somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরিচিত হিমুর পরিচিত জীবন-১

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



০১.
মাথায় ব্যথা হচ্ছে। খুব বেশি না। মাথার একপাশ থেকে আরম্ভ করে মগজকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে ঘুরছে। একবার প্রথমের জায়গায় ফিরে এসে কিছুক্ষণ বিরতি, তারপর আবার আরেকপাক। প্রথমে তো ভেবেছিলাম এটা হিমুত্বের লক্ষণ! কিন্তু পরে এর কারণটা বের করে ফেললাম। হঠাৎ পরিচিত কাউকে দেখে চিনতে না পারলে এরকম ব্যথা হয়। আগে হতো না। কিন্তু এই পথে আসার পর থেকেই মাথাটা বিদ্রোহ করছে। অনেকটা ইংরেজ শাসনামলের মতো। ভারতীয়রা হঠাৎ করে মাথা চাড়া দিয়ে বলে- আক্রমণ! ব্যস বেঁধে গেল লড়াই। কিন্তু লড়াইয়ে কখনই ভারতীয়রা জিততো না। সেরকমই, মাথার যেকোনো একপাশ থেকে বেরিয়ে আসে- আক্রমণ! কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারে না। নাম মনে পড়লেই আক্রমণ নিজে থেকেই দমণ হয়ে যায়। আমাকে আর বেশি কিছু করতে হয় না। আপাতত ব্যথাটা বেড়েই চলেছে। আমি ফুটপাথের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। মাথার উপর গনগণে সূর্যটা বাংলা মাসের নাম মনে করিয়ে দেয়। যদিও মাসের নাম মনে রাখাটা আমার স্বভাবের মধ্যে পড়ে না। তবুও নিঃসন্দেহে বলতে পারি- এটা চৈত্রমাস।

কিছুক্ষণ আগেও রাস্তা দিয়ে সুস্থভাবে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে একটা সাদা পাজেরো আমার পাশে এসে থামলো। একেবারেই কাছে নয়; প্রথমে আমাকে ওভার টেক করলো, তারপর থামলো। আমি কয়েককদম এগোতেই গাড়ির সমান্তরালে চলে এলাম। গাড়ির ভেতরে একবার তাকাতেই মনে হলো, পরিচিত কাউকে দেখলাম। সত্যিই আমাকে অবাক করে দিয়ে জানালা দিয়ে অর্ধেক মাথা বের করে এক ভদ্রমহিলা বললেন, হিমুভাই কেমন আছেন?
আশেপাশে তাকিয়ে নিশ্চিত হবার চেষ্টা করলাম, আমাকেই বলছে কি না। উনি আবার বললেন, হিমু ভাই কেমন আছেন?
“জ্বী ভাল”, বললাম। বললাম ঠিক তা নয়, মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো। এবার ভাল করে তাকালাম, ভদ্রমহিলার বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে। রঙ্গিন শাড়ি পড়েছেন। দামিই হবে। ভদ্রমহিলাকে বেশ মানিয়েছে। ভদ্রমহিলাই বটে, পাজেরোতে বসে আছেন, অভদ্রমহিলা তো আর বলা যায় না।
“হিমু ভাই, আগে যখন বলতেন রাস্তায় রাস্তায় হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে ঘুরে বেড়ান, তখন বিশ্বাস করি নাই।”
“এখন বিশ্বাস হচ্ছে তো?”
“জ্বী বিশ্বাস হচ্ছে। হিমু ভাই, আপনি কি আমাকে চিনতে পারে নাই?”
এধরণের প্রশ্নের সম্মুখিন প্রায় হতে হয়, তাই উত্তরাটা মোটামুটি রেডিই থাকে। এসময় ভদ্রমহিলার পাশে বসা এক ভদ্রলোকের হাতে মোবাইল ফোন বেজে উঠলো, কলটা রিসিভ করে নিচু গলায় কিছু একটা কথাবার্তা সেরে বললো, ম্যাডাম আপনার ফোন।
ভদ্রমহিলা প্রায় কয়েক মিনিট অনবরত কথা বলে গেলেন। তারপর কলটা কাটার চেষ্টা করলেন খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে, কিন্তু মনে হলো অভিজ্ঞতা কম। আমার দিকে ফিরে বললেন, হিমু ভাই, যাই। খুব তাড়া আছে। আপনার সাথে আবার দেখা হবে।
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। উনি বললেন, আপনার পাঞ্জাবির কি পকেট আছে?
এবার আমি না সূচক মাথা নাড়লাম। উনি আবার বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। আমার কার্ডটা দিচ্ছি, রাখেন।
ভদ্রমহিলা পাশের সহকারীর দিকে তাকাতেই উনি বললেন, সরি ম্যাডাম কার্ড শেষ হয়ে গেছে।
আমার কিঞ্চিৎ সন্দেহ হলো, হয়তো কার্ড শেষ হয়নি। ব্যাটার মনে হয় আমাকে পছন্দ হচ্ছে না, তাই কার্ড দিতে চায় না!
“হিমু ভাই, কিছু মনে করবেন না। আজকে আপনার জন্য আমার হাতে টাকা পয়সা এসেছে আর আপনাকে আমি কার্ড দিতে পারলাম না।”
“না না, কোনো ব্যাপার না। তাছাড়া কার্ড দিলেও আমি হারিয়ে ফেলতাম, কার্ড হারানোটা হিমুদের স্বভাব।”
“শান্তি পাইলাম। এখন যাই হিমু ভাই।” উনি কথা শেষ করার আগেই পাজেরোটা হুস করে বেরিয়ে পড়লো নো-পার্কিং এলাকা থেকে। ভাগ্য মন্দ হলে হয়তো এতক্ষণে পুলিশ এসে হাজির হতো। তারপর মামলা! যা হোক, সেটা হলেও ভাল হতো। ভদ্রমহিলার পরিচয়টা অন্তত জানা যেত। ঠিক এখান থেকেই মাথা ব্যথার উৎপত্তি বলা চলে।

