ভাষার দাবীটি ছিল জাতীয় দাবী। ফলে ভাষা আন্দোলন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জাতীয় আন্দোলনের রুপ পরিগ্রহ করে। কোন একক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে এ আন্দোলনকে সীমিত না রেখে একে সর্বদলীয় রুপ দেয়ার ব্যাপারে তমদ্দুন মজলিস এর কোন আপত্তি ছিল না। ফলে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। বলতে গেলে তখন থেকেই ভাষা আন্দোলনে রাজনীতিবিদদের সরাসরি ও বলিষ্ঠ আগমন ঘটে। ১৯৫০ সালে বামপন্থী ছাত্রনেতা আব্দুল মতিনকে আহবায়ক করে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি গঠিত হ্য়। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের ফলে আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে ঠিকই কিন্তু স্বার্থান্ধ মহলের জন্য তা নতুন দ্বারও উম্মূক্ত করে। কাজী গোলাম মাহবুবকে আহবায়ক করে ৪০ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৫১ সালে রাষ্ট্রভাষা দিবস উপলক্ষে ২১ শে ফেব্রুয়ারী সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী সর্বাত্মক হরতাল ওপ্রতিবাদের প্রস্তুতির প্রেক্ষিতে সরকার ২০ শে ফেব্রুয়ারী রাত্রি থেকে ঢাকা জেলার সর্বত্র ১৪৪ ধারা জারী করেন। সর্বদলীয় কর্ম পরিষদ আন্দোলনের পিঠে ছুড়িকাঘাত করে ১৪৪ ধারা ভংগ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ২১ শে ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক সমাবেশে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ এর পক্ষ থেকে জনাব শামছুল হক ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার আবেদন জানালে সাধারন ছাত্রদের প্রতিবাদের মূখে তিনি তার সহকর্মীসহ বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন।
বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটির আহবায়ক আব্দুল মতিন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের দায়িত্ব ছাত্রদের উপর ছেড়ে দিয়ে পরবর্তী পরিস্থিতির দায়িত্ব থেকে ণিজেকে মুক্ত করে নেন। শেষ পর্যন্ত ছাত্রসমাজ অনমনিয় সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে এবং সৃষ্টি হয় নতুন এক রক্তাক্ত ইতিহাস----।
ভাষা আন্দোলনের সংগঠক গাজিউল হক ঢাকা ডাইজেস্ট , জুন/৭৮ সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন,''ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা চলছে এবং তা দুদিক থেকে। এক দিকে কিছু নতুন দাবীদারকে প্রতিষ্টাকরার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে ও অন্যদিকে কারো কারো নিজস্ব রাজনৈতিক চিন্তাধারার কাঠামোতে ফেলার জন্য এ মহান আন্দোলনের ইতিহাস কে ভিন্নরুপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন অনেকে।
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভংগের যে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সাধারণ ছাত্র-জনতা কর্তৃক , সে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন মুহাম্মদ সুলতান। ঢাকা ডাইজেষ্ট , জুন/৭৯ এর এক সাক্ষাৎকারে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে টিভি সাক্ষাৎকারে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আলাপ করছিলেন শেখ মুজিব ও কে জি মোস্তফা। এক পর্যায়ে শেখ মুজিব তাকে জিঞ্গেস করেন- তোমার মনে নেই মোস্তফা ৫২ এর ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে আমি ১৪৪ ধারা ভাংগার নির্দেশ দিয়েছিলাম। -এমনি অনেক ধরনের কথা। মোস্তফা কখনো মাথা নেড়ে , কথা বলে শেখ মুজিব এর কথার সমর্থন দিচ্ছিলেন, অথচ শেখ মুজিব তখন জেলে।" কিন্তু ৬৩ সালে প্রকাশিত কে জি মোস্তফার 'একুশে ফেব্রুয়ারী' বইতে লিখেছেন "শেখ মুজিব তখন জেলে, ১৯৪৯ সালের মার্চ থেকেই তিনি জেল খাটছিলেন"
চলবে---
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:১২