somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছা্য়া জীবন

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে গেছে শ্যাওলা পড়া পাথর গুলো, শ্মশান ঘাটে নামতে হয় তাই খুব সাবধানে । অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে পুরোনো কাঠের বেঞিটার কাছে পৌছে দেখি মোবারক আগেই এসে বসে আছে । আমাকে দেখে একটা বিড়ি বের করলো , কিছুহ্মন টিপে টুপে সেটা ঠোটে নিলো । আমি চুপচাপ ঘাসের ডাটা একটা মুখে নিয়ে চিবুতে লাগলাম । শুন্য শ্মশান ঘাটে শিস দিতে দিতে বাতাস ব​য়ে যায় ।

- কবে আইছোস? মোবারক নিরবতা ভাঙে ।
- এইতো ,.. ,ঈদের দুইদিন আগে ।
-একা?
- হুম । আরকে আসবে?
-ও ।

নুড়ি পাথড় কয়েকটা নদীর পানিতে ছুড়ে মারে মোবারক ।ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলে ক​য়েকটা নুড়ি ব্যাঙ লাফ দেয় পানির ওপর । তারপর টুপ করে ডুবে যায় । চারদিক নিরব হ​য়ে যায় আবার । দুরে কোনো এক চাষির বাড়িতে ঘুমন্ত কোনো শিশু কেঁদে ওঠে একবার । বিলাসী ভঙিতে এক পেচা ঝটপট করতে করতে উড়াল দেয় ।
তারপর মোবারক কথা বলে ওঠে আবার ।
- আবিরের খবর জানিস ?
- শাহজালাল ভার্সিটির আবির ?।
- হুম , ব্যাটা ভাড়াটে ক্যাডার হইছে ।
আমি ঘাসের ডাটা কাটি, খারাপ কি?
- পরেশকে মনে আছে, পরেশ? সুইডেন গেলো যে?
- হুম ।
মোবারক পরেশকে নিয়ে নানা কুচ্ছিত কথা বলতে থাকে । তারপর আরেক জন । মোবারকের মুখ আর থামে না। সবার ব্যাপারে নানা খারাপ খবর দিতে থাকে। সবার কুঃসংবাদ গুলো জানে সে । ব্যাটা আমার ব্যাপারে অন্যদের কি বলে জানতে ইচ্ছা করে ।

- মোবারক তোর মাছের ব্যবসার কি খবর?
- ভালোই ।
স্কুলে নাইন আর টেনে সেকেন্ড বয় ছিলো মোবারক । ফার্স্টবয় আর সেকেন্ড বয়ের মধ্যে একটা রেশারেশি থাকে, আমাদের দুজনের মাঝেও তা ছিলো । কিন্তু তারপরও কেমন করে বন্ধু হয়ে গেলাম আমরা, ওর বাবা মাঝি আর আমার বাবা টিচার হওয়া সত্বেও ।
ক্লাস টেনের টেস্ট পরীহ্মার পরে ওর পড়াশোনা আর হয়নি । মাছের ব্যবসা করে আজ বছর খানেক ।

- আড়ত নিছি আরও দুইটা । আর বিয়া করবো আরেকটা।
আমি থতমত খেয়ে বলি, কি করবি আরেকটা ?
- বিয়া করবো। টাঙ্গাইল জেলায় গিয়ে থাকতে হয় প্রায় প্রায়ই । বিয়া করলে ব্যবসা চালাইতে সুবিধা ।
আমি ঘাস ফেলে দিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকি। মোবারক আমার বাল্যবন্ধু । ইতঃমধ্যে দুইটি বিয়ে করে তিন নম্বরটার সে প্ল্যান করছে, আমার পড়াশোনাই শেষ হয় নাই । মাথা নিচু না করে উপায় কি ?

মোবারক দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ‘সুরুজ মোল্লাটা মইরা যাবে সামনের মাসের দশ তারিখে ।‘
আমি চমকে উঠে বলি, ‘কি বলিস , শক্ত সমর্থ জোয়ান লোকটা ! অসুস্থ তো ওর বাপ না ?
মোবারক পিচিক করে থুতু ফেলে, ‘বুড়া বাচঁবো আরো সাত বছর । সুরুজ মোল্লারে সাপে কাটবে দশ তারিখে ।‘
সুরুজ মোল্লারা থাকে পশ্চিম পাড়া। নামে মোল্লা হলে কি হবে, ধর্ম কর্মে ব্যাটাদের মতি নেই । চাষাদের নাকি ধার্মিক হওয়ার কথা, ফসলের বাড়নের জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহ সরাসরিই প্র​য়োজন । ছ​য়ভাই পালা করে জুম্মাবারে মসজিদে আসে, একবার আসলে বাকি পাচ সপ্তাহ তাকে আর নাকি কেবলামুখী হতে দেখা যায় না ।তবে মানুষগুলি ভারি ভালো । সবার ভালো ছাড়া খারাপ কেউ চায় না।

আমি মন খারাপ করে বসে থাকি । একবার ভাবি বলবো, কিছু করা যায় না? জোয়ান হাসি খুশি লোকটা । তারপর মনে পরে অনেক আগে মোবারকেরই বলা কথাটা , কোনো কিছু পরিবর্তন করা যায় না। সেই হ্মমতা শুধু একজনের কাছে ।

আকাশে গুরগুর শব্দ করতে থাকে মেঘ, বৃষ্টি বোধহয় আসবে আরও জোরেশোরে ।ঘাটের উল্টোদিকের ঢিবিতে সরসর করে কি একটা শব্দ শোনা গেলো । কোনো নিশাচর হ​য়তো রাতের খাবার নিয়ে ফিরে এলো গর্তে ।

- যাই ।
- যাবি? যা তাইলে । আমারেও মাছের চালান আনতে যাইতে হইবো বামুনজির বিলে ।
মোবারক একটু থামে । তারপর গলা নামিয়ে বলে, ‘বামুনজির বিলের কথা মনে আছে তোর ?
- আছে ।
- এই বিলেই ওরা আমারে খুন করছিলো, মনে আছে?

আমার সব মনে আছে । টেস্ট পরীহ্মার দুই দিন পরেই বাপের বদলে রাতে মাঝিগিরি করছিলো মোবারক । ভোর বেলা ওর লাশ পাওয়া যায় ঘাটের কাছে ।
এইটুকু জমি ছিলো ওদের । ওটা নিয়েই কাজিয়ার জের ধরে ওর চাচাই খুন করেছিলো ওকে । মোবারকই বলেছিলো আমাকে, খুনের তিন দিন পরে ।

শুধু যে আমি মোবারকের ভুতকে দেখি তা না, আরও অনেকেই দেখে।কিন্তু দেখে ভয়ঙ্কর ভয় পায় । তাই মোবারক সবাইকে এড়িয়ে চলে। বেচারা মাছের ব্যবসা করে, ভুতদের মাছ সাপ্লাই দিয়ে বৈধ্য ভাবে আয় করে। আর আমার কাছে মাঝে মাঝে কারও কারও মৃত্যুর ভবিষ্যতবানী করে যায় ।

পিচ্ছিল শ্মশান ঘাট বেয়ে উঠতে উঠতে আমি পেছন ফিরে তাকিয়ে মোবারককে ঝাপসা হতে দেখি । সুরুজ মোল্লার কথা ভেবে মনটা আবার খারাপ হয় ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:৫১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×