এখন মাথাটাকে বেশি প্রশ্রয় দিলে চলবে না। পেটটাও জানান দিচ্ছে ওরও সমস্যা হচ্ছে, তা না হলে আবার বিদ্রোহ। দু’দিক থেকে দু’মুখী আক্রমণ।
কেল্লা ফতে বাজি মাত
আমি হইলাম পগার পাড়!

আপাতত পগার পাড় হওয়া যাবে না। তাহলে পাজেরো রহস্যের কূল কিনারা করা যাবে না। তারচেয়ে বরং হাঁটা দিই। জরিনা খালার বাসাটা বেশি দূরে না। সূর্যটা পশ্চিম দিকে ঢলে পড়া শুরু করলেও একেবারে নেমে যায় নি। মানে দুপুরের খাওয়াটা বোধহয় কপালে জুটবে।
ছোটবেলা থেকেই জরিনা খালাকে খালা হিসেবে জেনে এসেছি। তবে কথা হলো, সম্পর্ক কতটুকু গভীর তা আমি জানিনা। তবে আমার ধারণা, লতায় পাতায় প্যাঁচানো কোন একটা সর্ম্পক খুঁজে পাওয়া যাবে হয়তো। আগে জরিনা খালার সঙ্গে আমাদের খুব একটা ভাল সর্ম্পক ছিল না। কারণ হিসেবে যতদূর জানি তা হলো, খালু সেসময় মানসিক হাসপাতালে ছিলেন। এখন অবশ্য তিনি মানসিক হাসপাতালে নেই। তবে মাথার গ-গোলটা বোধহয় এখনো পুরোপুরি যায়নি। খালু যে পাগল হয়েছিলেন এ ব্যাপারে আমার যথেষ্ট মতবিরোধ আছে। তাঁর পাগল হওয়ার ঘটনাটা আমার কাছে সাজানো মনে হয়।
উনি ছিলেন একটা প্রাইভেট ফার্মের একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের বড় কর্মকর্তা। যদিও তিনি নাকি ছাপোষা জীবন ধারণ করতেন অনেকটা সরকারি চাকরিজীবিদের মতো। আলসেমি আর গা-ছাড়া স্বভাবের ছিলেন তিনি। তবে অফিসে কখনো দেরি করে যেতেন না বা অফিস কামাই করতেন না। সকালে বাসা থেকে টিফিন নিয়ে বের হতেন, বাইরের কিছু খেতেন না। নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন আরকি।
কিন্তু হঠাৎই তিনি অফিসে দেরি করে যাওয়া শুরু করলেন। বাসা থেকে বের হতেন ঠিক সময়ে কিন্তু অফিস পৌঁছাতেন লাঞ্চের ঠিক আগে আগে। তৃতীয়দিন এমডি সাহেবের সামনে পড়লেন। খালুকে ডেকে পাঠালেন।
“স্যার আসবো?” দরজাটা একটু ফাঁকা করে মাথা গলিয়ে বললেন খালু।
“জামাল উদ্দিন সাহেব, আসুন।”
“হু, আজ এত দেরি করলেন কেন?”
“স্যার কী বলছেন! আমি তো ঠিক সময়ই এসেছি। বাসা থেকে বের হলাম আটটায়। তারপর তো কোথাও যাইনি। আমার তো মনে হচ্ছে, আপনারা সবাই আগেই এসে পড়েছেন-”
“আপনি থামুন”, বললেন এমডি সাহেব। “আপনার কি শরীর খারাপ?”
“জ্বী না, স্যার।”
“আপনি এরকম উল্টাপাল্টা কথা বলছেন কেন? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখুন তো ক’টা বাজে!”
জামাল উদ্দিন সাহেব হাত ঘড়ি দেখার ভঙ্গিতে হাতের দিকে তাকালেন। কিন্তু তাঁর হাতে ঘড়ি নেই। বললেন, “স্যার, ঘড়ি নেই সঙ্গে।”
এমডি সাহেব বিরক্তমুখে তাঁর দিকে তাকালেন। বললেন, আপনার ডান দিকে দেয়ালে তাকিয়ে দেখুন, বড় একটা ঘড়ি ঝুলছে।”
জামাল উদ্দিন সাহেব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলেন। লাঞ্চ ব্রেকের সময় এসে গেছে। এখান থেকেই পাগলামীর শুরু বলা যায়। এরপর থেকে তিনি প্রায়ই অফিসে দেরি করে যাওয়া শুরু করলেন। কিন্তু বাসা থেকে বের হয়ে বাকিটা সময় কী করেন, তার কোন সদুত্তর দিতে পারেন না। মাঝে মাঝে অফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চলে আসেন, তারপর গণগণে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকেন দীর্ঘক্ষণ। কী দেখছেন জিজ্ঞেস করলে সন্তোষজনক কিছু বলতে পারেন না। আর শেষ দিন যে ঝামেলাটা বাঁধালেন তা হলো, মোটামুটি বড় একটা অংকের টাকার হিসাবে গোলমাল বাঁধিয়ে ফেললেন। কিছুতেই সে হিসাবে মেলাতে পারলেন না। শেষে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। অবাক কাণ্ড। কর্তৃপক্ষ তাঁকে খুব বেশি বিশ্বাস করতো। বিশ্বাস হারালেন সাথে চাকরিটাও। এমডি সাহেব উনাকে পুলিশে দেবেন কিনা এই দ্বিধা থেকে বেরিয়ে আসার আগেই মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হলো।
আমার তো খালাকেও মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়, উনিও হয়তো এই ব্যাপারে খালুর সাথে হাত মিলিয়েছিলেন। এ গল্পটি উনি আমাকে আরো চমৎকারভাবে শুনিয়েছিলেন এবং বেশ কয়েকবার। আরেকটা কথা, জরিনা খারা অনবরত মিষ্টি মিষ্টি মিথ্যা বলে যান। এমনভাবে বলেন যেন মনে হয় তিনি সত্য ঘটনার বিবৃতি দিচ্ছেন। তবে আর যাই হোক, আই লাইক জরিনা খালা।

