নিষাদের সঙ্গে পরিচয়টা হয় হঠাৎ করেই, তারপরই সম্পর্ক। সম্পর্কের সাড়ে তিন মাস বয়সে বিয়ে। তবে সম্পর্কটা প্রেমের নয় বন্ধুত্বের। এজন্যই সরাসরি প্রেম জাতীয় কিছু বলতে একটু দ্বিধা হচ্ছে। বিয়ের আজ চার মাস হতে চললো। নিষাদ মেয়েটা খুবই গম্ভীর, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলে না। তবে স্বামী হিসেবে ওর প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। বিয়ের পর ওর গ্রামের বাড়িতে আসা হয়েছিল একবার মাত্র। হঠাৎ করেই এবার উইকএন্ডে জেদ ধরলো গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাবে। যেহেতু জেদটা ওর স্বভাবের বাইরে, কাজেই ধরে নিলাম, নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য আছে। আমি হ্যাঁচ প্যাঁচ না করে রাজি হয়ে গেলাম। রাতে খাওয়ার পর হাঁটতে বের হলাম একা। উদ্দেশ্য হলো সিগারেট খাওয়া আর পুকুর পাড়ে বসে সন্ধ্যার হিম শীতল বাতাস খাওয়া। লোকালয় থেকে একটু দূরে একটা বড় পুকুর আছে। নিরবতা যাদের ভালো লাগে তাদের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। তবে মাঝে মাঝে পুকুরের বড় বড় মাছগুলো লাফালাফি করে, শব্দ পাওয়া যায়।
পাড়ে বসে সিগারেট জ্বালতে গিয়ে একটু অবাক হলাম; চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার, অথচ আজ তো অমাবশ্যা নয়। কিন্তু এত অন্ধকারের কারণ কী? কারণ খোঁজায় মন না দিয়ে আয়েশ করে সিগারেট জ্বাললাম। হঠাৎ মনে হলো, পিছনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। ঘাড় ফেরালাম। কালো কোর্ট-প্যান্ট পরিহিত এক ভদ্রলোক, আমার ঠিক পিছনে। পরিচিত মনে হলো, কিন্তু চিনতে পারছি না। হতেই পারে শ্বশুড়বাড়ী এলাকায় এসেছি, স্বল্প পরিচিত কেউ হতে পারে। উনি বললেন, রফিক না?
কণ্ঠটা শুনেই চিনতে পারলাম, উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মিরাজুল ইসলাম স্যার। আমাকে খুব স্নেহ করতেন। আসলে ভার্সিটি ছেড়েছি প্রায় সাত বছর, এই দীর্ঘ সময় স্যারের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। কিন্তু এই গ্রাম্য পরিবেশে স্যারের উপস্থিতি আমাকে বেশ অবাক করলো। সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম যে, উনি এই অন্ধকারের মধ্যে আমাকে চিনতে পেরেছেন। স্যারকে সালাম দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম সিগারেটটা লুকাতে।
উনি বললেন, অসুবিধা নাই, সিগারেট খাও। তারপর-কেমন আছো?
একটু লজ্জিত হয়ে বললাম, ভাল। স্যার এখানে কোথায় এসেছেন?
- এই আরকি, হঠাৎ মনে হলো গ্রাম দেখতে এলাম।
- কখন এসেছেন?
- আজ বিকেলেই। তুমি তো নতুন বউ সঙ্গে করে শ্বশুড়বাড়ি এসেছো, তাই না?
আমি আবারো লজ্জিত হলাম, একই সঙ্গে অবাকও হলাম যে, স্যার কিভাবে জানলেন ব্যাপারটা!
