি প্রাকৃতিক কাজ কর্ম সেরে একটা গোসল দেবো বলে; কমোডে বসে আনমনা হয়ে কিছু একটা ভাবছি, টাকা পয়সার হিসাব মেলাচ্ছিলাম হয়তো, এমন সময় শরীরটা মনে হয় দুলে উঠলো। প্রচন্ড গরমে সারাদিন এখানে সেখানে ছুটোছুটি করে শরীর দুর্বল তাই এমনটা হলো বলে ভাবলাম, পরক্ষণেই বালতির দিকে তাকালাম! যদিও বাসায় পানির সমস্যা হয় না তবুও এক বালতি পানি সবসময় ভরা থাকে। বালতির পানি অলস ভঙ্গিতে নড়ছে! সর্বনাস! তাহলে ভূমিকম্পের কবলে পড়লাম! কিন্তু এখন তো দৌড়ে বের হতে পারবো না, তাহলে ভূমিকম্প থেকে বাঁচলেও সমাজ গ্রহণ করবে না। অন্তত কিছুটা সময় তো ব্যয় করতেই হবে। উত্তেজনা টের পাচ্ছি নিজের মধ্যে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখা বেশী জরুরী। বাসায় এই মুহুর্তে কেউ নেই, কাজেই আপাতত নিজেকে নিয়ে ভাবলেই চলবে। সামাজিক হবার জন্য কিছুটা সময় যখন ব্যয় করতেই হবে এর মধ্যে ভূমিকম্পের আরেকটা ঝাঁকুনি না এলেই হয়। তাকিয়ে রইলাম বালতির পানির দিকে একদৃষ্টিতে, অন্যদিকে সমানে কাজ চালাচ্ছি। নাহ, পানি আর তেমন নড়ছে না। কিন্তু রিস্ক তো নেয়া যাবে না। ছোটঘর থেকে বের হয়েই প্রথমে মানিব্যাগ, মোবাইল আর বাসার চাবি নিতে হবে টেবিলের উপর থেকে, তারপর একটা শার্ট নিয়ে সোজা বাসার বাইরে দৌড় দিতে হবে। আচ্ছা সার্টিফিকেট গুলো কি নেবো সঙ্গে? শুকনা খাবার? চিড়া? আর কি কি নেয়া যায়? ওহ হো, চুলায় ভাত বসিয়েছি, গ্যাসের চুলা বন্ধ করতে হবে। বীনুকে একটা ফোন করা দরকার, ওদিকে ভূমিকম্পের কী অবস্থা জানতে হবে। নাহ, পানি আর নড়ছে না, এদিকে আমারো কাজ শেষ প্রায়। কমোড থেকে উঠে দাঁড়াতে যাব এমন সময় দেখলাম, শাওয়ার থেকে একটা ফোঁটা পানি টুপ করে পড়লো বালতিতে আর বালতির পানিতে ঢেউ খেলে গেল একটা! তারমানে, আগেরবারও কি বালতির পানিতে আফটার শকটা এসেছে শাওয়ারের টুপ পিছলে পড়া পানি থেকে?
ফটো: গুগলমামা
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:০৯