কলিংবেল চাপলাম।
ভেতরে একটা পাখির ডাক শোনা গেল। কলিংবেলের শব্দ। একটু অবাক হলাম। কলিংবেল বদলেছে। প্রায় মাস দু’য়েক আসিনি এ বাসাতে, এর মধ্যেই কলিংবেল বদলে ফেলা হয়েছে। ভেতরে না জানি আরও কী কী বদলেছে! দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় একটা কথা বলতে পারি, এ বাসায় কখনো যদি কিছু পরিবর্তন হয়, তবে একসাতে অনেক পরিবর্তন হবে। কলিংবেল বদলানো হয়েছে, দেখা গেল ভেতরের সোফাগুলোও বদলানো হয়েছে, নিদেনপক্ষে সোফার কাপড় বদলেছে!
দরজা খুললো সুন্দর একটা মেয়ে। সালোয়ার-কামিজ পড়া। গত দু’বছর এখানে আসছি রেগুলার কিন্তু এ মেয়েকে আগে কখনো দেখিনি। এটাও হয়তো পরিবর্তনের একটা ধাপ। তবে আমার কাছে দ্বিতীয় ধাপ, প্রথম ধাপ হল কলিংবেল।
দরজার পাশে একটু সরে গিয়ে মেয়েটি বললো, ভেতরে আসুন।
খুবই স্বাভাবিকভঙ্গিতে, এমনভাবে বললো যেন আমি তার অনেক দিনের পরিচিত। আমি তারচেয়েও স্বাভাবিক ভাবে ভেতরে এসে সোফায় বসলাম। নাহ, সোফার কিছু পরিবর্তন হয়নি। বললাম, খালাকে গিয়ে বলো হিমু এসেছে আর এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি নিয়ে এসো।
মেয়েটি হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে ভেতরে চলে গেল। কয়েক মিনিট পরে এসে পানি রেখে গেল। শুধু পানি না পানির সাথে কিছু টানিও আছে। পায়েস জাতীয় কিছু। মেয়েটি বললো, হিমু ভাই পায়েস খান। আপনার জন্য বানিয়েছি।
ওর কথা শুনে আমার মনে হয় চমকানো উচিত ছিল। অপরিচিত একটা মেয়ে বলছে সে আমার জন্য রান্না করেছে। ওর তো জানার কথা নয় আমি আজ আসছি। কিন্তু চমকালাম না। বললাম, থ্যাংক ইউ।
“ওয়েলকাম।”
“খালা কী করছেন?”
“উনি শুয়েছিরেন, আমি ডেকে দিয়েছি।”
“শুয়েছিলেন না ঘুমাচ্ছিলেন? ”
“ঘুমাচ্ছিলেন।”
“আচ্ছা তুমি যাও।”
“যাচ্ছি। যাবার আগে বলে যাবেন পায়েসটা কেমন হয়েছে। একটা মিষ্টি বেশি দিয়েছি। আমি আবার মিষ্টি বেশি পছন্দ করি। আপনিও তো পছন্দ করেন তাই না? ”
আমি ‘হ্যাঁ’ বলবো, নাকি ‘না’ বুঝতে পারছি না। কারণ কখনোই চিন্তুা করিনি মিষ্টি বেশি পছন্দ করি না কম! আমার উত্তর না পেয়ে মেয়েটা চলে গেল। একটু বোধহয় মন খারাপও করলো।