উনি বললেন, সেই যে পাশ করে বের হলে, আর তো এলে না। আমি ইদানিং তোমাদের অনেকের খোঁজ খবরই রাখছি, তুমি তো ভুলেই গেছো।
আমি যে খোঁজ খবর রাখি না- এটা সত্য। হয়তো স্যার আমার কথা মনে রেখেছেন আর বাকিটা অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়েছেন।
স্যার বললেন, ‘রফিক আসি। কাল আবার দেখা হবে।’ উনি আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে গেলেন। অনেকটা অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন।
বিষয়টা যে খুব একটা স্বাভাবিক নয়, তা বুঝতে পারলেও খুব দ্রুতই ভুলে গেলাম। কাকতালীয় কিছু ঘটনা জগতে ঘটে যায়, এটাও হয়তো তেমনি একটা। স্যার চলে যাবার পরে যে নিরবতা তৈরি হয়েছিল তা ভাঙ্গতেই বোধহয় বড়-সড় কয়েকটা মাছ স্বশব্দে নড়ে-চড়ে উঠলো। যাইহোক, এই সুযোগে আয়েশ করে দ্বিতীয় সিগারেটা জ্বাললাম।
ভোর রাতে ঘুম ভাঙ্গলো।
খানিকটা আলো ফুটেছে চারিদিকে।
রাতে ঘুম ভাঙ্গলে সাধারণত তৃষ্ণা লাগে। খাটের কাছাকাছি এক গ্লাস পানি সবসময়ই রাখার চেষ্টা করি। এখানেও খাটের কাছাকাছি, মাথার দিকে একটা চেয়ারের ওপর এক গ্লাস পানি ঢাকা দিয়ে রেখেছে নিষাদ। জানলা দিয়ে আসা ক্ষীণ আলোয় গ্লাসটা নিলাম। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, নিষাদ বিছানায় নেই। হয়তো টয়লেটে গিয়েছে। পানিটা খেয়ে খাটে পা ঝুলিয়ে বসলাম। নিষাদের জন্য অপেক্ষা করছি। ও এলে টয়লেটে যাবো একবার।
বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলো। নিষাদ এলো না। গিয়ে টয়লেটটা একবার চেক করে আসবো কিনা ভাবছি। কিছুটা আলসেমী গ্রাস করলো। আরেক দফা শুয়ে পড়লাম।
সকাল হয়ে গিয়েছে।
ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি নিষাদ পাশে আধশোয়া হয়ে আছে। নাম ধরে ডাকলাম কিন্তু সাড়া দিলো না। বললাম, ভোর রাতে ঘুম ভাঙ্গলো কিন্তু তোমাকে পেলাম না!
এবারো কিছু বললো না। মন খারাপ করেছে নাকি! বললাম, কোনো সমস্যা? শেয়ার করতে পারো অন্তত।
- হুম, শেয়ার তো করতেই পারি।
- তাহলে করো।
- বলছি। কাল বিকালে কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে গাছতলায় খেলছিলো, মনে আছে?
হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম, যদিও তেমন কিছু মনে পড়ছে না।
- ওদের মধ্যে টুকটুকি নামের একটা নয়/দশ বছরের মেয়ে ছিল। ঐ যে তোমাকে কী যেনো জিজ্ঞেস করেছিলো।
মনে পড়েছে। আমার হাতে একটা জিপো লাইটার ছিল। ওটা কিভাবে জ্বলে, কাজ কী জাতীয় কৌতুহলী প্রশ্ন। বললাম, হুম, টুকটুকি।
- মেয়েটা মারা গেছে।
- বলো কী? কিভাবে?
- রাতে মারা গেছে। অথচ আমাকে একবার ডাকলোও না। ভোর ঘুম থেকে উঠেছি বকুল ফুল কুড়ানোর জন্য। তখন ঘটনা শুনলাম।
বলে রাখা ভালো যে, নিষাদ একজন ডাক্তার। কাজেই প্রতিবেশী একটা বাচ্চা মেয়ে হঠাৎ করেই মারা গেলো আর তাকে ডাকা হলো না, বিষয়টা তার কাছে খারাপ লাগতেই পারে। বললাম, কিন্তু মারা গেলো কিভাবে?
- সাপে কেটেছে!
- সাপ!
- হ্যাঁ। গোখড়া সাপ। ওরা আর্থিকভাবে তেমন একটা স্বচ্ছল না। থাকার মতো একটাই ঘর অবশিষ্ট আছে। টুকটুকি আর ওর বড় বোন ঘরের বারান্দায় শুয়েছিলো। মেঝেতে পাটী বিছিয়ে।
- আর সাপটা এসে কামড়ে দিলো?
