somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: প্রপঞ্চিত জীবন (পর্ব-২/৪)

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক
দুই.

খুব বিরক্তি নিয়ে কয়েকঘণ্টা মটকা মেরে শুয়ে থাকে সিতিমা। এরচেয়ে খারাপ সকাল হয় না। কথা ছিল ভোর ছয়টায় শুভ চলে আসবে হলের সামনে, তারপর দুজনে ঘুরে বেড়াবে ক্যাম্পাসময়। এসময় ক্যাম্পাসে জনমানব খুব কম থাকে। একদল মানুষ বের হয় প্রাতর্ভ্রমণে, আরেকদল মানুষ, সংখ্যায় কম হলেও, কাজের খোঁজে বের হয়, আর এর বাইরেও কিছু মানুষ আছে যারা সকালটা উপভোগ করতে চায়।

ভোরের একটা নিজস্বতা আছে যা সিতিমার খুব পছন্দ। অথচ শুভ বিষয়টাকে কখনো সিরিয়াসলি নিল না। মাঝে মাঝেই ওরা সকালে বের হবার প্রস্তুতি নেয় কিন্তু কখনো বেরোনো হয়, কখনো হয় না। আজও হলো না। ছয়টা বাজার পাঁচ মিনিট আগে বেজে ওঠা শেষ এলার্মে পুরোপুরি ঘুম ভাঙে ওর। ততক্ষণে শুভর বেরিয়ে পড়ার কথা, অবশ্য কল দেবার কথাও ছিল! ফোন চেক করে, কিন্তু কল লিস্টে মিসড কল বা ইনকামিং কল দেখতে পায় না। শুভ হয়তো ঘুম থেকে উঠতে পারেনি। শুভর নম্বর ডায়াল করে কিন্তু কল পৌঁছায় না। ওপাশে ফোন বন্ধ। হতে পারে ফোনে চার্জ নেই কিংবা রাতে খুব দেরিতে ঘুমানোর কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে ফোন বন্ধ করে রাখে। কিছুদিন আগেও রাতে ঠিকমতো ঘুম হতো না শুভর, নিয়মিত ওষুধ খেতে হতো। ইদানীং সমস্যাটা খানিকটা কমেছে। তাছাড়া এমনটা হলে অবশ্যই একটা টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে রাখতো সে। খানিকটা দুঃশ্চিন্তা হয়, তারপর দীর্ঘ অপেক্ষা এবং অবশেষে ব্যাপারটা বিরক্তির পর্যায়ে চলে যায়। কেমন যেন গা ছাড়া একটা ভাব চলে এসেছে শুভর মধ্যে, অথচ মানুষটা আগে এমন ছিল না। দায়িত্ববান এরকম একজন বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার মনে হতো। ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাশ শুরুর সপ্তাহখানেক পরে ওদের পরিচয়। শুভর মধ্যে খানিকটা জড়তা কাজ করত। মেয়েদের সাথে মিশত না। তাই হয়তো পরিচয়টা একটু দেরিতে হয়েছিল। সিতিমার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে ধীরে ধীরে সে সহজ হয়ে ওঠে আর সিতিমা ওর মধ্যে এমন কিছু একটা খুঁজে পায় যা অন্যদের থেকে ওকে আলাদা করতে বাধ্য করে।

সাড়ে নয়টার ক্লাশটা ধরতে পারে না। বিরক্তিকর সকালটায় সে নাস্তাও করা হয় না। দীর্ঘক্ষণ বিছানায় মটকা মেরে পড়ে থাকতে গিয়ে কখন যে চোখ লেগে গিয়েছিল বুঝতে পারেনি। ঘড়ি দেখে, ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। কোনোমতে নাকে মুখে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে পড়লেও হলের সামনে রিক্শা পায় না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে, সে সময়টাও নেই। হঠাৎ মনে হলো, একটা ক্লাশ মিস হলে এমন কিছু এসে যাবে না!