জরিনা খালা ঘরে ঢুকলেন। হাতে একটা গ্লাস। স্বচ্ছ পানি নয়, রঙ্গিন পানি। মানে শরবত জাতীয় কিছু, কোল্ড ড্রিংকস হতে পারে। তবে মনে হচ্ছে বেলের শরবত। বসতে বসতে বললেন, তোর খরব কী?
“ভাল। তুমি কেমন আছো? ”
“ভাল নেই রে।” রঙ্গিন পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললেন, “নে শরবত খা। বেলের শরবত, পেট ঠাণ্ডা রাখে।”
“ও আচ্ছা আচ্ছা।” এক চুমুকে খালি করে ফেললাম। এ বাড়িতে বেলের শরবত নতুন কিছু না। প্রায়ই আমাকে খেতে হয়। আর খাওয়ার সময় এর নানান গুণাগণ বলতে থাকেন খালা। আজ কিছুই বলছেন না। এটা হয়তো পরিবর্তনের আরেকটা ধাপ।
“ভাবলাম মেয়েটার হাতেই পাঠাই।”
“মেয়েটা কে? ”
“ওর নাম নীলু। কেমন দেখলি?” খালা আমার দিকে ঝুঁকে এলেন।
মনে হলো গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা বিষয়, তবে আমি স্বাভাবিক কণ্ঠে বললাম, কাজের মেয়ের আবার ভাল-মন্দ কী! আগের বুয়াকে ছেড়ে দিলে কবে?
খালা গম্ভীর গলায় বললেন, কাজের মেয়ে না। তোর খালুর বড় ভাইয়ের মেয়ে। গ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছে। কী যে সমস্যায় পড়েছিলাম, দেড় মাস থেকে বুয়া আসছে না। আর তুই বলছিস বুয়াকে কবে ছাড়লাম। আমরা কী ছাড়বো রে, বুয়াই আমাদের ছেড়ে চলে গেল। তোর তো কোন পাত্তাই পাওয়া গেল না। জাকির তো একাই অনেক ঘেঁটে বেড়াল বুয়ার টিকিটিও খুঁজে পেল না। ভাগ্যিস ঠিক সময় নীলু এসেছিল। আর যাই হোক, মেয়েটা কাজ জানে। কিন্তু ওকে কাজের মেয়ে বলাটা তোর ঠিক হয়নি বুঝলি।
“ও আচ্ছা আচ্ছা।”
“তোর ফাজলামো রাখ। এখন বল কী করবো? ”
“কী করবে মানে? আমার সাথে গল্প শেষ করে আবার ঘুমাতে যাবে।”
“তোর ফালতু গল্প বন্ধ কর। বুয়ার ব্যাপারে কী করবো? ”
“অন্য বুয়া খুঁজলেই তো পারো।”
“তা হবে না। এই বুয়াকে কাজ শিখিয়েছিল অনেক দিন ধরে। এখন আবার নতুন বুয়াকে কাজ শেখাতেই লাগবে দুই বছর।”
“তাহলে এক কাজ করো, পত্রিকায় একটা নিখোঁজ সংবাদ ছেপে দিতে পারো। তবে আর যাই হোক, তোমার বুয়া আর আসছে না।”
“আসবে কি আসবে না তুই জানলি কিভাবে? ”
“আমি জানি।”
“তুই জানলেই তোকে বলতে হবে? অন্তুত আমাকে সান্ত¡না দিয়ে তো বলতে পারতি- আসবে। তা নয় আমার সাথে রসিকতা করছিস।”
“খালা তুমি রেগে যাচ্ছো। শান্ত হও।”
“আমি রেগে যাচ্ছি ভাল হচ্ছে।”
“আমার খুব খিদে পেয়েছে। ভাত আছে না, ভাত খাব।”