- অনেকটা তাই। আমি মেয়েটাকে খুব আদর করতাম। বাড়ি এলেই ডাক্তার আপু ডাক্তার আপু বলে দৌড়ে আসতো।
নিষাদ নিঃশব্দে কাঁদছে। আমি বিছানা ছাড়লাম। ওকে আর বেশি অস্বস্বিতে ফেলতে চাইলাম না।
বেলা দশটা-এগারোটা নাগাদ অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতা হলো।
টুকটুকিকে দেখতে ওদের বাড়িতে গেলাম। ছোট্ট একটা উঠান পেরিয়ে বারান্দাসহ দুইটা ঘর। বাচ্চা মেয়েটার মৃত দেহটা বারান্দায় একটা জলচৌকির ওপর রাখা। শরীরটা নীল হয়েছে কিনা ঠিক ধরতে পারলাম না। বাড়ির পারপাশে শ’খানেক মানুষ ভীড় করেছে। পুরো গ্রামই বোধহয় ভেঙ্গে এসেছে। বাইরে দিকে একটা জটলা দেখলাম। একদল মানুষ গোল হয়ে ঘিরে কিছু একটা দেখছে। আমিও উৎসুক জনতা। ভীড় ঠেলে গিয়ে যা দেখলাম, তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ট্যাঁটা নামক একটা গ্রাম্য অস্ত্র দেখলাম, যা অনেকটা বল্লমের মতো দেখতে কিন্তু মাথায় এক গোঁছা মোটা-শক্ত সূচ রয়েছে। ট্যাঁটাটা মাটিতে গেঁথে রয়েছে আর তার মাথায় একটা জ্যান্ত সাপ! চারপাশে বৃত্তাকার একটা দাগ দেয়া হয়েছে। সম্ভবত চুন জাতীয় কিছু একটা ব্যবহার করেছে। এটাই নাকি সেই সাপ যেটা টুকটুকিকে কামড়েছে! এই বিষাক্ত প্রাণীটাকে বাঁচিয়ে রাখার কারণ বুঝতে পারলাম না। একজনকে জিজ্ঞেস করতেই সে বললো, ওঝা আসতেছে। সাপ জ্যান্ত আছে, মানুষও জ্যান্ত হবে!
কী আজব কথা! বাচ্চাটা মারা গেছে মাঝরাতে। এখন তার দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করাটা জরুরী। সেখানে এই মানুষগুলো অপেক্ষা করছে ওঝার জন্য? ওঝা কি মৃত মানুষকে বাঁচাতে পারবে? বেঁচে থাকলেও সাপের বিষ নামানো সংক্রান্ত একটা ব্যাপার হয়তো ভাবা যেতো, যদিও এখন হাতের কাছেই ভ্যাকসিন পাওয়া যায়! বিষয়টা নিষাদকে জানানো দরকার। ওর তো আশেপাশেই থাকার কথা।
নিষাদকে আশেপাশে পেলাম না। বরং কিছু আজগুবি ঘটনার অবিশ্বাস্য গল্প শুনলাম। আরো অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সবাই বিশ্বাস করছে যে, এখানে একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটবে আর তারা সেটার সাক্ষী হবে। এখন যার ঝুলিতে যত গল্প আছে তারা সেগুলো ঢেলে দিচ্ছে। পাশের গ্রামের এক মহিলাকে নাকি কবরে পর্যন্ত নামানো হয়েছে সেখান থেকে বেঁচে ফিরে এসেছে কিংবা কোন ওঝা কতজনকে বাঁচিয়েছে জাতীয় সব আজগুবি গল্প!
ওঝা এলো আরো প্রায় ঘন্টা খানেক পরে।
ওঝা দেখতে কেমন হবে, এটা নিয়ে আমার মধ্যে একটা কৌতুহল কাজ করছিলো। ওঝা কি সাপুড়ের মতো পোশাক-পরিচ্ছদে থাকবে নাকি অন্যরকম? হাতে কি বীণ থাকবে, মাথায় রঙ্গিন পাগড়ি কিংবা ঝোলা? এক আসবে নাকি দল-বল নিয়ে আসবে? তারচেয়ে বড় বিষয় হলো, ওঝা আসলে করবেটা কী?