হলের কমনরুমে ফিরে যায়। ক্যান্টিন থেকে এক কাপ গরম চা তুলে নেয়। একটা খবরের কাগজ নিয়ে রিডিং টেবিলে বসে। সাম্প্রতিক বিষয়াবলি নিয়ে প্রশ্ন থাকে চাকরির পরীক্ষাগুলোতে, তাই মেয়েরা নিয়মিত খবরের কাগজ, আজকের বিশ্ব কিংবা কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স পড়ে। সিতিমার মধ্যে তেমন সিরিয়াসনেস দেখা যায় না। সে মূল কাগজ রেখে ভেতরের সাময়িকীতে চোখ বোলায়। আর ধোঁয়া ওঠা কাপে চুমুক দেয় সাবধানে।

খবরের কাগজ রেখে সে টিভিসেটের দিকে যায়। সামনের সারিতে একজন মাত্র ছাত্রী বসে টিভি দেখছে। সে ইচ্ছা করেই পেছনের দিকের একটা বেঞ্চে বসল। দক্ষিণ ভারতীয় একটা সিনেমা চলছে। এসব সিনেমায় অতিরঞ্জিত কিছু মারামারির দৃশ্য থাকে কিংবা অপ্রয়োজনীয় কৌতুককর কিছু ঘটনা ঘটতে থাকে। তাছাড়া সবাই অদ্ভুত দ্রæততার সাথে সংলাপ উচ্চারণ করতে থাকে যেন অল্প সময়ে অনেক কথা বলতেই হবে! এ জাতীয় সিনেমা দেখে খুব একটা মজা পায় না সিতিমা তবুও সে একভাবে বসে সিনেমা শেষ পর্যন্ত দেখে।

সাড়ে দশটার ক্লাশটাও সে মিস করে। টিভি রুমে বসেই থাকে। পরবর্তী সিনেমাটা শুরু হয়। এর মধ্যে কখন যেন সামনের সারিতে বসা মেয়েটা চলে যায় কিন্তু সে খেয়াল করে না। যাবার সময় সম্ভবত টিভির রিমোটটা ওর পাশে রেখে যায়। কারণ বেঞ্চে রাখা মোবাইল ফোনটা হাতে নিতে গিয়ে সে রিমোটের অস্তিÍত্ব বুঝতে পারে। যদিও এতে ওর মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। সে ফোনটা হাতে নিয়ে কিছু একটা দেখে তারপর আবার রেখে দেয়।

ঘড়িতে বারোটা পেরিয়ে যাবার পর কোনো একটা সময় সে ক্লান্ত বোধ করে। শুভ কি এখনো একটা কল দেবার প্রয়োজন মনে করে না? নাকি উল্টো ওরই একবার খোঁজ নেওয়া উচিত? সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ক্লান্ত বোধ করে। আরো কিছুক্ষণ পরে উঠে দাঁড়ায়, তারপর নিজের রুমের দিকে রওয়ানা দেয়।

ফোনটা বন্ধ রেখে দুপুরটা ঘুমিয়ে কাটালো।
রোদের তেজ কমতে শুরু করেছে এমন একটা সময় হলের খালা এসে জানায় গেস্টরুমে গেস্ট অপেক্ষমাণ। সিতিমা জানে শুভ এসেছে। তাই হয়তো ইচ্ছা করে একটু দেরি করল, একটু সময় নিয়ে বিছানাটা ছাড়লো, একটু সময় নিয়ে কাপড়টা পাল্টালো। ওকে বসিয়ে রাখলে আহামরি কোনো অসুবিধা নাই। যদিও শুভর মুখোমুখি হতে একেবারেই ভালো লাগছে না, যেহেতু গেস্টরুম পর্যন্ত এসেই পড়েছে তাই বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে। গিয়ে হয়তো দেখবে একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে শুভ অপেক্ষা করছে, তারপর সে এমন কিছু একটা বলবে যাতে নিমিষেই সিতিমার সব রাগ পানি হয়ে যাবে। এই একটা কাজে সে খুব পারদর্শী। ইদানীং সে আবার কবিতা লেখা শুরু করেছে। বড়ো বড়ো কয়েক পাতা জুড়ে চলে একেকটা কবিতা। সিতিমা বুঝতে পারে না, এতো সময় শুভ পায় কখন? কিংবা এতদিন কেন সে কোনো কবিতাই লেখেনি? এমন একটা প্রতিভা কি লুকিয়ে রাখা সম্ভব!

গুটি গুটি পায়ে পৌঁছে যায় গেস্টরুমের দরজায়। সত্যি সত্যি একগুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে শুভ অপেক্ষা করছে ওর জন্য।

(চলবে)
ফটো: গুগল/শাটারস্টক।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:০১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×