ভাষা আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য গঠিত হ্য় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ যার প্রথম আহবায়ক ছিলেন তমদ্দুন মজলিস নেতা অধ্যপক নূরুল হক ভুইয়া। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে তৎকালিন রাজনীতিবিদদের আচরন সম্পর্কে প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম বলেন, "এই পর্যন্ত তমদ্দুন মজলিসের পক্ষে আমরা এককভাবে আন্দোলনটিকে আগাইয়া নিয়ে যাইতেছিলাম। এই আন্দোলনকে সাহায্য করিবার জন্য আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে যাই। মুসলিম লীগ ইহাকে মোটেই আমল দেয় নাই, কংগ্রেস কর্মীরা ইহার নাম শুনেই আতকে উঠেন। ঢাকা জজ কোর্টের পিছনে কমূনিষ্ট পার্টির যে বিরাট অফিস ছিল, তাহাতে একদিন কমূনিষ্ট পার্টির এক মিটিং ছিল। কমরেড মুজাফফর আহমদ উক্ত বৈঠকে নেতৃত্ব করিতেছিলেন, সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ হইতে আমি কয়েকজন কর্মীসহ তাহাদের নিকট উপস্থিত হইলে তিনি পার্টির পক্ষ হইতে আমাকে জানাইয়া দেন: এই আন্দোলন কে সমর্থন করা তাহাদের পক্ষে সম্ভব হইবে না। শুধু তাই নয় , তিনি মেমোরেন্ডামে দস্তখত করিতেও অস্বীকার করেন। বামপন্থী ছাত্র ফেডারেশনও ইহাতে যোগদান করিতে অস্বীকার করে।"
যাই হোক পরিষদ এই আন্দোলন এগিয়ে নিতে থাকে নিজেদের সামান্য শক্তি নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও মিটিং চলতেই থাকে, নাজিমুদ্দিন সাহেবের সাথে একের পর এক বৈঠক চলতেই থাকে। অবশেষে নাজিমুদ্দিন সাহেব সব দাবী মেনে নিয়ে একটি দলিলে সরকারের পক্ষে সহি দেন এবং সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে ঐতিহাসিক দলিলে সহি করেন অধ্যাপক কাসেম সাহেব।
অতঃপর কায়েদে আজম ঢাকায় আগমন করেন। রেসকোর্স ময়দানে কয়েক লাখ লোকের সামনে বক্তৃতায় তিনি পূর্ব বাঙলার সরকারী ভাষা এখানের জনসাধারনই ঠিক করবে বলে মন্তব্য করেন চুক্তি অনুসারেই, কিন্তু কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা যে ঊর্দূ হবে তা জোরের সাথেই বলে যান।এই সময় সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ সরকারী নেতাদের তাদের দাবীর যৌক্তিকতা বুঝাতে চেষ্টা করেন এবং ব্যর্থ হন। এই সময় রাজনীতিবিদরা ধীরে ধীরে এই আন্দোলনের মধ্যে নিজেদের স্বার্থ খুজে পেতে থাকেন এবং নিজেরা এতে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন। এ কথা সর্ব্বজনবিদিত যে , ভাষা আন্দোলনের সংগঠনে রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির চেয়ে সাংস্কৃতিক কর্মীর ভূমিকা অনেক বেশি। যদিও আমরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়া অন্যদের কথা বা কর্ম বর্তমান ইতিহাসবিদদের লেখনীতে খুজে পাই না।