ওঝা এলো একদল মানুষ সঙ্গে নিয়ে, তাদের সাথে যোগ দিলো আরেকদল গ্রামবাসী। ফলে দলটা বড়সড় হয়ে গিয়েছে। আমি ভীড় ঠেলে গিয়ে ওঝা দেখার মতো সাহস করতে পারলাম না। তবে দূর থেকে যতখানি দেখা গেলো তাতে মনে হলো জনাব ওঝা বাদামী রঙের সাফারি পড়ে এসেছে, হাতে একটা ডাক্তারি ব্যাগ! আধুনিক ওঝা দেখছি!
দলবল নিয়ে ওঝা বাড়ির মধ্যে ঢুকবে এমন সময় বাইরে উৎসুক জনতার মধ্যে একটা উল্লাসের ঢেউ খেলে গেলো। বাড়িতে ঢোকার আগ মুহূর্তে ওঝা দাঁড়িয়ে দুই হাত ওপরে তুলে সবাইকে থামার ইশারা করলেন। এবং জনতা থেমে গেলো। তারপর সবাই অপেক্ষা করতে থাকলো কী হয় জানার জন্য। আমিও ধিরে ধিরে সামনে এগুতে থাকি। খানিকক্ষণ পর ওঝা দরজার বাইরে এসে এলেন এবং অনেকটা ঘোষণা দেবার মতো করেই বললেন, “আত্মা বেশি দূরে যায়নি, কাছাকাছি আছে। আপনারা দোয়া করেন।”
উৎসুক জনতার মধ্যে আবারো একটা উল্লাসের ঢেউ খেলে গেলো, যেনো সবাই এমন একটা ঘোষণার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। যদিও আমি এবারো তার চেহারা ঠিক মতো দেখতে পেলাম না। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজার কাছাকাছি পৌঁঁছাতে পারলাম এবং পরবর্তী কার্যক্রম নিজ চোখে দেখার সুযোগ পেলাম।
টুকটুকিকে তার দলের লোকেরা ঘিরে রয়েছে। এরই মাঝে ওঝা মানুষটি তার ডাক্তারি ব্যাগ খুলে একটা ইঞ্জেকশন রেডি করলেন। তারপর সেটি টুকটুকির শরীরে পুশ করলেন। এতে অবশ্য মৃত বাচ্চাটির শরীরে তেমন কোনো প্রভাব হয়েছে বলে মনে হলো না। যাইহোক, কিছু সময়ের মধ্যেই দেখলাম, তার লোকেরা কোত্থেকে যেনো চারটা কলা গাছ যোগাড় করে নিয়ে এলো। তারপর চার/পাঁচ ফুট দৈর্ঘ্যে সমপরিমাণ বাহুবিশিষ্ট একটা বর্গক্ষেত্রের মতো জায়গা পরিস্কার করে তার চারপাশে চারটা কলা গাছ পুঁতে ফেললো। তবে বর্গক্ষেত্রে না হয়ে আয়তক্ষেত্রও হতে পারে, দূর থেকে নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না। তাদের ব্যাগ থেকেই কয়েকটা সাদা কাপড় বের করলো। পুরোপুরি ধবধবে সাদা। অনেকটা বয়স্ক মহিলাদের শাড়ির মতো। তারপর সেগুলো দিয়ে কলাগাছের চারপাশ ঢেকে দিয়ে একটা ঘরের মতো বানালো যদিও উপরে কোনো ছাউনী দেয়া হয়নি। এরপর কী হবে অনেকটা অনুমান করতে পারছি। ওঝার লোকেরা ধরাধরি করে খুব সাবধানে টুকটুকির মৃত দেহটা ঐ ঘরের ভেতর নিয়ে রাখলো। সেসময় ওঝা বললেন, বাড়ির ভেতর কোনো পুরুষ মানুষ থাকতে পারবে না। মহিলারা থাকেন, বাকিরা চলে যান। মহিলারা চুলে বাঁধন খুলে দেন। যাদের পরচুলা, নকল দাঁত আছে তারাও চলে যাবেন। নাপাক থাকলেও চলে যাবেন।