“তোর জন্য কোনো ভাত নেই, তুই চলে যা।”
“আমি জানি ভাত আছে এবং নীলু ভাত রেডি করছে। একটু পরেই আমাকে খেতে ডাকবে। তুমি বললেও আমি যান না। আমি ভাল মত বসলাম, ফেবিকল আঠা মেরে বসলাম। আর উঠছি না।”
“ঠিক আছে বস। জাকির এলে ওর সঙ্গে বুয়া খুঁজতে বের হবি।”
“জাকির কোথায় গেছে? ”
“ভার্সিটিতে।”
“আজ তো ভার্সিটি বন্ধ। আজ কী করছে? ”
“কী আবার করবে, প্রেম করছে।”
“তুমি জানলে কিভাবে? ও তোমাকে বলেছে? ”
“বলেনি। তবে আমি জানি। একদিন মেয়েটাকে বাসায় এনেছিল। হারামজাদার সাহস কম না। প্রেম করছিস কর; বাসার বাইরে করছিস, তাই বলে মেয়েটাকে হুট করে বাসায় নিয়ে আসবি- এটা কেমন কথা। আমাকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দিল। তারপর মেয়েটা কী করলো জানিস? ”
“না জানি না।”
“ভালভাবে কথা বল। শোন, তারপর মেয়েটা আমাকে কদমবুচি করতে এলো। আমি তো আগেই বুঝতে পারলাম। মেয়েটারও সাহস কম না, বিয়ে আগে হবু শ্বাশুড়িকে কদমবুচি করবে!”
খালার রাগ ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। খালা এমনই। একটুতেই রেগে যায়, আবার একটুতেই সব ভুলে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। বললাম, মেয়েটা দেখতে কেমন?
“দেখতে তো ভালই, এখন মনে যে কী আছে তা তো জানি না।”
“নাম কী খালা? ”
“নাম শুনে কী করবি, আমার মনে নেই।”
“না, তোমার মনে আছে। বলে ফেলো।”
“শুনবি, আমার ঠিক মনে নেই। মিলা না শীলা কী যেন বললো! ”
“হেঁয়ালি রেখে ঠিকঠাক বলে ফেলো তো নামটা।”
“লীনা। সুন্দর নাম না? আমার কাছে ভালই লেগেছে।”
“ও আচ্ছা আচ্ছা।”
“তোর আচ্ছা আচ্ছা বাতিকটা কবে হলো, বাতিকটা কিন্তু ভাল লাগছে না।”
“ ও আচ্ছা আচ্ছা।”
“আবার! আমার সামনে আর বলবি না।”
আবারো ‘ও আচ্ছা আচ্ছা’ বলার খুব ইচ্ছা হলো কিন্তু বললাম না। খালাকে আবার রাগানো ঠিক হবে না। বললাম, খালা ভাত দিতে বল না, খিদেয় পেট চো চো করছে।”
বিকট শব্দে হেসে খালা বললেন, ‘চো চো’টা কোন ধরণের শব্দ? আচ্ছা ভাত দিতে বলছি।
খালা উঠে দাঁড়ালেন। ঠিক এসময় নীলু দরজার পর্দাটা একটু ফাঁকা করে বললো, হিমু ভাই, টেবিলে ভাত দিয়েছি খেতে আসুন।
খালার দিকে তাকাতেই বুঝলাম, উনি খুব অবাক হয়েছে ব্যাপারটাতে। খুব স্বাভাবিকভাবে ডাইনিং এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।

(চলবে)

ছবি: গুগল মামা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×