ওঝা সাহেবের এই আদেশে সবাই নড়ে চড়ে উঠলো। আমি তো রীতিমতো লাফিয়ে উঠলাম। এতোক্ষণ খেয়াল না করলেও এখন যা দেখলাম তাতে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। মিরাজুল ইসলাম স্যারকে ওঝার বেশে দেখবো কখনো ভাবতে পারিনি! আমি এক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছি। মনের ভেতর ঝড় বয়ে চলছে! এই মানুষটা কি সত্যি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক? কিংবা হুবহু তাঁর মতোই দেখতে আরেকজন মানুষ? নাকি আমি ভুল দেখছি? গতরাতেও কি সত্যিই তাঁর সাথে আমার দেখা হয়েছিল নাকি সেটাও ভ্রম? যদি সত্যিই তাঁর সাথে দেখা হয়ে থাকে তাহলে তিনি কি জানতেন যে আজ এরকম কিছু একটা ঘটবে যার জন্য তাঁর সাথে আমার আজও দেখা হবে? কাল আবার দেখা হতে পারে জাতীয় কিছু একটা তিনি সম্ভবত বলেছিলেন।
আমি যে এতো কিছু ভাবছি তার মধ্যেই মিরাজুল ইসলাম স্যার ওরফে ওঝার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছি কিন্তু তিনি কিছুতেই এদিকে তাকাচ্ছেন না। তাঁর একমাত্র দৃষ্টি ও মনোযোগ ঐ ঘরটার দিকে। তাঁর লোকেরা পুরুষদের বের করে দেয়া শুরু করেছে। শুধু বের করে দিয়েই ক্ষান্ত না। বাড়ির দরজার থেকে খানিকটা দূরে সরিয়ে দিচ্ছে সবাইকে। আমি সরে এসেছি। ভেতরে সম্ভবত কয়েকজন মহিলা রয়ে গেছেন।
ভেতরে কী হচ্ছে তা আমরা কেউ বুঝতে পারছি না। ভেতর থেকে কোনো শব্দ আসছে না। বাইরেও লোকজন তেমন একটা কথাবার্তা বলছে না। আমি জানি এখানে অলৌকিক কিছু হবে না। প্রকৃতির তার নিয়মের বাইরে কিছু ঘটবে দেয় না। কাজেই এখানে যারা উৎসুক জনতা অলৌকিক কিছু একটা ঘটার জন্য অপেক্ষা করছে তারা যে কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরাশ হবে তা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তাদের অপেক্ষাটাই নিরর্থক হয়ে যাবে।
অপেক্ষার পালা কতক্ষণে শেষ হলো জানি না। তবে যখন শেষ হলো তখন জনতার মধ্যে আবার উল্লাস ছড়িয়ে গেছে। মেয়েটা বেঁচে গিয়েছে বলেই জানলাম। প্রকৃতির নিয়মের বাইরের একটা ঘটনা ঘটলো যা সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না। ওঝা সাহেব দলবল নিয়ে বিজয়ীর বেশে বের হয়ে যাচ্ছেন। পেছন পেছন উৎসুক মানুষের দল তো রয়েইছে। কাছেই কোথাও হয়তো তাদের জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছে। আমি কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করলাম না। সাইন্সের ছাত্র হিসেবে এরকম একটা অলৌকিক একটা বিষয় মেনে নেয়াটা আমার জন্য অসম্ভব ও অস্বস্তিকর।
মিরাজুল ইসলাম স্যারের সম্পর্কে খোঁজ নেবার জন্য বন্ধু বান্ধব, পরিচিতজনদের সাথে যোগাযোগ করলাম কিন্তু কেউ তাঁর সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারলো না।
পরদিন ঢাকা ফিরলাম।
ঢাকা ফিরেই প্রথম যে কাজটা করার চেষ্টা করলাম, তা হলো ভার্সিটিতে গিয়ে তাঁকে খুঁজে বের করা। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে গিয়ে জানতে পারলাম, তিনি বছর তিনেক আগে শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন। এরপরে তিনি কোথায় গিয়েছেন তা কেউ জানে না।
ছবি: গুগল মামা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০১